কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী উদ্ধারে আবারো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট একসময় ছিল প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখান দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জাহাজ ও লঞ্চ চলাচল করত। এখন সেসব কেবল স্মৃতি। নদী দখল করে অন্তত ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে দুই শতাধিক পাকা-সেমিপাকা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

প্রাণহীন গাজীখালী নদী এখন কচুরিপানার দখলে

৮ দিনেও পরিচয় মেলেনি সেই চার মরদেহের

বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক খায়রুজ্জামান জানান, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েন রয়েছে।”

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে হাইকোর্টের নির্দেশে যৌথ অভিযানে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরে ফের সেখানে গড়ে ওঠে নতুন ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। পরিবেশকর্মীরা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে মাত্র দেড় মাসে উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় শত শত নতুন ঘরবাড়ি নির্মিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গত শনিবার সার্কিট হাউসে বিশেষ সভায় বাঁকখালী নদী উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে।”

গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশ দেয়, আগামী চার মাসের মধ্যে নদীর সব দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে এবং ছয় মাসের মধ্যে নদীটিকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করতে হবে। একইসঙ্গে নদীর জমি ইজারা বাতিল, ম্যানগ্রোভ বন পুনঃস্থাপন এবং নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে, বাঁকখালী নদীর জায়গা উদ্ধারের নামে স্থানীয়দের খতিয়ানভুক্ত জায়গায় বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে মানববন্ধন করে অভিযোগ তুলেছেন উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। 

ওই এলাকার শাহাদত হোসেন বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ কে বলতে চাই, আগে খতিয়ানভুক্ত জায়গার প্রকৃত মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। সীমানা নির্ধারণ করে তারপর উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হোক। এতে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।”

ঢাকা/তারেকুর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ উদ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • ডুবচরে আটকা পড়া ‘বোগদাদিয়া ৭’ এর যাত্রীরা নিরাপদে
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা
  • সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা