রাবির সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগ
Published: 3rd, August 2025 GMT
অনুমতি ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণ, বাড়িতে ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলামের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এক বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে।
রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় রাবির পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রাশেদুল ইসলামের বড় ভাই তরিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত বাড়ির মালিক রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা ছানোয়ারুল ইসলাম রাঙা।
লিখিত বক্তব্যে তরিকুল ইসলাম বলেন, “ছানোয়ারুল ইসলাম রাঙা বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের কর্মকর্তা এবং ডায়মন্ড টাওয়ার নামক একটি ভবনের মালিক। তিনি আমাদের বাড়ির পাশের জমিতে অনুমতি ছাড়াই একটি আটতলা ভবন নির্মাণ করেন। অথচ ওই স্থানে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন ছিল। নির্মাণের সময় তিনি কোনো ফাঁকা জায়গা রাখেননি। ফলে আশপাশের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছেন।”
আরো পড়ুন:
শ্বাসরোধে ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যু: ভিসেরা রিপোর্ট
ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমাদের আজীবন সংগ্রাম করতে হবে; ইবি উপাচার্য
তিনি বলেন, “ভবনটি বর্তমানে একটি ছাত্রীনিবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্রীনিবাসের জানালা ও বারান্দা থেকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনাসহ ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন আমাদের বাড়ির ছাদ, বারান্দা ও আঙিনায় ছুঁড়ে ফেলা হয়। এনিয়ে একাধিকবার ভবন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ না করে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “বিশেষ করে ভবন মালিকের স্ত্রী প্রায়ই আমাদের পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিকার চেয়ে রাশেদুল বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। পরে তাদের অনুরোধে জিডি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।”
তরিকুল জানান, এরপর তারা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আরডিএ তদন্ত শেষে ২৬ জুন ছানোয়ারুল ইসলামের নামে একটি চিঠি ইস্যু করে এবং তাকে গত ৯ জুলাই শুনানির জন্য ডেকে পাঠালে তিনি সেখানে উপস্থিত হননি। আরডিএর চিঠি পাওয়ার পর ভবনের মালিক ও তার স্ত্রী আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তারা রাশেদুলকে আর্থিক সমঝোতার প্রস্তাব দেন, নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন, এমনকি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলার হুমকি দেন।
“সম্প্রতি ভবন মালিকের স্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, ‘তোর নামে আমার ম্যানেজারের টাকা চুরির মামলা দেবো, জেলে পচবি।’ এরপর তারা রাশেদুলের বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজির একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এতে করেও সন্তুষ্ট না হয়ে আরেকটি পুরাতন চাঁদাবাজির মামলায় যেখানে ৩৬ জনের নাম রয়েছে, সেখানে কৌশলে রাশেদুলের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই,” বলেন তরিকুল।
এই মামলার জেরে গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে তালাইমারির নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ রাশেদুলকে আটক করে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছানোয়ারুল ইসলাম রাঙা বলেন, “তাহলে আমারও একটা সংবাদ সম্মেলন করা দরকার। রাশেদ ২০২৩ সালে প্রথমবার আমার কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এটা শুধু আমি না, এলাকাবাসী সবাই জানে। সে আবারো একই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে গেলে তাকে বারবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু সে থামেনি। সে আমার কাছে চাঁদা চেয়েছে—এ সম্পর্কিত প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমার বাসায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ছাত্রীরা ভাড়া থাকেন। মেয়েরা যখন রুমে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে, হালকা পোশাক পরে থাকে, তখন রাতের অন্ধকারে তারা ছাদ থেকে জানালা দিয়ে ভিডিও করার চেষ্টা করে। এমনকি এসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। এসব ঘটনার রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ছ ন য় র ল ইসল ম র আম র ক ছ আম দ র তর ক ল
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।