বাঁকখালী নদী উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু
Published: 1st, September 2025 GMT
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী উদ্ধারে আবারো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট একসময় ছিল প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখান দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জাহাজ ও লঞ্চ চলাচল করত। এখন সেসব কেবল স্মৃতি। নদী দখল করে অন্তত ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে দুই শতাধিক পাকা-সেমিপাকা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
প্রাণহীন গাজীখালী নদী এখন কচুরিপানার দখলে
৮ দিনেও পরিচয় মেলেনি সেই চার মরদেহের
বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক খায়রুজ্জামান জানান, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।”
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে হাইকোর্টের নির্দেশে যৌথ অভিযানে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরে ফের সেখানে গড়ে ওঠে নতুন ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। পরিবেশকর্মীরা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে মাত্র দেড় মাসে উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় শত শত নতুন ঘরবাড়ি নির্মিত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গত শনিবার সার্কিট হাউসে বিশেষ সভায় বাঁকখালী নদী উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে।”
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশ দেয়, আগামী চার মাসের মধ্যে নদীর সব দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে এবং ছয় মাসের মধ্যে নদীটিকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করতে হবে। একইসঙ্গে নদীর জমি ইজারা বাতিল, ম্যানগ্রোভ বন পুনঃস্থাপন এবং নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, বাঁকখালী নদীর জায়গা উদ্ধারের নামে স্থানীয়দের খতিয়ানভুক্ত জায়গায় বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে মানববন্ধন করে অভিযোগ তুলেছেন উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দারা।
ওই এলাকার শাহাদত হোসেন বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ কে বলতে চাই, আগে খতিয়ানভুক্ত জায়গার প্রকৃত মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। সীমানা নির্ধারণ করে তারপর উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হোক। এতে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।”
ঢাকা/তারেকুর/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ উদ ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত
তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।