লাশ পোড়ানো ইসলামের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই: ইসলামী আন্দোলন
Published: 6th, September 2025 GMT
ফরিদপুরের গোয়ালন্দে লাশ পোড়ানোর ঘটনার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই মন্তব্য করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এতে প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক উল্লেখ করে তাদের কর্মকাণ্ড তদন্ত করে দেখার দাবিও জানিয়েছে দলটি।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্ব) দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, “মাজারকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে তা পুরোটাই অজ্ঞতাজনিত বর্বরতা। এর সাথে ইসলাম, ইসলামী রাজনীতি ও ইসলামী চিন্তার কোনো সম্পর্ক নাই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই বর্বরতার সাথে সম্পৃক্ত মূল পরিকল্পনাকারী ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।”
গাজী আতাউর রহমান বলেন, “এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে বারংবার সম্পৃক্ত করা হয়েছে। জনমনে যে বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা স্থানীয় প্রশাসন জানতো। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা তদন্ত করে দেখতে হবে।”
দলটিন মুখপাত্র বলেন, “ইসলাম দাওয়াহ নির্ভর একটি ধর্ম। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলে ইসলাম বিস্তৃত হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা, জ্ঞান ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে। ভিন্নমতের সাথে সহ-অবস্থান করেই ইসলাম এই অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। ভিন্নমতের সাথে যুক্তি-তর্ক ও বোঝাপড়ার মধ্যদিয়েই এখানে ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে। ফলে এই ধরনের আচরণ কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না।”
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরের লাশের প্রতিও সম্মান দেখিয়েছেন। সেখানে মুসলমান বলে দাবিদার কারো লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে যে বর্বরতা তা ইসলামের চিন্তা কাঠামোতে কল্পনাও করা যায় না।যারা ইসলামের মতো একটি মহান ধর্মের নাম করে এটা করেছেন তারা মেজাজে শরীয়াহ ও মাকাসিদে শরীয়াহ সম্পর্কে জানেন না। তারা ইসলামের দাওয়াতি নীতিমালা জানেন না। তারা শত্রুর সাথে ইসলামের আচার-রীতি সম্পর্কেও জানেন না। আবার যারা ইসলামের নাম করে মাজার বানিয়ে সেখানে ইসলাম অসমর্থিত কর্মকাণ্ড করেন তারাও ইসলামের মূল বার্তা সম্পর্কে জানেন না। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ দুইটা উচ্ছৃঙ্খল দলের বাড়াবাড়ি ও উগ্রতা ঘটনাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক ইসলাম চর্চার চরিত্র, ধরন ও প্রকৃতির সাথে এর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নাই।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ তাই এখানে ধর্মীয় বিষয়াবলীতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য গ্রহণযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। এই সমস্যাটা যদি সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমাধান করা যেতো তাহলে পরিস্থিতি এতদূর গড়ায় না। তাই প্রথমত এই ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং ধর্মীয় বিষয়াবলীতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য গ্রহণযোগ্য কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম র যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)