নোবিপ্রবিতে বাস সঙ্কট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
Published: 28th, August 2025 GMT
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী বেড়েছে। ভর্তি হয়েছে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তবে বাসের সংখ্যা না বাড়ায় ভোগান্তি বেড়েছে তাদের।
প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য বাসে গাদাগাদি করে উঠতে হচ্ছে। অনেকে ঝুলে ঝুলে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
শাবিপ্রবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের গায়েবানা জানাজা
রাতভর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের তথ্য মতে, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ভাড়ায় চালিত ডাবল ডেকার বাস রয়েছে ১৩টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস রয়েছে ১১টি। তবে এর মধ্যে দুইটি বাস দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকায় কার্যত ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী সংখ্যা সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিবহন ব্যবস্থা নেই।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নোবিপ্রবিতে ১৫তম ব্যাচ থেকে শুরু করে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। নতুন করে ২০তম ব্যাচের প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীরা যোগ হয়েছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে মাস্টার্সেরসহ প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাসের সংখ্যা আগের মতোই। এতে সমস্যা প্রকট হচ্ছে।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের দুইটি ও মেয়েদের তিনটি আবাসিক হল থাকলেও সিট সংখ্যা শিক্ষার্থীর তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাইজদীতে অবস্থান করেন। প্রতিদিন মাইজদী থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার একমাত্র ভরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। ফলে বাস সংকটের কারণে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
১৮তম ব্যাচের মোহাম্মদ রাকিব নামে এক শিক্ষার্থীরা বলেন, “ক্যাম্পাসে আসতে গেলে বাসে সিট পাওয়া যায় না। বাসে জায়গা না থাকায় দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলে আসতে হয়। অনেক সময় তো বাসে ওঠার যায়গাও থাকে না, দরজার সঙ্গে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যায়।”
১৬তম ব্যাচের মাহাথির শুভ নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু বাস বাড়ানো হচ্ছে না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত নতুন বাস সংযোজন করুক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন উপদেষ্টা ড.
সংকট কাটিয়ে উঠতে নতুন বাস ক্রয় করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক বলেন, “সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা নতুন বাস আপাতত ক্রয় করতে পারছি না। আমরা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে স্পন্সর হিসেবে বাস নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
ভাড়ায় চালিত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “ভাড়া চালিত বাসের সংখ্যা বাড়ালে ইউজিসি কর্তৃক বার্ষিক বাজেটের উপর ব্যয় চলে যায়। আমরা যদি কোনোভাবে এ সমস্যা সমাধান করতে না পারি, তখন আমরা ভাড়ায় চালিত বাস বাড়ানো যায় কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প রব নত ন ব
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)