পঞ্চগড়ে বিজয়ের দিনে বিষাদের ছায়া
Published: 1st, December 2025 GMT
১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বরের কথা। ভোর থেকে পঞ্চগড় চিনিকলের দিকে এগোতে থাকেন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। সঙ্গে ১২টি ট্যাংক। চিনিকল এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের শক্ত ঘাঁটি ঘিরে শুরু হয় দুই পক্ষের তুমুল লড়াই। পিছু হটে পাকিস্তানের সেনারা। মুক্ত হয় পঞ্চগড়।
বিজয়ের আনন্দে সবাই যখন উল্লসিত, তখন ঘটে এক বিষাদের ঘটনা। চিনিকল এলাকার গ্যারেজের সামনে পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখে এগিয়ে যান তরুণ যোদ্ধা হারুন অর রশীদ। স্টেনগান কাঁধে নিয়ে দৌড়ে যান পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে। সে সময় পাশের একটি বাংকারে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা পাকিস্তানি সেনা গুলি করতে থাকেন। ঝাঁঝরা হয়ে যায় হারুনের বুক। বিজয়ের মুহূর্তে এমন ঘটনায় মর্মাহত হয়ে পড়েন তাঁর সহযোদ্ধারা। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের উত্তর প্রধানপাড়া এলাকায়।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নাজমুল হকের লেখা ‘পঞ্চগড় জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় পঞ্চগড়ের মধুপাড়া কোম্পানি কমান্ডার মাহবুব আলমের লেখা ‘গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে’ বইয়ে আছে সেই দিনের কথা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে ও ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পঞ্চগড় মুক্ত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সড়কপথে পঞ্চগড়ের দিকে এগোতে থাকে। ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা পঞ্চগড় দখল করে নেয়।
যুদ্ধে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে যান। আশ্রয় নেন মাগুরমারীতে। তাঁরা অমরখানা এলাকার চাওয়াই নদের সেতু ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে দেন। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ের সর্ব–উত্তরের এলাকা তেঁতুলিয়ায় ঢুকতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়কাল তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক ডাকবাংলোতে বসে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পঞ্চগড় ছিল ৬ (ক) সেক্টরের আওতাধীন। এ অঞ্চলে মোট ৭টি কোম্পানির অধীন ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। জুলাই মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ বাড়তে থাকে। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে সফল হতে থাকে।
সেই সব দিনের কথা স্মরণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাসের যুদ্ধের পর মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে অমরখানা, জগদলহাট, শিংপাড়া, তালমা, পঞ্চগড় সিও অফিস আটোয়ারী ও মির্জাপুর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। অবশেষে ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় চিনিকল এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। ওই দিন তাঁরা পঞ্চগড় মুক্ত হওয়ায় বিজয় উল্লাস করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একজন সহযোদ্ধার মৃত্যু তাঁদের আনন্দকে বিষাদের ছায়ায় ঢেকে দেয়।
সহযোদ্ধাকে স্মরণ করে এত বছর পর পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়খুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো যুদ্ধের সময় আমাদের অনেক সহযোদ্ধাই মারা গেছেন। কিন্তু ২৯ নভেম্বর বিজয়ের মুহূর্তে হারুন অর রশীদের মৃত্যুটা ছিল খুবই দুঃখজনক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ র সময় সহয দ ধ ব জয় র চ ন কল
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে ‘রোড শো’ করবে বিএনপি, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ‘বিজয় মশাল রোড শো’। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।
আরো পড়ুন:
বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া
ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়: ফখরুল
তিনি জানান, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরে বিজয় মশাল রোড শো এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বিভাগে মশাল বহন করবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন জুলাইযোদ্ধা।
১৬ ডিসেম্বর ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিজয় মশাল রোড শো। এতে পরিবেশিত হবে বিএনপির থিম সং, 'সবার আগে বাংলাদেশ'।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বিজয় মশাল যাত্রা শুরু করবে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে একই দিন চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছাবে। বিজয় মিছিলের মশাল বহন করবেন ১৯৭১ সালের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০১৪ সালের একজন জুলাইযোদ্ধা। আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জনের আর ২০২৪ হলো দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।”
বিএনপি মহাসচিব জানান, দুই সপ্তাহের এই বিশেষ 'রোড শো' উদযাপনের সময় বিভিন্ন বিভাগের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের নির্বাচিত অংশ প্রচার, জাসাসের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শন হবে।
একইসঙ্গে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি।
তিনি জানান বিভাগ ঘুরে বিজয় মশাল সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। একইদিন ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে 'বিজয়ের মাসে বিজয় মশাল রোড শো'। বিজয় মাস উপলক্ষে এই বিশেষ কর্মসূচি ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচি উদযাপিত হতে থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ