কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েতের শ্রম আইন এবং স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আইনগত অধিকার এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার বিষয়ে কর্মীদের সচেতন করতে এই বার্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন:

জুলাইয়ে রেমিট্যান্সে শীর্ষে ঢাকা, তলানিতে লালমনিরহাট

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

আইনি অধিকার ও কর্মবিরতি

কুয়েতের শ্রম আইন অনুযায়ী, বকেয়া বেতন বা অন্যান্য সমস্যার সমাধানে কর্মীদের ধর্মঘট বা কাজে অনুপস্থিত থাকা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদি কোনো কর্মী একটানা সাত দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে ‘অ্যাবসকনডিং কেস’ বা অনুপস্থিতির মামলা করতে পারে। এর ফলে কর্মী চাকরি হারাতে পারেন এবং তার ইকামা বাতিল হতে পারে। তাই, যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে কুয়েতের ‘পাবলিক অথোরিটি ফর ম্যানপাওয়ার’ অথবা ‘ডিপার্টমেন্ট অব ডোমেস্টিক লেবার’-এ অভিযোগ করার জন্য দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে। দূতাবাস প্রয়োজনে এসব আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।

কর্মস্থলের বাইরে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন

কুয়েতের আইনে, ইকামায় উল্লেখিত কর্মস্থলের বাইরে অন্য কোথাও কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অনেক সময় নতুন কর্মীরা অধিক আয়ের আশায় এই ভুল করে থাকেন, যার ফলে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আইন ভঙ্গের কারণে তাদের জেলে পাঠানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরত পাঠানো হয় (ডিপোর্ট)। একবার ডিপোর্ট হলে ভবিষ্যতে কুয়েতে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকে না। তাই, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজেদের ইকামায় উল্লেখিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভিসা কেনা-বেচা এবং অভিবাসন ব্যয়

বাংলাদেশ সরকার কুয়েতে কর্মী পাঠানোর জন্য অভিবাসন ব্যয় বাবদ ১,০৬,৭৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এর অতিরিক্ত কোনো অর্থ লেনদেন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ভিসা কেনা-বেচার মাধ্যমে এই ব্যয় অনেক বেড়ে যায়, যা আইন অনুযায়ী দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্যই অপরাধ। দূতাবাস অনুরোধ করেছে, সকল প্রকার অবৈধ ভিসা লেনদেন থেকে বিরত থেকে যেন বৈধভাবে কুয়েতে আসার চেষ্টা করা হয়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

চুক্তিপত্র: কর্মস্থলে যোগদানের আগে চুক্তিপত্রের শর্তাবলী (বেতন, কাজের ধরন ইত্যাদি) ভালোভাবে জেনে স্বাক্ষর করুন এবং একটি কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।

অবৈধ আর্থিক লেনদেন: ইকামা নবায়ন, ছুটি বা আকামা স্থানান্তরের জন্য কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ। এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

অর্থ লেনদেনের প্রমাণ: যেকোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই রশিদ বা উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করুন, কারণ মৌখিক প্রতিশ্রুতির কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

অবৈধ কার্যক্রম: কুয়েতে ভিক্ষাবৃত্তি, আবর্জনা থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করা, অর্থ জালিয়াতি, এটিএম কার্ড জালিয়াতি এবং মাদক সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রমে জড়িত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। দূতাবাস বিশেষভাবে সতর্ক করেছে যে, মাদক কেনা-বেচা বা পরিবহনের অপরাধে অনেক বাংলাদেশি বর্তমানে জেলে আছেন।

যানবাহন ও ট্রাফিক আইন: গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির কাগজপত্র সাথে রাখুন। ট্রাফিক আইন, যেমন সিট বেল্ট ব্যবহার, নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলা, এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলা- এই নিয়মগুলো মেনে চলুন।

এই সকল নির্দেশনা মেনে চলে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের এবং দেশের সুনাম রক্ষা করতে পারবেন, পাশাপাশি আইনি জটিলতা এড়িয়ে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স কর ম দ র র জন য ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ