দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে সবকিছুই গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে। পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের কোনো বর্জ্যব্যবস্থাপনা নেই; নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সমুদ্র ও নদীর পানি দূষিত করছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। পর্যটন ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড়, নদী, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও উপকূলীয় প্যারাবন ধ্বংস হচ্ছে। প্যারাবন কেটে তৈরি হচ্ছে চিংড়িঘের।

কক্সবাজারকে বাঁচাতে হলে সব দপ্তরের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের একটি তারকা হোটেলে ‘কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল। প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান মো.

সালাহউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদ পেয়ার, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা তাওসীফ শরীফ ও কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক শীতল পাল।

বেলার ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মামুন খান কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। সঞ্চালনা করেন বেলা চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক মনিরা পারভিন।

মামুন খান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই কক্সবাজারের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে। বেলা গত ২৬ বছরে পরিবেশ সুরক্ষায় ২৩টি মামলা করেছে। তারপরও পাহাড় কাটা, প্যারাবন উজাড়, সৈকত ও নদীর বালিয়াড়ি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, এখনো প্রতিদিন পাহাড় দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। বাঁকখালী নদী ও সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দোকানপাট হচ্ছে, কিন্তু বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি সৈকতের কবিতা চত্বর এলাকায় রাতারাতি শতাধিক দোকান গড়ে তোলা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ উচ্ছেদ করলেও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেওয়া কার্ড দেখিয়ে আবার দোকান বসানো হচ্ছে। ওই এলাকার ঝাউবনে ছাতা-চেয়ার বসিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনের বেলায় আড্ডা দেয়। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর সমুদ্রে গোসল করতে নামলেও পর্যটকদের টিকিট কাটতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সৈকতের পরিবেশ রক্ষা করতে হলে কার্ড–বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। সৈকতে ভাজা মাছ বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বর্তমানে ৫৪০ জন আলোকচিত্রী রয়েছেন, কিন্তু কারও নিজস্ব কার্ড নেই—অন্যের কার্ড ভাড়া নিয়ে কাজ করছেন। এত দিন যাঁরা এসব বাণিজ্য করেছেন, তাঁদের এখন ভাসমান ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা তাওসীফ শরীফ বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি আন্তরিকভাবে সৈকতের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চলছে। সৈকতে স্থাপন করা ডাস্টবিনগুলো চুরি হয়ে যায়, এটিও বড় সমস্যা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের ৯৮ শতাংশেরই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। এসটিপি ছাড়া নতুন হোটেল নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, সোনাদিয়ায় নতুন করে প্যারাবন কাটার ঘটনা দেখা গেছে। এর আগেও কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের তৈরি হয়েছে, যার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। নতুন উজাড়কারীদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের সর্বাঙ্গে এখন ব্যথা। কেউ পাহাড়ের নাম করে, কেউ সমুদ্রের নাম করে এই জেলার প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করছে। সৈকতের ইসিএ এলাকায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরই পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বহুতল ভবন বানিয়েছে, এরপর বেসরকারি উদ্যোক্তারাও প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

সভাপতি সরওয়ার কামাল বলেন, দীর্ঘদিনেও শহরে কেন্দ্রীয় এসটিপি স্থাপন সম্ভব হয়নি। হোটেল ও বাসাবাড়ির বর্জ্য সরাসরি নদী ও সাগরে ফেলা হচ্ছে। সেই দূষিত পানিতেই পর্যটকেরা গোসল করছেন। তিনি নাজিরারটেক এলাকায় সরকারি জমিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরির প্রস্তাব দেন।

সহকারী বন সংরক্ষক শীতল পাল বলেন, চকরিয়ায় তিন লাখ চারা রোপণ করা হচ্ছে, তবে জমির উপযুক্ততা না থাকায় সুন্দরীগাছ লাগানো যাচ্ছে না। সোনাদিয়ায় প্যারাবন দখল হলেও বন বিভাগ কিছু করতে পারছে না, কারণ বেজা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ওই জমি এখনো বন বিভাগের কাছে ফেরত আসেনি।

কউক চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন বলেন, কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী বছরের জুনে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত হবে। এর আগে ডিসেম্বরে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে। তিনি জানান, কউকের অনুমোদন ছাড়া এখন কোনো বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

সভায় আরও বক্তারা মহেশখালীর সোনাদিয়ায় নতুন করে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণ, উখিয়া ও চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়, রামুতে হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে ফলের বাগান তৈরিসহ সেন্ট মার্টিনে প্রবাল-শৈবাল আহরণ ও মাতারবাড়ীতে জলাশয়-কৃষিজমি ভরাট বন্ধের দাবি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প য র বন র পর ব শ বন ব ভ গ ধ ব স কর ব যবস থ স রক ষ স কত র বর জ য সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

৭ গোলের ম্যাচে হারল বাংলাদেশ

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে হার মেনেছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হংকংয়ের বিপক্ষে ৭ গোলের থ্রিলার ম্যাচে হার মেনেছে ৪-৩ ব্যবধানে। বাংলাদেশ শুরুতে লিড নিয়ে ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। এরপর অন্তিম মুহূর্তে ৩-৩ এ সমতা ফেরানোর পরের মিনিটেই গোল হজম করে হার মানে।

 

আরো পড়ুন:

হামজার গোলে প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ১, হংকং ১

হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশে নেই ফাহামিদুল-সমিত-জামাল

বিস্তারিত আসছে...

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ