উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদে চবি ছাত্রীদের বিক্ষোভ
Published: 1st, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দুইদিন ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি ও চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতারের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
আরো পড়ুন:
বাকৃবিতে ছাত্রদল-যুবদলের হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে রেললাইন অবরোধ
‘আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, কেন ক্ষমা চাইব?’
এ সময় তারা ‘আহত ১৫০০, হয়ে গেল ২০০’, ‘আমার ভাই আইসিইউতে, ভিসি গেছে নিয়োগ বোর্ডে’, ‘আমার ভাই কোপ খাই, প্রশাসন ঘুমায়’, ‘প্রশাসন হায় হায়, নিরাপত্তার খবর নাই’, ‘ম্যাঙ্গবার ভিসি, কল পেলে খুশি’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী বলেন, “দেশের চারটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটার উপাচার্য হলেন তিনি। অথচ তার বক্তব্য দেখা গেল, পুরোটা জোবরাবাসির পক্ষে। চবি মেডিকেলের তথ্য মতে, ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। কিন্তু তিনি বলছেন মাত্র ২০০ জন আহত। উনি কি গণনা ভুলে গেছেন? আমার ভাইয়েরা জোবরাবাসির হাতে রক্তাক্ত হচ্ছে, আর তিনি এসি রুমে বসে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি মারা যায়, তবে কার জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেবেন? তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন, অথচ আমাদের ভাইয়েরা টানা ৬ ঘণ্টা জোবরাবাসির হাতে মার খেলেও কোনো সহায়তা আসেনি।”
তিনি আরো বলেন, “গতকাল (রবিবার) সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য স্যার বলেছেন- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাকে চার-পাঁচবার কল দিয়েছেন, আর এতেই তিনি খুশি। কিন্তু আমাদের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা তার দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।”
সানজিদা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা উপাচার্যের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের ভাইদের খোঁজ না নিয়ে তিনি রুমে বসে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। আর যাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন, সেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিয়েছে? বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসেছিল ৬ ঘণ্টা পর।”
রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত ১০টার সংবাদ সম্মেলনে চবি উপাচার্য বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ আজ (রবিবার) হয়েছে, আগামীকালও হবে ইনশাআল্লাহ। এটা হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে এক্সপার্টরা আসছেন। তারা এখানে এসে আটকা পড়ে আছেন। তারা যেতেও পারছেন না এবং আমাদের প্রার্থীরাও চলে এসেছেন। আমি এখানে একা বসে আছি। আমার পুরো টিম ঘটনাস্থলে কাজ করেছে।”
তিনি বলেন, “নিয়োগের ব্যাপারটা কালকেও (সোমবার) হবে। আমি আজ (রবিবার) বাতিল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে এক্সপার্টরা চলে আসায় আমরা বাতিল করতে পারিনি। এছাড়া এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচসহ আরো বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে।”
তিনি আরো বলেন, “দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ডিন ও প্রক্টরসহ আমাদের নিজস্ব বিগ সিকিউরিটি ফোর্স নিয়ে সকালে এলাকায় গিয়েছি। গিয়ে দেখি থমথমে অবস্থা। আমাদের বলা হলো, ওই বাড়িতে পাঁচজন আটকা পড়ে আছে। গিয়ে দেখলাম কেউ নাই, সব গুজব। অন্য আরেকটা বিল্ডিংয়ে গেলাম সেখানেও একই অবস্থা।”
“আমি সকালে এলাকা থেকে ঘুরে আসার পর টেলিফোন করার চেষ্টা করেছি। হাটহাজারী থানা থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি এবং কোনো সময়ও পাই না। কিন্তু আমি অবাক হয়েছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতো ব্যক্তিত্ব আমার সঙ্গে চার-পাঁচবার কথা বলেছেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব দুই-তিনবার আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার মতো একটা তুচ্ছ ব্যক্তির অনুরোধে সিভিল প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, ডিআইজি ও গোয়েন্দা সংস্থা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, আমি তাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা জানাই,” -যোগ করেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেছেন, “আমরা ভালো পরিবেশ গড়ে তুলেছি ক্যাম্পাসে। সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে ভালো চলছে। হার্ভাড, এমআইটির স্কলাররা এখানে সেমিনার দিচ্ছে।”
উপাচার্যের এই বক্তব্যে বিস্ময় ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের অনেকে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য আম র ভ ই রব ব র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।