নীলফামারিতে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
Published: 3rd, September 2025 GMT
নীলফামারিতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে হাবিব নামে এক শ্রমিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। এছাড়াও আরো অনেক শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নীলফামারী জেলার শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য শেখ মুজিবকে জানা ‘বাধ্যতামূলক’
বিভিন্ন দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের ফের মহাসড়ক অবরোধ
বিক্ষোভ সমাবেশে তারা ‘সেনাবাহিনী শ্রমিক মারে, ইন্টেরিম কি করে’, ‘শ্রমিক মরে রাজপথে, ইন্টেরিম কি করে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, শ্রমিক হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশ থেকে রাকিব রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “যখনই শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলা হয় তখন তাদের ছেঁটে ফেলা হয়। তারা তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় দাঁড়ালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলিবর্ষণ ও নির্যাতন করে। ফলে আমাদের একজন ভাই গতকাল নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) এই ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
এ সময় তিনি ইন্টেরিম সরকারের কাছে শহীদ শ্রমিকের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
সজিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর শ্রমিক হত্যা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো এখনো কেন জনগণের টাকায় কেনা গুলি আমার ভাইদের উপর করা হচ্ছে? গতকালের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
রন্জন বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি যারা সচল করে রেখেছে, তাদের ওপর কিভাবে সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্মম নির্যাতন করেছে, তা আমরা দেখেছি। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় শোষক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সবসময় তাদের ব্যবহার করে আসছে।”
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হাবিব ভাইকে হত্যা করা হয়ছে। সরকার সবসময় মালিক পক্ষকে গুরুত্ব দেয় আর শ্রমিকদের অবহেলায় ফেলে রাখে। শ্রমিকদের দাবি কখনোই অযৌক্তিক ছিল না। শ্রম আইন অনুযায়ী তারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য নেমেছিল।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।