মেঘনায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে জেলের মৃত্যু, নিখোঁজ ১
Published: 28th, July 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় মাছ ধরার একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় সাকিব উদ্দিন (১৭) নামে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরাফাত নামে অপর এক জেলে।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাত ৩টার দিকে উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
মারা যাওয়া সাকিব উদ্দিন উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের শুল্লুকিয়া গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। নিখোঁজ আরাফাত সুখচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ের্ডের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
আরো পড়ুন:
শরীয়তপুরে ‘ডেঙ্গু’ আক্রান্ত কলেজ প্রভাষকের মৃত্যু
গোপালগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীরে নোঙর করা ছিল আফছার মাঝির মাছ ধরার ট্রলার। ট্রলারে আফছার মাঝিসহ চারজন ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৩টার দিকে দক্ষিণ দিক থেকে আসা একটি বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় ট্রলারটি উল্টে যায়। চিৎকার শুনে পাশের জেলেরা এসে আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করে তীরে তোলেন। এক ঘণ্টা পর সোমবার (২৮ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় সাকিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নলচিরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিষ চন্দ্র সাহা বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। গভীর রাতে নোঙর করা ট্রলারে বাল্কহেড ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।”
ঢাকা/সুজন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।