ওড়ার ঠিক আগে কেঁপে উঠল উড়োজাহাজ, আরোহীরা নামলেন জরুরি স্লাইডে
Published: 28th, July 2025 GMT
রানওয়েতে দাঁড়িয়ে ছিল উড়োজাহাজটি। যাত্রীরা সবাই উঠে বসেছেন। ক্রুরাও প্রস্তুত। আর একটু পর উড়াল দেবে। তখনই ঘটে বিপত্তি। উড়ানের ঠিক আগমুহূর্তে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। শেষ পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। আরোহীদের জরুরি স্লাইড ব্যবহার করে উড়োজাহাজ থেকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের চাকায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। আকাশসেবা সংস্থাটি বলেছে, উড়োজাহাজটির গন্তব্য ছিল মায়ামি। বোয়িং–৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের উড়োজাহাজটিতে ১৭৩ যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন।
উড়োজাহাজের যাত্রীরা জানান, উড়ানের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। তা দেখে উড়োজাহাজে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে সম্ভাব্য সমস্যার কারণে যাত্রীদের জরুরি স্লাইড বেয়ে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে।
ডেনভার থেকে উড়ান দেওয়ার আগে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীরা তাঁদের মালপত্র ও শিশুদের নিয়ে উড়োজাহাজের সামনের অংশের জরুরি স্লাইড বেয়ে নিচে নেমে আসছেন। পরে তাঁদের বাসে করে টার্মিনালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার সময় উড়োজাহাজটিতে ছিলেন ১৭ বছরের শাই আর্মিস্ট্রেড। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকট শব্দের পরপর উড়োজাহাজটি হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে। রানওয়ের বাঁ দিকে সরে যেতে থাকে। আমি তখন শক্ত করে আমার বন্ধুর হাত ধরে ছিলাম। এর পর হঠাৎ উড়োজাহাজটি থেমে যায়। সবাই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। আমরা দ্রুত স্লাইড বেয়ে নেমে আসি।’
আমেরিকান এয়ারলাইনস জানায়, এ ঘটনায় সামান্য আঘাত পাওয়া এক যাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আরও পাঁচজনকে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি।
ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে দেখছে এফএএ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, উড়োজাহাজটির উড়ান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)