আসামিদের ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় আটক ছাত্রদলের চার নেতা–কর্মী মুচলেকায় মুক্ত
Published: 31st, July 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের তিন নেতা–কর্মীকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় ডিম ছুড়ে মারার চেষ্টার সময় ছাত্রদলের চার নেতা–কর্মীকে আটক করেছিল পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আদালত চত্বর থেকে আটকের পর মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আসামিদের কারাগারে নেওয়ার সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সেতাউর রহমান কয়েকজন নেতা–কর্মীকে নিয়ে স্লোগান দিয়ে আসামিদের ওপর ডিম ও ঢিল ছুড়ে মারার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেতাউর রহমানসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী নুরুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সহায়তায় ২০১৬ সালে শিবগঞ্জ উপজেলা যুবদলের মিজানুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের রেজাউল করিমকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনার আট বছর পর রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের পাঁচজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাত নেতা–কর্মীর নামে শিবগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।
মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুস সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীর কর্মী আবুল কালাম আজাদ ও শিবগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদসহ তিন আসামি উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তাঁদের তিনজনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানোর সময় ওই ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইউসুফ রাজা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি ছাত্রদলের ব্যানারে হয়নি। গুম হওয়া দুজন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সেতাউর রহমানের ভাই। তিনি ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে ছাত্রদলের কিছু কর্মীকে নিয়ে ঘটনাটি ঘটান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র শ বগঞ জ র রহম ন কর ম ক র সময় আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)