ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রের লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধন করা হচ্ছে ব্যাংক কোম্পানি আইন, যেখানে পরিবারের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি কমানো হবে একই পরিবার থেকে পরিচালকদের সংখ্যা এবং পরিচালকদের একটানা পদে থাকার সময়সীমা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর একটি খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবারের সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হলে এবং পরিচালকদের পদে থাকার সময়সীমা কমানো হলে কোনো ব্যাংক একটি পরিবারের কবজায় রাখা কঠিন হবে। এতে অনিয়ম-দুর্নীতি কমবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, প্রিমিয়ার গ্রুপ, সিকদার গ্রুপসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব গ্রুপের পরিচালকেরা নিজেদের পাশাপাশি তাঁদের স্ত্রী/স্বামী, ছেলে-মেয়ে, জামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ব্যাংকের পর্ষদে বসাতেন।

আমরা চাই আগামী মাসের মধ্যেই অধ্যাদেশটি পাস হোক। ব্যাংক খাত যেভাবে চলছিল, সেভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। আহসান এইচ মনসুর, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

কয়েকটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু ব্যাংক এখন দুর্দশায় রয়েছে। আমানতকারীরা অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। সরকার পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠন করছে। একীভূত ব্যাংকটিকে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন দিতে হচ্ছে সরকারের কোষাগার থেকে, যা সাধারণ মানুষের করের টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংক ব্যবসা নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা করা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাই এবারের ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আইনটির খসড়া নিয়ে এখন কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তবে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) খসড়াটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খসড়াটি আমি পুরোপুরি দেখিনি। যতটুকু জানি ব্যাংক খাতের ভালোর জন্যই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।’

পরিবারতন্ত্রে লাগাম

দেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১ (এর মধ্যে ৫টি একীভূত হওয়ার পথে)। এসব ব্যাংক পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে। ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত নেয়। মানুষের টাকা যাতে নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রের লাগাম টানতে আইনে কয়েকটি ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। তার একটি হলো ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবারের সংজ্ঞা বিস্তৃত করা।

বিদ্যমান আইনে ‘ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান’ নামের একটি অংশে পরিবারের সদস্যদের তালিকা দেওয়া আছে। বর্তমানে পরিবারের সদস্য বলতে কোনো ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামী, পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন এবং ওই ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। খসড়ায় নতুন করে যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে আরও কিছু স্বজনকে। তার মধ্যে রয়েছে ভাবি, ভগ্নিপতি, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা (স্ত্রীর ক্ষেত্রে দেবর-ননদ) এবং ওই ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি।

বিএবি ‘পরিবার’-এর সংজ্ঞা শুধু স্বামী-স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে। সংগঠনটি উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ভারতের আইনে পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী বা হিন্দু অবিভক্ত পরিবারকে বোঝানো হয়। পাকিস্তানে তা স্বামী-স্ত্রী, নির্ভরশীল সরাসরি বংশধর ও নির্ভরশীল ভাই-বোন। শ্রীলঙ্কায় পরিবার বলতে শুধু স্বামী-স্ত্রী বা নির্ভরশীল সন্তানকে বোঝানো হয়।

খসড়াটি আমি পুরোপুরি দেখিনি। যতটুকু জানি ব্যাংক খাতের ভালোর জন্যই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

ব্যাংকে একই পরিবার থেকে পরিচালকের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একটি পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যাংকের পর্ষদে থাকতে পারেন। নতুন নিয়মে তা কমিয়ে দুজন করার কথা বলা হয়েছে। বিএবি এই সীমা তুলে দেওয়া বা শিথিল করার প্রস্তাব করে বলেছে, সতর্কতার সঙ্গে এ বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে পরিচালনা পর্ষদে ব্যাংকের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী ও অঙ্গীকারসম্পন্ন পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

১৯৯৬ সালে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ব্যাংক সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে পারবেন না। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এখন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

বর্তমান নিয়মে পরিচালকেরা টানা ১২ বছর পর্ষদে থাকতে পারে। এ নিয়মে পরিবর্তন করে সময়সীমা টানা ছয় বছরের কথা বলা হয়েছে। বিএবি বলছে, পরিচালকদের ৯ বছর থাকার সুযোগ রাখা হোক। মেয়াদ কমালে অভিজ্ঞতার ঘাটতি হবে ও ব্যাংক খাতে নেতিবাচক বার্তা যাবে।

অবশ্য বিশ্লেষকেরা বিএবির এ যুক্তিকে সঠিক মনে করছেন না। কারণ অতীতে একটানা দীর্ঘসময় থাকতে দিয়েই ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েম হয়েছে এবং ব্যাংক দুর্দশায় পড়েছে।

২০১৮ সালের আগেই পরিচালকদের একটানা মেয়াদ ছিল ছয় বছর। ২০১৮ সালে তা ৯ বছর করা হয়। ২০২৩ সালে আইন আবার সংশোধন করে করা হয় ১২ বছর। ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন ঘিরে ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে হইচই ও হট্টগোল হয়েছিল। ওই বছরের ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। কিন্তু সংসদে এ বিল পাসের আগে এ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দেন তৎকালীন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম। তিনি পরিচালক পদের মেয়াদ টানা ১২ বছর করার প্রস্তাব করেন। সেটাই পাস হয়।

বিশ্লেষকেরা বিএবির এ যুক্তিকে সঠিক মনে করছেন না। কারণ অতীতে একটানা দীর্ঘসময় থাকতে দিয়েই ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েম হয়েছে এবং ব্যাংক দুর্দশায় পড়েছে।

পাস হওয়ার আগে তখন ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও ব্যাপক প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে তাঁরা ওয়াকআউট করেন। জাতীয় পার্টির তখনকার সংসদ সদস্য মুজিবুল হক সংসদে বলেছিলেন, পরিচালকেরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা। চেয়ারম্যান-পরিচালকের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক শেষ।

২০২৩ সালে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যাংক মালিকদের ‘আবদারেই’ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালকদের একটানা ১২ বছর পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল। এর নেপথ্যে ছিলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির তখনকার নেতারা। বিএবির সাবেক সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এখন কারাগারে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশে চলে গেছেন। সাবেক দুই গভর্নর ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার প্রকাশ্যে আসছেন না। ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অনুসন্ধান চলছে। আব্দুর রউফকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে।

ব্যাংকের পর্ষদে বর্তমানে কোনো একটি পরিবারের সদস্যের অতিরিক্ত হিসেবে ওই পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারেন। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ কমানোর জন্য খসড়ায় একজন প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র পরিচালক ৫০% করার প্রস্তাব

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হবে ১৫ সদস্যের, যার ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ অর্ধেকই থাকবেন স্বতন্ত্র পরিচালক। বর্তমানে ২০ সদস্যের পর্ষদ রয়েছে ব্যাংকগুলোতে, যার মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার বিধান আছে ৩ জন। বিএবি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছে, স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ২ থেকে ৩ জন হতে পারে। অর্ধেক স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলে শেয়ারমালিকদের নিয়ন্ত্রণ কমবে এবং ব্যাংক পরিচালনায় মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির চেয়ে কেবল নীতিপালন অগ্রাধিকার পাবে।

অবশ্য এ বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র পরিচালক সংখ্যায় হবে ৮ জন। পর্ষদের শতভাগই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে পারলে আরও ভালো হতো।

ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করার জন্য পরিচালনা পর্ষদে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা থাকতে পারবেন না—এমন একটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাবও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা পরিচালক নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ, পদায়ন, অব্যাহতি, বরখাস্ত, অপসারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ইত্যাদি বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে লাগে না। এসব ব্যাংকে সরকার নিয়োগ দেয়।

আমরা চাই আগামী মাসের মধ্যেই অধ্যাদেশটি পাস হোক। ব্যাংক খাত যেভাবে চলছিল, সেভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।গভর্নর আহসান এইচ মনসুর , বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় ‘একই ধরনের বিধান’ করার স্বার্থে বিশেষায়িত ব্যাংকের এমডি, সিইও বা পরিচালকদের বেলায়ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এমডি, সিইও বা পরিচালক হওয়ার বর্তমান শর্ত হচ্ছে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা। এটা বাড়িয়ে ১৫ বছর করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই আগামী মাসের মধ্যেই অধ্যাদেশটি পাস হোক। ব্যাংক খাত যেভাবে চলছিল, সেভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।’

ব্যাংক কোম্পানি আইনে ২০২৩ সালে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা’ নামে একটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। খসড়ায় তা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে গভর্নর প্রথম আলোকে বলেন, টাকা দিতে পারছে কি না, সেটা বড় বিষয়। ফলে ইচ্ছাকৃত বলার দরকার নেই।

বাতিল আদেশের মেয়াদ বাংলাদেশ ব্যাংক সময়-সময় বাড়াতে পারবে এবং তা দুই বছরের বেশি হবে না—বর্তমানের এই নিয়ম বাদ দিয়ে বলা হয়েছে, পর্ষদ বাতিলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যক্তিকে পর্ষদের সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালনের কথা বলবে। নিয়োগপত্রে যে মেয়াদ থাকবে, আদেশটি তত দিনই বহাল থাকবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়বে

আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী পদ্ধতিতে পরিচালিত ব্যাংকের নতুন আমানত নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে বর্তমানে। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে ওই ধরনের ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে পারবে। খসড়ায় নতুন ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে নতুন করে ঋণ, বিনিয়োগ বা মূলধন দেওয়াও বন্ধ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ নিয়ে বলেন, ‘আমানতকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় আমরা দেখলাম নতুন ঋণও বন্ধ করা উচিত। তাই এ প্রস্তাব করা হয়েছে।’

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেনাদার কোম্পানির পরিচালকেরা পদত্যাগ তো করতে পারবেনই না, তাঁদের বরখাস্ত, অপসারণ বা অব্যাহতিও দেওয়া যাবে না। কোনো শেয়ারও হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবেন না তাঁরা।

আইনের খসড়ায় নতুন ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, ব্যাংকের তহবিলের অপব্যবহার বা মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন করার অপরাধে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করতে পারবে। বাতিল আদেশের মেয়াদ বাংলাদেশ ব্যাংক সময়-সময় বাড়াতে পারবে এবং তা দুই বছরের বেশি হবে না—বর্তমানের এই নিয়ম বাদ দিয়ে বলা হয়েছে, পর্ষদ বাতিলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যক্তিকে পর্ষদের সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালনের কথা বলবে। নিয়োগপত্রে যে মেয়াদ থাকবে, আদেশটি তত দিনই বহাল থাকবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়সীমা বাড়াতে-কমাতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা নতুন পর্ষদ হবে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য।

এতে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে বলে আমি বিশ্বাস করি।মুস্তফা কে মুজেরী।‘সুশাসন ফিরবে’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংকের পরিচালকেরা তাতে জড়িত ছিলেন। ব্যাংকের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়লে অনিয়ম-দুর্নীতি করা তাঁদের পক্ষে তখন কঠিন হবে। তবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিচক্ষণতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের একটানা মেয়াদ ছয় বছরে সীমিত করা, এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক না রাখা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরিচালক ও এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম আইনের খসড়ায় রাখাকে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন মুস্তফা কে মুজেরী। পরিবারের সংজ্ঞা বিস্তৃত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এতে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র স জ ঞ র প রথম আল ক পর ব রতন ত র আইন র খসড় য় ব স ত ত কর পর ব র থ ক ন র ভরশ ল ২০২৩ স ল ক র পর চ র সদস য সরক র র সময়স ম ১২ বছর মন ত র প রব ন স শ সন উদ য গ র জন য ব যবস ক ষমত বছর র আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল

নিউজিল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মঘণ্টা–সংক্রান্ত নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। ৩ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হওয়া এই নিয়মে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন, যা আগে ছিল ২০ ঘণ্টা।

গত জুলাই মাসে ঘোষিত নিউজিল্যান্ড সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন গোয়িং ফর গ্রোথ প্ল্যান’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন এসেছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য দেশের আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাতকে টেকসইভাবে সম্প্রসারণ করা এবং আরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করা।

বাড়তি কর্মঘণ্টার সুযোগ

নতুন বিধি অনুযায়ী, বৈধ স্টুডেন্ট ভিসাধারী সব তৃতীয় ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী এখন থেকে সাপ্তাহিক ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। এই পরিবর্তন ৩ নভেম্বর থেকে ইস্যুকৃত সব নতুন ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমনকি ওই তারিখের আগে জমা দেওয়া আবেদনগুলোর ক্ষেত্রেও।

বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থীর ভিসায় ২০ ঘণ্টা কাজের সীমা রয়েছে, তারা চাইলে ‘ভ্যারিয়েশন অব কন্ডিশনস’ বা নতুন ভিসার জন্য আবেদন করে এই বাড়তি সুযোগ নিতে পারবেন। তবে নির্ধারিত ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ পূর্বের মতোই বহাল থাকবে।

আরও পড়ুনবিশ্বের দীর্ঘতম ১৩ ঘণ্টার পরীক্ষা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যেভাবে দেয়২ ঘণ্টা আগেনিউজিল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন, যা আগে ছিল ২০ ঘণ্টা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ