কুমিল্লায় ভাড়া বাসায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার, পাশে ছিল বিষের বোতল
Published: 29th, July 2025 GMT
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে উপজেলার রামপুর এলাকায় একটি বাড়ির তৃতীয় তলার কক্ষ থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে তাঁরা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।
মৃত দুজন হলেন মীর হোসেনের স্ত্রী জাহেদা আক্তার (৩৫) এবং এ দম্পতির মেয়ে মিশু আক্তার (১৪)। জাহেদা স্থানীয় একটি জুতা কারখানায় চাকরি করতেন। মীর হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে।
বাড়ির মালিক আবুল খায়ের বলেন, ‘১২ জুলাই ওই দম্পতি বাসা ভাড়া নেন। গতকাল মধ্যরাতে জুতার কারখানার ফোরম্যান ইব্রাহিম ফোন করে জানান, জাহেদা মারা গেছেন। পরে তিনতলায় গিয়ে দেখি, ঘরের একটি কক্ষে মা-মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে। জানতে পারি, ওই সময় মীর হোসেন ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে গেছেন। ওই কক্ষে বিষের বোতল পাওয়া গেছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে তা শোধ করতে না পেরে সম্প্রতি পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়েন মীর হোসেন। এরপর বুড়িচংয়ে এসে আবুল খায়েরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পারিবারিক কলহ ও ঋণের চাপে জাহেদা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মেয়ে মিশু স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিষের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহেও বিষপানের আলামত রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। মরদেহ দুটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাইফুল মালিক আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পরিবারটির প্রায় ১৫ লাখ টাকার ঋণ ছিল। ঘটনার পর মীর হোসেন পালিয়ে গেলেও পুলিশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি জানিয়েছেন, আতঙ্কে তিনি পালিয়ে গেছেন। তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।