ডাকসু নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
Published: 7th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
মহানবীর (সা.) অনুপম জীবনাদর্শ বিশ্বে শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে
‘আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না, নির্বাচন দিয়ে চলে যান’
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পতিত ও পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যখন দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের বিচার যত দ্রুততর হচ্ছে, তারা তত বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এটি কেবল আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। তারা দেশের সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য সব শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে।’
শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার মনে করে দেশের স্বার্থে জনগণের সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা হতে পারে। গত বছর দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। তাই এ বছরও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আগেভাগেই সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দেশের সব ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা শীঘ্রই এসব সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হওয়া, জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্য পুনরায় দৃঢ় রাখা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সুসংহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
নির্বাচনের সময় কোথাও নিরাপত্তাজনিত কোনো অঘটন যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝটিকা মিছিল ও বেআইনি সভা-সমাবেশ মনিটরিং জোরদার এবং যারা এর পেছনে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বাসস
ঢাকা/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।