রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
Published: 17th, September 2025 GMT
পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার বেশি গরমিল পাওয়া গেছে। কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংক বুক বা লেজারে নগদ অর্থ দেখিয়েছে ৯১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তবে ব্যাংক স্টেটমেন্টে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির হিসাবের সঙ্গে ব্যাংক স্টেটমেন্টের পার্থক্য পাওয়া গেছে ৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
এদিকে, বিমা কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে এজেন্টের কাছে পাওনা হিসেবে ২৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দেখিয়ে আসছে, যা আদায়যোগ্য বলে মনে হয়নি। এরপরেও ওই ফান্ডের সম্ভাব্য লোকসানের বিপরীতে আইএফআরএস-৯ অনুযায়ী কোম্পানিটি সঞ্চিতি গঠন করেনি।
এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ব্যাংকে দেখানো ৬৫ লাখ টাকার হিসাবগুলো দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন না করায় নিস্ক্রিয় (ডরমেন্ট) হয়ে গেছে। তবে যাচাই-বাছাই করে ওইসব হিসাবে ৩০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৩৫ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছে।
রূপালী লাইফ থেকে কর্মীদেরকে অগ্রিম বেতন ও মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও মোবাইলের জন্য অগ্রিম ২১ লাখ টাকা প্রদান করেছে। কিন্তু এই অগ্রীম প্রদানকৃত হিসাব দীর্ঘদিন ধরে একই অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন সমন্বয় করা হয়নি। তারপরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই অগ্রিম আদায় বা সমন্বয় নিয়ে সম্ভাব্য লোকসানের বিপরীতে কোম্পানি কোন সঞ্চিতি গঠন করেনি।
ঢাকা/এনটি/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ