আইন ও বিচার বিভাগে পদায়ন বিধিমালা জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এই বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত নিয়োগের পদ্ধতি ও যোগ্যতা কী হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদে নিয়োগের জন্য জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কমপক্ষে ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত সার্ভিসের সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ বা বদলির মাধ্যমে সচিব করা হবে।

গত সোমবার এই বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বিধিমালা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের আইন ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন পদে নিয়োগ করতে হবে। তবে এই বিধান সত্ত্বেও সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবের ২৫ শতাংশ পদে জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বাইরের সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে থেকে নিয়োগ করা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন ও ব চ র ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি কি মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ বদলে দেবে

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফ্রান্সের সাহসী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার ধরন পাল্টে দিতে পারে। যদিও এটি গাজায় চলমান সংঘর্ষ বা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র যে সময় নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে সামরিক শক্তির আশ্রয় নিচ্ছে, যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে কিংবা সম্প্রতি ইরান ও তাদের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা; সেই সময় কূটনৈতিক সমাধান এবং ‘যুদ্ধ নয়, শান্তির’ বার্তাই দিতে চাইছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

নিজের দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদের আর দুই বছরের কম সময় বাকি থাকা মাখোঁর জন্য এ বিষয় ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকরভাবে এগিয়ে না এলে ইতিহাসের পাতায় তা কালিমা হয়ে থাকতে পারে।

পারমাণবিক শক্তিধর, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি দেশের নেতা হিসেবে মাখোঁর হাতে বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব রাখার অনেক উপায় রয়েছে।

জি-৭ গোষ্ঠীর প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া মাখোঁর জন্য নিজ দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ইউরোপে সবচেয়ে বড় ইহুদি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ফ্রান্সে। এমন এক দেশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জনমতের ভারসাম্যে হাঁটছেন।

তাঁর ঘোষণায় কিছু মানুষ আনন্দিত হবেন, আবার কেউ ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া তাঁর ঘোষণার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়ায় এর প্রতিফলন পাওয়া গেছে।

এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করার পরও এখন মাখোঁ ইঙ্গিত দিচ্ছেন—এ সমর্থনেরও একটা সীমা রয়েছে।

ফ্রান্সের এ অবস্থান বদলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।’

এটি একটি পদক্ষেপ, কিন্তু তা কোনো জাদুর কাঠি নয়

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিজ নিজ রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আজকের বাস্তবতায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরাশার বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, ইসরায়েলের তাণ্ডবে ফিলিস্তিনের গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়ছে।

এ অবস্থায় শুধু মাখোঁর বক্তব্যেই বাস্তবতা বদলাবে না। তবুও তাঁর বার্তা স্পষ্ট, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ কূটনৈতিক পথে অর্জন করার আশা কখনো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, তা আজ যতই অসম্ভব মনে হোক।

তথাকথিত ‘পি-৫’ রাষ্ট্রগুলো নানা ইস্যু, যেমন ইউক্রেন, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পরস্পর বিভক্ত। ফলে শুধু ফ্রান্সের অবস্থান বদলে হঠাৎই ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে গাণিতিক অর্থে হলেও ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনায় বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়তে পারে।

মাখোঁ এক চিঠিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে লেখেন, ‘এ সমাধানই একমাত্র পথ, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার জবাব দিতে পারে। এখন যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মাখোঁ আরও লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। আমি এটা মেনে নিতে পারি না।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ