বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলের মৃত্যুদণ্ড
Published: 14th, September 2025 GMT
সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে রেজাউল করিম লাবুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামিকে ৩ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আসামির উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে স্বামীকে হত্যার পর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
বরগুনায় ডোবায় মিলল গলা কাটা মরদেহ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রেজাউল জেলার সলঙ্গা থানার কৈমাঝুরিয়া গ্রামের নিহত ইদ্রিস আলীর ছেলে। কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সাজাপ্রাপ্ত রেজাউলের সৎ মা মোছা.
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩ মার্চ রাতে নিজের ঘর থেকে নিখোঁজ হন ইদ্রিস আলী। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। একদিন পর ৪ মার্চ দুপুরে অলিদহ গ্রামের হাফিজুর রহমানের পুকুরে গলায় ও পায়ে রশি পেঁচানো অবস্থায় ইদ্রিস আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাদী রেজাউল, তার সৎ মা রেনুকা বেগম ও স্ত্রী ইসমত আরা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক আজ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, “ইদ্রিস হত্যা মামলাটি তদন্তকালে বাদী রেজাউল, তার সৎ মা রেনুকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড।”
ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আস ম র জ উল হত য র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।