রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে তৃতীয় পর্বের কাজ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই পর্বে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। পরে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জুলাই জাতীয় সনদ।

গতকাল রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কবে নাগাদ এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয় কমিশন। অবশ্য ইতিমধ্যে কমিশন অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

অন্যটি হলো ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়।

প্রথম পর্বে ৬৫টির বেশি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। এ পর্বে ১৯টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বা ঐকমত্য হয় ৯টি বিষয়ে। আর ১০টি বিষয়ের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক দলের ভিন্নমত আছে।

সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করবে দলগুলো। বিএনপি বিষয়টি মেনে নিলেও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে। তারা এই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার দাবি জানিয়েছে।

প্রথম পর্বে ৬৫টির বেশি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। এ পর্বে ১৯টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বা ঐকমত্য হয় ৯টি বিষয়ে। আর ১০টি বিষয়ের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক দলের ভিন্নমত আছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, তৃতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে থাকবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ। এর আগে দুই পর্বে একমত হওয়া বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করা হবে। কোন কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সে বিষয়ে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা এটি যাচাই–বাছাই করবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় নিয়েও আলোচনা হবে।

আর যেসব প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সংবিধান সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়, সেগুলোর বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। যেসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) আছে, সেগুলোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া হবে। ভিন্নমত কমিয়ে আনার চেষ্টাও করা হবে এ আলোচনায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশন মনে করছে, সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐকমত্য বা বোঝাপড়া না হলে অনেক দল জুলাই সনদে সই করবে না বলে শঙ্কা আছে। এ বিষয়ে দলগুলো যাতে একটি যৌক্তিক অবস্থানে আসতে পারে, সে জন্য কমিশন সব ধরনের চেষ্টা চালাবে। জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বা আইনি ভিত্তি দেওয়ার কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন।

মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ ও সনদে দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হবে। এ পর্বে আইনজ্ঞ, সংবিধানবিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবে।

গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ের বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। বৈঠক শেষে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঐকমত্য হওয়া প্রস্তাব বা সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশন পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে কথা বলবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ ও সনদে দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হবে। এ পর্বে আইনজ্ঞ, সংবিধানবিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হবে, যাতে সনদে সইয়ের বিষয়ে দলগুলোকে কাছাকাছি আনা যায়। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো কমিয়ে আনারও চেষ্টা থাকবে এই পর্বে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই জ ত য় সনদ র স দ ধ ন ত হয় ঐকমত য হয় দলগ ল র স প রস ত ব প রক র য় ত য় পর ব ভ ন নমত এ পর ব প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’

কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?

এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।

আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে