লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস বি ও সি, লিভার ক্যান্সার বা জন্মগত ত্রুটির মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় Transplant ছাড়া রোগীর বাঁচার অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। এখনো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট শুধুমাত্র বিদেশে গিয়েই করা সম্ভব, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় সময়ের পরিবর্তনে বাংলাদেশ এখন এই জীবনরক্ষাকারী অস্ত্রোপচারটি দেশের ভেতরেই সফলভাবে করার দিকে এগিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়ে। ২০১০ সালে বারডেম হাসপাতালে প্রথম লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হলেও তা স্থায়ী সাফল্য পায়নি। তবে ২০১৯-২০২০ সালের দিকে ঘটনা প্রবাহ দ্রুত বদলায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলো, যেমন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট, বিএমইউ, বারডেম, ইউনাইটেড হাসপাতাল, কেপিজে হাসপাতালে দক্ষ হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলিজিস্ট, হেপাটোলজিস্ট, এনেস্থেশিওলজিস্ট এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ICU) নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ দল গড়ে তোলায় মনোযোগী হয়। এই উদ্দেশ্যে তারা দেশের বাইরে বিশেষ করে ইণ্ডিয়া, কোরিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে। 

২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BMDC) সরকারিভাবে দুটি হাসপাতালকে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার অনুমোদন দেয়। এটি ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫০০০-৬০০০ জন রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন। এরমধ্যে মাত্র ১৭০-১৮০ জন বিদেশে গিয়ে এই সেবা নিতে সক্ষম হন। বাকি রোগীগুলো বিনাচিকিৎসায় ধুকতে ধুকতে মারা যান, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। 

বর্তমানে বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। 

সফল হেপাটোবিলিয়ারি অস্ত্রোপচার যেমন লিভার রিসেকসশনসহ অন্যান্য সার্জারীর সংখ্যা বাড়ছে সংখ্যা। দেশেই ট্রান্সপ্লান্ট করার উপযোগী দক্ষ মেডিকেল টিম এবং হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মেধাবী ডাক্তাররা এখন লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য প্রশিক্ষিত। অনেকেই ভারত, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের নামকরা প্রতিষ্ঠানে থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

বিদেশে, বিশেষ করে ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে খরচ পড়ে ৩৫ লাখ থেকে ১ কোটিরও বেশি টাকা। বাংলাদেশে এই খরচ এখন ২০-৩০ লাখ টাকার মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব। এছাড়াও দেশে চিকিৎসা করালে পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকা, পরিচিত পরিবেশ এবং ভাষাগত সমস্যা না থাকা একটি বড় সুবিধা। যেসকল রোগীরা সামর্থ্যবান নন তাদের জীবন বাঁচাতে সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে হবে। 

তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। আমাদের রয়েছে সামাজিক সচেতনতার অভাব। লিভিং ডোনর (জীবিত দাতা) হিসেবে সাধারণত পরিবারের সদস্যরাই এগিয়ে আসেন। কিন্তু লিভার দান করা নিরাপদ কিনা, এর পর কী জটিলতা হতে পারে—এ বিষয়ে এখনও সবাই পুরোপুরি অবগত নন। জেনে রাখা জরুরী, লিভার দিলে ডোনারের সামান্য একটা অপারেশন ব্যতীত অন্যকোনো সমস্যা হয় না। তিন-চার মাসের মধ্যে লিভার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। 

ডিসিসড ডোনার বা ব্রেইনডেথ রোগীদের অরগান নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট জটিলতা আছে। সামাজিক এবং ধর্মীয় ভাবেও আমরা এই বিষয়ে সচেতন বা অবগত নই। মরোনোত্তর চক্ষুদান যেমন একটা অত্যন্ত চমৎকার কাজ, এক্সিডেন্ট বা অন্যান্য অসুখের কারণে অনেক হাসপাতালে অনেক ব্রেইনডেথের রোগী থাকে, তাদের আত্মীয়স্বজনেরা চাইলেই লিভার/কিডনি দান করে আরেকজন মরণোন্মুখ রোগীকে নতুন জীবন দিতে পারেন। এই বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। 

ট্রান্সপ্লান্টের পর রোগীকে আজীবন বিশেষ ওষুধ (Immunosuppressants) খেতে হয় এবং নিয়মিত follow-up করতে হয়। এই ওষুধগুলো বেশ দামি। সরকারি সহায়তা বা বীমার আওতা বাড়লে রোগীর উপর এই চাপ কমবে। 

সবাই আন্তরিক হলে বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট অত্যন্ত কম খরচেই করা সম্ভব এমনকি বিদেশ থেকেও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য বাংলাদেশে রোগীরা আসবে। 

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সকল ধরনের সহযোগিতা এবং সমর্থন পেলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এদেশেই অত্যন্ত সফলভাবে করা সম্ভব। 

লেখক: কনসালটেন্ট, ট্রান্সপ্লান্ট, সার্জিক্যাল আইসিইউ, এক্সিডেন্ট এণ্ড ইমার্জেন্সি কেয়ার সেন্টার,।
United Healthcare Services Ltd.

& United Medical College Hospital

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে ৩ পুলিশ নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে গুলিতে অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন পুলিশ সদস্য।

অঙ্গরাজ্যটির পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যারিস বুধবার সংবাদমাধ্যমকে হতাহতের এ তথ্য জানান।

ক্রিস্টোফার প্যারিসের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপিরো ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১১৫ মাইল পশ্চিমে নর্থ কোডোরাস টাউনশিপে ঘটনাস্থলে গেছেন।

কে বা কারা এ গুলিবর্ষণের পেছনে জড়িত, সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘আমাদের সমাজের জন্য একটি অভিশাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

পামেলা বন্ডি আরও বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য ফেডারেল এজেন্টরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ