হ্যাটট্রিকে শ্রীলঙ্কার নাটকীয় জয়ের নায়ক মাদুশঙ্কা, জিম্বাবুয়ের ‘খলনায়ক’ রাজা
Published: 30th, August 2025 GMT
শ্রীলঙ্কাকে হারানোর খুব কাছে গিয়েও জয়ের অমৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলো জিম্বাবুয়ে। সত্যিই বঞ্চিত-ই হলো। নাটকীয় ম্যাচের শেষটা এতোটা রঙিন হবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি।
হারারেতে দুই দলের প্রথম ওয়ানডের নিষ্পত্তি হয় নখ কামড়ানো মুহূর্ত উপহার দিয়ে। শ্রীলঙ্কার করা ২৯৮ রানের জবাব জিম্বাবুয়ে দিচ্ছিল সিকান্দার রাজার ব্যাটে। তার ৮৬ বলে ৯২ রানের ইনিংসে ভর করে ৪৯ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৯ রান তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
শেষ ৬ বলে দরকার ১০ রান। উইকেটে সিকান্দার রাজার সঙ্গে ৪২ রান করা টনি মুনইয়ঙ্গা। লঙ্কানরা জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিল হয়তো। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দিলেন মাদুশঙ্কা। বাঁহাতি পেসার শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে তুলে নেন তিন উইকেট।
নায়কের ভূমিকায় থাকা সিকান্দার রাজাকে দিয়ে শুরু। এরপর ইভান্স ও এনগাভারার উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের লোয়ার মিডল অর্ডার নাড়িয়ে দেন। শেষ ৩ বলে দরকার ১০ রান। ২ রানের বেশি নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৭ রানের অতিমানবীয় জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়ে এই জয়ের নায়ক মাদুশঙ্কা। দুই ম্যাচ সিরিজে তারা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। রাজা ৮ চারে ৯২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এর আগে বেন কারান ৭০, শন উইলিয়ামস ৫৭ রান করেন। টনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৩ রানে। মাদুশঙ্কা ৬২ রানে নেন ৪ উইকেট। ৫০ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন আশিথা ফার্নান্দো।
এর আগে জিম্বাবুয়ের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে পাথুম নিশাঙ্কা। ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন জানিথ লিয়ানাগে। শেষ দিকে কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাটে ঝড় উঠে। ৩৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার এনগাভারা ৩৪ রানে ২ উইকেট নেন।
বড় লক্ষ্যেও জিম্বাবুয়ে দারুণ জবাব দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকে ছিল। এক পর্যায়ে এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু মাদুশঙ্কার হ্যাটট্রিকে শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি তারা।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)