শেষ টি-টোয়েন্টিতেও অস্ট্রেলিয়ার হাসি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে ৩ উইকেটে। তাতে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৫-০ ব্যবধানে।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭০ রান করে। জবাব দিতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭ ওভারেই জয় তুলে নেয় অসিরা। টেস্ট সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জেতার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করেছে তারা। সফরে কোনো ম্যাচ না হেরে সর্বাধিক জয়ের তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার এবারের মিশন থাকবে দুই নম্বরে।
তারা ৮ ম্যাচের প্রতিটি জিতেছে। ভারত ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে ৯ ম্যাচ জিতেছিল। ৩টি টেস্ট, ৫টি ওয়ানডে জয়ের পর একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিও ভারত জিতেছিল শ্রীলঙ্কায়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ২০০৫ সালে নিউ জিল্যান্ডে ৮টি জয় ও ১টি ম্যাচ ড্র করেছিল। ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারত সফরে ৮টি ম্যাচ জিতেছিল, ৩টি ড্র করেছিল।
অস্ট্রেলিয়ার আজকের ম্যাচের জয়ের নায়ক বেন দ্বারশুইস। ৪ ওভারে ৪১ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৯ রান করেন। এছাড়া ২০৫ রান করে সিরিজ সেরা হয়েছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
শেষ ম্যাচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ছিল না। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান রান পাননি। ব্রেন্ডন কিং ১১, শেই হোপ ৯ ও কেচি কার্টি ১ রানে ফেরেন সাজঘরে। চতুর্থ উইকেটে রাদারফোর্ড ও হেটমায়ার দলের হাল ধরেন। দুজন এগিয়ে নেন দলের স্কোরবোর্ড। কিন্তু তাদের সাজঘরে ফেরার পর আর কেউ পারেননি ভালো কিছু করতে। রাদারফোর্ড ৩৫ ও হেটমায়ার ৫২ রান করেন। ২০২৩ সালের পর হেটমায়ার প্রথম ফিফটি পেয়েছেন। ৩১ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫২ রান করেন তিনি। শেষ দিকে জেসন হোল্ডার ২০ ও ম্যাথু ফোর্ডে ১৫ রান তুলে লড়াই করার পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া ২৫ রানে ৩ উইকেট হারালেও মিডল অর্ডারে গ্রিন, ডেভিড ও ওয়েনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় তাদের জয়ের পথ মসৃণ হয়ে যায়। গ্রিন ১৮ বলে ৩২ রান করেন। ৪ ছক্কা ও ১ চাপে ডেভিড করেন ৩০ রান। ওয়েনের ব্যাট থেকে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ১৭ বলে আসে ৩৭ রান। ২৫ বলে ২৮ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন অ্যারোন হার্ডি।
স্পিনার আকিল হোসেন ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। ২টি করে উইকেট নেন হোল্ডার ও জোসেফ।
ব্যর্থ মিশন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অপেক্ষায় ঘুরে দাঁড়ানোর। আগামী সপ্তাহে তারা পাকিস্তানকে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আতিথেয়তা দেবে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন ৩ উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।
অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।
কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’
গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।