লক্ষ্মীপুর পৌর বাস টার্মিনালের বেহাল দশা
Published: 29th, July 2025 GMT
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশায় পড়েছে লক্ষ্মীপুর পৌর বাস টার্মিনালটি। খানাখন্দ আর জমে থাকা পানিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী, চালক ও শ্রমিকদের।
টার্মিনাল চত্বরজুড়ে বড় বড় গর্ত, বর্ষার পানিতে পুরো এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে আছে। এদিকে শুকনো মৌসুমে ধুলোয় ঢেকে যায় চারপাশ। এতে যাত্রীদের ওঠা-নামা, গাড়ি চলাচল সবকিছুতেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চালকেরা বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপরেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। এতে যেমন ভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। এছাড়া, টার্মিনালের পুরনো ভবনের ছাদ এবং দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। টার্মিনালে নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। ফলে রাতে মাদকাসক্তদের আড্ডা, চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।
শ্রমিক শেখ মুজিব সেকু, মফিজ ও বাবুল জানান- টার্মিনালে গাড়ি ঢোকানোই মুশকিল। কাদা, পানি আর গর্তে গাড়ি পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রীদেরও অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না। বাস টার্মিনালটির সীমানা প্রাচীরও ভেঙে গেছে বহু আগে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত টোল আদায় করলেও পৌর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল মেরামতে উদাসীন।
ইকোনো গাড়ির ম্যানেজার জুয়েল ভেন্ডার বলেন, “বেহাল টার্মিনালে কোনো নিরাপত্তা নেই। গাড়ি রেখে গেলে মালামাল চুরি হয়। বড় বড় গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। টার্মিনালে কোন গাড়ি ঢোকে না। এসব কারণে আমরা সমস্যায় আছি। বর্ষাকালে কোন যাত্রী টার্মিনালে আসে না। ২০-২৫ জনের বেশী যাত্রীও পাওয়া যায় না। টাকা আদায় তো হয় ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে টার্মিনালের কোনো উন্নতি হয় না।”
১৯৯৬ সালে নির্মিত টার্মিনালের মাঠের পাশে ২০০৮ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি বহুতল ভবন। সেই ভবনের অবস্থাও এখন নাজুক। ব্যবহার না হওয়ায়, পরিত্যক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে ভবনটি।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক জসীম উদ্দিন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে টার্মিনাল উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)