প্রাকৃতিক আলো-বাতাস শুধু আমাদের শরীর নয়, মননের বিকাশেও গভীর প্রভাব ফেলে। সূর্যের আলো, বিশেষ করে সকালের আলো, আমাদের দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের ঘুমচক্র ও সামগ্রিক মননের বিকাশকে প্রভাবিত করে। গবেষণা দেখায়, প্রাকৃতিক আলো শিশুদের চোখের স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। ভিটামিন ডি সংশ্লেষণে সূর্যের আলোর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। হাড়ের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য জরুরি প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের গুরুত্ব অনেক। মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্মুক্ততা প্রশান্তি এনে দেয়। আলো-বাতাসের মধ্যে অবস্থান মানসিক চাপ কমায় এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে।

মুক্ত বাতাস নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আমাদের মতো দেশে বছরজুড়ে সহনশীল উষ্ণতা বিরাজ করে। এখানে প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ শরীরের ঘাম শুকিয়ে শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখতে সাহায্য করে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে ঘরের তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়, কিন্তু আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহই সর্বোত্তম সমাধান। বর্তমানে এসি-নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে। এতে যেমন কার্বন ফুটপ্রিন্ট বৃদ্ধি হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে আমাদের শরীরকে প্রাকৃতিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এসির কৃত্রিম ঠান্ডা বাতাস আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। শুষ্ক পরিবেশ সৃষ্টি করে যা ত্বক ও শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ঢাকা শহরের চ্যালেঞ্জ

ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার জনবসতি অত্যন্ত নিবিড়। সিঙ্গাপুরের মতো শহরগুলোতে জমির স্বল্পতার কারণে উল্লম্ব উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চ ঘনত্ব মোকাবিলা করা হয়। তবে ঢাকার শহুরে বিকাশ কিছুটা ভিন্ন। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক কাঠামোতে ঘিঞ্জি গলি ও কাছাকাছি ভবন দেখা যায়। ব্রিটিশ আমলের বাগান আর সবুজনির্ভর দালান নির্মাণ করতে দেখা যায়। ধানমন্ডির মতো অনেক এলাকায় আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়ি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণে অনেক সময় প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে শিশুরা পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, কৃত্রিম আলো বা পর্দার নীল আলো শিশুদের ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে বাধা দেয়। প্রাকৃতিক আলোর অভাবে শিশুরা ঘরের মধ্যে বন্দী থেকে স্ক্রিন–আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের সামাজিক ও জ্ঞানীয় বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। শহুরে পরিবেশে উন্মুক্ত খেলার জায়গার অভাবেও শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভবনের পরিকাঠামো ও উচ্চতা এমনভাবে বিন্যস্ত হয় যে অনেক সময় পার্শ্ববর্তী ভবনের কারণে সূর্যের আলো ও বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আমাদের শহরে অপরিকল্পিত নির্মাণ প্রায়ই এ সমস্যার কারণ। ভবন থেকে ভবনের পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখতে না পারার কারণে বায়ু চলাচল ব্যাহত হয়, যা ঘরের ভেতরের পরিবেশকে উষ্ণ ও গুমোট করে তোলে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সুচিন্তিত নগর–পরিকল্পনা এবং ভবন নির্মাণ বিধিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা অপরিহার্য।

নাহাস আহমেদ খলিল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ক ত ক আল র জন য আম দ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ