শিক্ষক নিবন্ধনের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষায় প্রথম কুবি ছাত্রী
Published: 24th, August 2025 GMT
সম্প্রতি প্রকাশিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সহকারী শিক্ষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) স্কুল পর্যায়ের ফলাফলে সারাদেশে প্রথম হয়েছেন সাবরিনা ইয়াছমিন রিমি। ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৮ পেয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
সাবরিনা ইয়াছমিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাকে কুমিল্লা রেলওয়ে পাবলিক হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের হয়রানি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন হবে: উপাচার্য
নোবিপ্রবিতে ১০৫ শূন্য আসনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি
তিনি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার মাহবুবুর রশীদ পাটওয়ারী ও ফাতেমা আক্তারের কন্যা। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনিই বড়।
রিমি ২০১৩ সালে আল আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাস করে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এ অর্জনের গল্প শোনাতে গিয়ে তিনি বলেন, “গতানুগতিক উত্তর থেকে একটু ভিন্নভাবে প্রতিটা বিষয়ের প্রশ্নোত্তরগুলোকে সাজানোর জন্য আমি গাইড বই, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, চ্যাটজিপিটি, ইউটিউব থেকে প্রচুর পরিমাণে সাহায্য নিয়েছি। প্রতিটা প্রশ্নোত্তরকে আমি তথ্যবহুল করে গোছানোর চেষ্টা করেছি। এছাড়া বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অনেক ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছি।”
অন্য প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “শিক্ষক নিবন্ধন স্কুল পর্যায়ের (আইসিটি) সিলেবাস মোটামুটি সহজ। এতে ভালো ফলাফলের জন্য খুব আহামরি পরিশ্রম করতে হবে ব্যাপারটা এমন না। কেউ চাইলে রিটেনের জন্য দুই মাসের ভেতরে একটা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে নিতে পারে, যদি একটু কৌশলী হয়ে পড়াশোনা করে।”
শিক্ষকতা পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, “কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। যেহেতু আইসিটির হাতেখড়িটা স্কুল কলেজ থেকেই শুরু হয়, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যেন এই বিষয়টির প্রতি ভীতি তৈরি না হয় বরং আগ্রহের সাথে তারা আইসিটির ক্লাসগুলো করে। তার জন্য অবশ্যই এখানে ভালো শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। আমি ভবিষ্যতেও এই পেশাতেই থাকতে চাই।”
সাফল্যের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, “রিটেন পরীক্ষা অনেক ভালো দিয়েছিলাম, তারপরেও প্রথম হব, এটা কখনো ভাবিনি। রেজাল্ট পাওয়ার পর অবশ্যই অনুভূতিটা অন্যরকম ছিল। পরিবারের সবাই খুশি।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।
অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।
কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’
গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।