হারারেতে রাজার জাদুতে শ্রীলঙ্কা কুপোকাত
Published: 6th, September 2025 GMT
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এক অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়লেন জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিনি শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিয়ে রেকর্ডবুকে নাম তুললেন দেশের সেরা বোলিং ফিগারের মালিক হিসেবে। শুধু তাই নয়, দারুণ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৮০ রানে অলআউট করে তুলে নিয়েছে এক দারুণ জয়।
আজ শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টস জিতে প্রথমে বোলিং নেয় জিম্বাবুয়ে। শুরু থেকেই অতিথি শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও ব্র্যাড ইভান্স। তবে মূল ধাক্কাটা দেন সিকান্দার রাজা। অভিজ্ঞ ডানহাতি স্পিনার একাই তুলে নেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। কামিন্দু মেন্ডিস, লঙ্কান অধিনায়ক চরিত আসালঙ্কা ও শেষদিকে দুশমান্থ চামিরাকে বোল্ড করে শ্রীলঙ্কাকে পুরোপুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দেন।
আরো পড়ুন:
শারজাহতে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক কীর্তি, বাংলাদেশের পরেই অবস্থান
বিসিবি নির্বাচনে তিন সদস্যের কমিশন গঠন
রাজা তার চার ওভারের স্পেলে দেন মাত্র ১১ রান, আর তুলে নেন ৩ উইকেট। এটাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলিং রেকর্ড।
রাজার ঘূর্ণি আর ইভান্সের গতির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ৮০ রান তুলেই। শুধু যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ তাই নয়, সামগ্রিকভাবে এটি শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন টি–টোয়েন্টি দলীয় স্কোরও বটে।
ব্যাট হাতে লঙ্কানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান আসে কামিল মিশারার ব্যাট থেকে, ২০ রান। আসালঙ্কা ও দাসুন শানাকা ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি।
জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ে ৫টি উইকেট হারালেও ১৪.
শ্রীলঙ্কার দুশমান্থে চামিরা ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হন রাজা।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের সেরা বোলিং (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে):
সিকান্দার রাজা – ৩/১১ (আজ)
ব্র্যাড ইভান্স – ৩/১৫ (আজ)
রে প্রাইস – ২/৯
ব্লেসিং মুজারাবানি – ২/১৪
রিচার্ড নগারাভা – ২/১৯।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)