চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রী হলে সান্ধ্য আইন জারি এবং রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশ না করলে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া নিয়ে প্রচারিত সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। 

শনিবার (২ আগস্ট) রাইজিংবিডি ডটকমকে দেওয়া এক বক্তব্যে চবির সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন এ দাবি করেন।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আবাসিক ছাত্রী অভিযোগ করেন, রাত ১০টার পর হলের বাইরে অবস্থান করলে তাদের সিট বাতিলের হুমকি দিয়েছেন সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন।

আরো পড়ুন:

পরীক্ষা না দিয়েও পাস ছাত্রলীগ নেত্রী, ৬ মাসেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন

হাতে সময় নিয়ে বের হতে এইচএসসি-বিসিএস পরীক্ষার্থীদের আহ্বান ডিএমপির

এ ঘটনাকে ‘সান্ধ্য আইন’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

গণমাধ্যম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই ছাত্রীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডিস ঝুপড়ি, মেয়েদের হলের সামনে প্রক্টরের গাড়ি এসে মাইকিং এবং টহল দিয়ে গেছে। এ সময় সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেছেন, রাত ১০টা ১টা মিনিটের পর কেউ হলে ঢুকলে তার সিট বাতিল করে দেবে। একটা স্বাধীন দেশে কেনো শুধু নারীদের জন্য এমন নিয়ম? এটা স্পষ্টভাবে নারীবিদ্বেষী। আমরা আগেও দেখেছি, এই প্রশাসন এমন আচরণে জড়িত। এবারো যদি তারা স্বৈরাচারী আচরণ চালিয়ে যায়, আমরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি লেডিস ঝুপড়ি থেকে বিপ্লবী উদ্যানের সামনে দিয়ে হলে যাচ্ছিলাম। তখন প্রক্টরিয়াল টিম গাড়ি থেকে নেমে উচ্চস্বরে বলে, ‘সব মেয়েরা যেন রাত ১০টার মধ্যে হলে ফেরে। ১০টা ১ মিনিটেও কেউ বাইরে থাকলে তার সিট ক্যান্সেল করে দেওয়া হবে।’ এরপর তারা বিপ্লবী উদ্যানে বসা মেয়েদেরও উঠিয়ে দেন।”

প্রকাশিত এসব সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেন, “প্রথমেই যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেটা সঠিক না। প্রক্টরিয়াল বডির নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ওইদিনও আমরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে ফরহাদ হল, কলা ঝুপড়ি এবং শহিদ মিনারে যাই। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বায়োলজিকাল ফ্যাকাল্টির দিকে যাই রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে। কিন্তু প্রতিবেদনে বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে ১০টার আগে কথা বলি; যা সময়ের হিসাবে মিথ্যা।”

তিনি বলেন, “বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বায়োলজিকাল ফ্যাকাল্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং ঝুকিপূর্ণ জায়গাগুলোর মাঝে অন্যতম। মূলত সেখানে কিছু শিক্ষার্থীকে দেখে পরামর্শের সুরে আবাসিক হলে বা আলোযুক্ত স্থানে যেতে বলেছি। তাদের সিট বাতিল করার এমন কোনো কথা বলা বা হুমকি দেওয়া হয়নি। তাদের সিট বাতিলের দায়িত্ব আমার নয়।”

তিনি আরো বলেন, “সান্ধ্য আইন বলে যেটা প্রচার করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কোনো ভিত্তিই নেই। লেডিস ঝুপড়ি এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থাকে। আমরা মেয়েদের হলগুলোতে সাধারণত টহল দেই না এবং সেদিনও হলের সামনে টহল দেওয়া হয়নি। আর মাইকিং করার যে কথাটা বলা হয়েছে, সেটা সম্পুর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।”

“আমরা নির্দিষ্ট কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা যেখানে মাঝেমধ্যেই গাঁজার আসর বসে, আমরা ওইসব এলাকা থেকেই মূলত কিছু শিক্ষার্থীকে দ্রুত হলে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছি। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে যেটা প্রচার করা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণমাধ্যমের কাছে আমরা পেশাদারিত্ব প্রত্যাশা করি, মিথ্যা সংবাদ নয়,” যুক্ত করেন সহকারী প্রক্টর।

নাজমুল হোসাইন বলেন, “প্রয়োজন না থাকলে শিক্ষার্থীদের তাদের হলে রাত ১০টার মধ্যে (যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত হলের ভিতর প্রবেশের সর্বোচ্চ সময়) প্রবেশের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের এই সাধারণ নির্দেশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়েই প্রচলিত ছিল। কারো ফিরতে দেরি হলে প্রবেশের সময় হলগেটের খাতায় একটা স্বাক্ষর করতে হয়; যা সাধারণ একটি বিষয়। এদিকে বন্ধ ক্যাম্পাস হওয়ায় সতর্কতার স্বার্থেই তাদের বিষয়টি বলা হয়েছিল।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.

তানভীর এমএইচ আরিফ বলেন, “এ ব্যাপারে আগে থেকেই নির্দেশনা ছিল কিছু নির্দিষ্ট অনিরাপদ এলাকার জন্য। যেখানে গাঁজা বা মাদক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের অভিযোগ আছে। শহীদ মিনার, লাইব্রেরি বা জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা থাকলে কোনো সমস্যা নেই।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। রাত ১০টার পর হলে ফেরার ব্যাপারে মূলত নিরাপত্তাজনিত দিক বিবেচনা করেই সহকারী প্রক্টর সাধারণভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠিন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সান্ধ্য আইনও নেই।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন ধ য আইন র ত ১০ট র প রক শ ত প রব শ র দ র হল সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার ও ষুধশিল্পে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

ওষুধশিল্পের মালিকেরা মনে করছেন, মালিকদের বাদ দিয়ে সরকার ওষুধের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের এই নীতি ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পমালিকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। আর এই আয়োজনে সহযোগিতা করে বাপি।

মতবিনিময় সভার শুরুতে বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড় শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি।

ওষুধশিল্প খাতের এই সাফল্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওষুধশিল্পের মালিকেরা। সমিতির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকেরা অভিযোগ করেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটিসহ আরও তিনটি কমিটিতে শিল্পমালিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও অতীতে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হতো।

বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘ওষুধশিল্পের মালিকেরা স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে এই শিল্পটাকে নিশানা করা হয়েছে, শিল্পটাকে কেউ নষ্ট করে দিতে চায়। সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।’

বাপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিভিন্ন কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি মালিকদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সভায় উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধশিল্পের জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ওষুধের মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাই দেশে ওষুধের দাম কম বা সহনশীল। বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে মেধাস্বত্বের সেই ছাড় আর পাবে না বাংলাদেশ। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধন না থাকা নতুন ওষুধের দাম অনেক বেশি হবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক ওষুধ কোম্পানির মালিক অভিযোগ করেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধ নিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিদপ্তর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজারখানেক ওষুধের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করে, তবে তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকেরা জানতে চান ওষুধের কাঁচামালের বিষয়ে শিল্পমালিকেরা কী করছেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান, ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ওষুধের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে। জবাবে বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্কের প্লটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট ছোট। বর্তমানে এপিআই শিল্প পার্কে ওষুধ কারখানার মালিক আছেন ২৭ জন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকটিকে প্লটকে একত্র করে প্লটের আকার বাড়ানো হবে। তাতে মালিকের সংখ্যাও কমে ১০-১২ জনে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এপিআই শিল্প পার্কে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় সেখানে কাঁচামালের কারখানা গড়ে উঠছে না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, একদল অসাধু লোক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে। এসব অসাধু লোক এখন শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ