অভিনেতা, নির্মাতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে পরিচালনা ও উপস্থাপনায় সরব হন। বিতর্কিত উপস্থাপনা ও নানা ধরনের মন্তব্য করে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন তিনি। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সরব শাহরিয়ার নাজিম জয়। সমকালীন নানা বিষয় নিয়ে নিজের ভাবনার কথা প্রকাশ করতে এ মাধ্যমকে বেছে নেন। তার মতে—বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। আর এই জনসংখ্যা শক্তি না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়েছে।  

শাহরিয়ার নাজিম জয় তার ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, “স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা জন্মনিয়ন্ত্রণে। এত মানুষ। এজন্যই সব কিছুই বেশি বেশি। বেশিরভাগই জনশক্তিতে পরিণত না হইয়া যেন বোঝায় পরিণত হয়ে আছে।” 

আরো পড়ুন:

কাঁদতে কাঁদতে টাকা চাইলেও সাড়া মেলেনি, আক্ষেপ ডলি জহুরের

বাংলায় দেখা যাবে তুর্কি ধারাবাহিক ‘মোস্তফা’

খানিকটা ব্যাখ্যা করে শাহরিয়ার নাজিম জয় লেখেন, “কথা বেশি। প্রয়োজন বেশি। লোভ বেশি। হিংসা বেশি। বিভক্তি বেশি। অভাব বেশি। দুর্নীতি বেশি। হিংস্রতা বেশি। প্রতিশোধ বেশি রাজনীতি বেশি। এত বেশির ভিতর সবচেয়ে কম হচ্ছে মনুষত্ব এবং নমনীয়তা।” 

জয়ের এই ভাবনার সঙ্গে নেটিজেনদের কেউ কেউ একমত। আবার অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। আমান খান লেখেন, “সমস্যার কিন্তু শেষ নাই আত্রেয়ীর আব্বু। জন্ম নিয়ন্ত্রণই যদি সব সমস্যার সমাধান হতো, তাহলে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে অনেক কম থাকত। আমরা যদি যেকোনো সমস্যার সমাধান ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে সেভাবে চলি, আমার মনে হয়, যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তা অনেকাংশেই কমে যেত হরলাল দাদা।” 

রাকিবুল ইসলাম লেখেন, “মানুষ বোঝা নয়, এ দেশের যত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে কেউই জনবোঝাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার সদিচ্ছা করে নাই। এর প্রধান কারণ হলো জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে সঠিক রূপরেখা প্রস্তুত করতে হবে আর সঠিক রূপরেখা মানে হলো দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। কেউই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায়নি, তাই সঠিক রূপরেখা তৈরি করেনি। এজন্যই জনবোঝা তৈরি হয়েছে।” এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে তার কমেন্ট বক্সে। 

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র সমস য র

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ