‘বন্ধুত্ব হচ্ছে প্রাণরক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেল, সে গুপ্তধন পেল।’
জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশের এই বাণী মানলে তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ‘গুপ্তধন’–এর মালিক। মিরাজের আছে তাসকিন নামের ‘গুপ্তধন’ আর তাসকিনের আছে মিরাজ নামের ‘গুপ্তধন’। কারণ, তাঁরা শুধু জাতীয় দলে সতীর্থ নন, ভালো বন্ধুও।

কিন্তু বন্ধুত্বের গল্প আর কতটা খুলে বলা যায়? যতই বলবেন, বাকি তো থেকে যাবেই! তবে মিরাজ ও তাসকিনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কতটা গাঢ়, তার একটা আঁচ পাওয়া গেল প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর সঙ্গে দুজনের জমাট আড্ডায়। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের পর উৎপল শুভ্রর নেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তাঁদের বন্ধুত্বের গল্প।

তাসকিন-মিরাজ এখন দুজনই দেশের ক্রিকেটে বড় তারকা। কিন্তু কেউই তারকা হয়ে জন্ম নেন না। তাঁদের আজকের এই খ্যাতি অনেক পরিশ্রম ও নিবেদনের ফসল। আর সেই পথে সব সময় একে অন্যের পাশে ছিলেন তাসকিন ও মিরাজ। দুজনই অনূর্ধ্ব–১৫ থেকে খেলছেন একসঙ্গে। যদিও জাতীয় দলে অভিষেক ভিন্ন সময়ে। ক্যারিয়ার গ্রাফটাও ঠিক একই রকম নয়। তবে এই উত্থান-পতনে দুজন ছিলেন দুজনের পাশে।
সে গল্পটা তাহলে তাঁদের মুখ থেকেই শুনুন।

তাসকিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে মিরাজ কী বলছেন, ‘২০০৯ সালে আমরা অনূর্ধ–১৪ (অনূর্ধ্ব–১৫) খেলেছি। তখন দিনাজপুর বিকেএসপিতে তিনটা দলের খেলা হয়েছিল। রেড, গ্রিন আর হলুদ দল। সেখানে প্রথম দেখা। ওই থেকেই আমার সঙ্গে পথচলা শুরু। তাসকিনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। যখন অনূর্ধ্ব–১৫ খেলেছি, আমি তাসকিনের বাসায় সব সময় যেতাম। তখন মোহাম্মদপুর জাকির হাসান রোডে থাকত।’

দুজনের সম্পর্কটা অনেকদিনের।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ধ ত ব র অন র ধ

এছাড়াও পড়ুন:

হানিফ মোহাম্মদের সঙ্গে সেই সন্ধ্যার স্মৃতি

দেখতে ছোটখাটো ছিলেন বলে ভালোবেসে সবাই ডাকত ‘লিটল মাস্টার’, কিন্তু ক্রিকেটীয় কীর্তিতে সেই ছোটখাটো লোকটাই কী বিশাল! হানিফ মোহাম্মদ শুধু নিজের সময়ের না, পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসেই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট ৮১ বছর বয়সে পরপারে চলে যাওয়া কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের বাড়িতে বসে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর। কিংবদন্তির মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে উৎপল শুভ্রর সেই স্মৃতিচারণা

‘লিটল মাস্টার’কে এতটা ‘লিটল' দেখাবে, এটা ভাবিনি। এর আগে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে দেখেছি, দেখেছি ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন পাকিস্তান দলের নেট প্র্যাকটিসের সময়ও। তখনো দেখে একটু বিস্ময়ই জেগেছে—এই ছোটখাটো লোকটিই ট্রুম্যান-স্ট্যাথাম-গিলক্রিস্টদের ছোড়া আগুনে গোলার সামনে অমন বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন, লড়েছেন অমন বীরত্বের সঙ্গে! ১৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট ব্যাট করে হেরে যাওয়া টেস্ট ম্যাচ ড্র করেছেন, পাকিস্তানের পক্ষে টেস্টে প্রথম জোড়া সেঞ্চুরিও, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তাঁর ৪৯৯ রেকর্ড হয়ে ছিল ৩৫ বছর। ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাঁর করাচির ইউনিভার্সিটি রোডের বাড়িতে হানিফ মোহাম্মদকে দেখে সেই বিস্ময়ও ম্লান। হানিফ মোহাম্মদ যেন আরও ছোট হয়ে গেছেন!

পরনে একটা হাওয়াই শার্ট আর প্যান্ট, চোখে সেই পরিচিত চশমা—মিনিট দশেক অপেক্ষার পর যে ভদ্রলোক সামান্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের সোফায় এসে বসলেন, ড্রেসিংরুমে ঢুকতেই হাসিমুখ যে বিশাল ছবিটি স্বাগত জানিয়েছিল, সেটির সঙ্গে তাঁকে মেলানোই মুশকিল। সেই ছবিটি যৌবনের হানিফ মোহাম্মদের। বলেও ফেললাম কথাটা। হানিফ মোহাম্মদ হাসলেন, ‘আই অ্যাম অ্যান ওল্ড ম্যান নাউ।’

যখন এ কথা বলছেন, এর তিন মাস পরই ৬৭তম জন্মদিন, সে হিসাবে তো ‘ওল্ড ম্যানই’। নাতি-নাতনির সঙ্গই তখন তাঁর আনন্দের প্রধান উৎস। ছেলে শোয়েব মোহাম্মদের দুই সন্তান শেহজার আর শেহজিনের সঙ্গেই কাটে দিনের বেশির ভাগ সময়। ইন্টারভিউর মাঝখানে ১১ বছর বয়সী শেহজার দুবার এসে বসলও দাদার পাশে। কারণটা শুধুই ছেলেমানুষি কৌতূহল নয়। একদিন যে তাকেও এমন ইন্টারভিউ দিতে হবে, এ নিয়ে যে কোনোই সন্দেহ নেই ওই পুঁচকে ছেলেটির মনে! হেসে উড়িয়ে দেবেন না কথাটা। হানিফ মোহাম্মদের কথাটা শুনে নিন আগে, ‘শেষ পর্যন্ত কী হবে, কে জানে! তবে এখন পর্যন্ত ও যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বিশ্ব ক্রিকেটের মোহাম্মদ পরিবার থেকে আরেকজন উপহার পাওয়ারই কথা। প্রতিভার ব্যাপারটা পুরোপুরি বোঝা যাবে চার-পাঁচ বছর পর, তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের কেউই ওর মতো এতটা ক্রিকেটের পাগল ছিলাম না।’

হানিফ মোহাম্মদের করাচির বাড়িতে হানিফ মোহাম্মদের সঙ্গে উৎপল শুভ্র। ৫ সেপ্টেম্বর ২০০১

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হানিফ মোহাম্মদের সঙ্গে সেই সন্ধ্যার স্মৃতি