নাহিদ ইসলামের সাফ কথা, ‘নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না’
Published: 19th, September 2025 GMT
জামায়াতের ইসলামীর নেতৃত্ব চলমান যুগপৎ আন্দোলনে কেন নেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি), সে বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
দুই দিন ধরে নানা গুঞ্জনের মধ্যে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নাহিদ ইসলাম সাফ জানিয়ে দিলেন, দুই কক্ষের সংসদ তারা চান; তবে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চান না।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক
সংবিধান সংশোধনসহ সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: মামুনুল হক
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। একই সঙ্গে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না। এর বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর এবং জবাবদিহিতার জন্য কার্যকর উচ্চকক্ষ চাচ্ছি। ফলে সেটাকে নিশ্চিত করেই যেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে আমরা এই মুহূর্তেই কোনো জোটভিত্তিক চিন্তাভাবনা করছি না।”
তিনি বলেন, “ফলে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে যে যুগপৎ আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনে এনসিপি নেই।”
এদিন রাজধানীর মিন্টো রোডে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এনসিপির এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে খোলামেলা জানিয়ে দিলেন তিনি।
নিজেদের লক্ষ্যে অটুট থাকার বিষয়টিও পরিষ্কার করেন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “অন্য সব দল থেকে আমরা আলাদা। কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারছি না বলেই আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক দল। আমরা বিএনপি পছন্দ করি না, জামায়াতে ইসলাম সমর্থন করি না, অন্য দলগুলোকেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মনে করছি না।”
“এ কারণেই আমরা সবাই মিলে নতুন একটা দল করেছি। ফলে আমরা আমাদের নিজেদের দল করব, নিজেদের পায়ে দাঁড়াব, এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা কারো সঙ্গে যাব কি না, সেটা আমাদের সেকেন্ডারি বিষয়। আমরা আমাদের পথচলায় এগিয়ে যাব। কেউ যদি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তাদের স্বাগত জানানো হবে,” বলেন নাহিদ ইসলাম।
এনসিপিকে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন, তাদের দলের একটি স্বতন্ত্র লক্ষ্য ও আদর্শ রয়েছে। সেই লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে তারা জনগণের কাছে যাবেন।
“আমরা নিজেদের মাটি শক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হব। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ফলে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আমরা জোটে যাব কি না, তাহলে সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান হলো- এনসিপি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করবে, নিজের রাজনীতি করবে,” যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।
দেশব্যাপী শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “দ্রুত সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তার করার নির্দেশনা দিয়েছি। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই আমাদের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি গঠন হবে। সমন্বয়কারী কমিটি থেকে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তর হবে।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা এবং নতুন সংবিধানের জন্য এনসিপি আগামী দিনে কর্মসূচি নেবে। আমরা জুলাই পদযাত্রায় যেরকম জেলা সদরভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েছিলাম, এবার আমরা উপজেলাভিত্তিক কর্মসূচি নেব। আমরা প্রত্যেকটা উপজেলায় যাব। ইতোমধ্যে ‘উঠান বৈঠক’ নামে একটি কর্মসূচি চলমান আছে গ্রাম এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে। আমরা এবার উপজেলাভিত্তিক কর্মসূচিতে যাব।”
দলের নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “নিবন্ধনের বিষয়টিও আমাদের জানানো হয়েছে। নিবন্ধন পেতে যাচ্ছি। প্রতীকের বিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি। আমরা যখন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন তারা কোনো আইনে যুক্তি দিতে পারেননি; বলেননি কেন শাপলা প্রতীক দেওয়া যাবে না। ফলে আমরা আশা রাখছি, শাপলা প্রতীক পাব।”
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রস্তাবনা অনুযায়ী ‘দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের’ বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এর নিম্নকক্ষ হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এবং উচ্চকক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত গ্রহণযোগ্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হবে। তবে দুই কক্ষেই ভোটের আনুপাতিক হারে আসন চায় জামায়াতসহ সাতটি দল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির ঘোরতর বিরোধী; এনসিপিও তা চায় না। ফলে ঐকমত্য কমিশনও বিষয়টি নিয়ে একটি সুরাহা দিতে পারছে না। এই টানাপোড়েনের মধ্যে পিআরের পক্ষ-বিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো মূলত মাঠপর্যায়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
নিম্নকক্ষে পিআরের দাবিতে আন্দোলনকে ভালো চোখে দেখছে না বিএনপি। এদিন রাজধানীর তোপখানা রোডে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা.
হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “কিন্তু মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ না। আপনি ইচ্ছা করলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আপনারা (আলোচনা সভায়) এখানে বসে নির্বাচনের জন্য সুন্দর ব্যালট বাক্স নিয়ে এসেছেন, আপনাদের নির্বাচন কমিশন আছে, আপনাদের প্রার্থী আছে, সরাসরি ভোট হবে।”
জামায়াতের নেতৃত্বে সাতটি দল পিআর পদ্ধতি চালু করাসহ যেসব দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে, তার মধ্যে রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
জামায়াত ছাড়া এসব দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের নামা দলগুলো হলো: ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও খেলাফত আন্দোলন।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প ন হ দ ইসল ম ন ম নকক ষ আম দ র প এনস প র র জন য লক ষ য দলগ ল ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ বারিধারায় দিনব্যাপী ‘প্রথম আলো আনন্দ মেলা’
২ / ১২জাদু প্রদর্শন