Risingbd:
2025-12-01@03:34:26 GMT

শখের পুরুষ  

Published: 1st, December 2025 GMT

শখের পুরুষ  


বাসা থেকে বের হবার সময় রুমকি শুনতে পায় মেজো জায়ের সঙ্গে ছোট ননদের কী নিয়ে যেন ধুন্ধুমার লেগেছে। তার এই ননদের সামান্য শুচিবায়ু আছে, তার গোসলের মগ আর বালতি পর্যন্ত আলাদা থাকে। সম্ভবত সেটা নিয়েই ক্যাচাল। রুমকি চেষ্টা করে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে। ওদের চোখে পড়লেই জড়িয়ে যেতে হবে অহেতুক ঝামেলায়। এমনিতেই তার কলহ ভালো লাগে না, তাছাড়া আজ সে বেরুচ্ছে একজনের সঙ্গে দেখা করতে; সময় একেবারেই নেই। পা টিপেটিপে ডাইনিং দিয়ে বের হবার সময় সে শুনতে পায় জা তার বিখ্যাত হুমকি উচ্চারণ করছে আবার― ‘থাকবোই-না এই বাড়িতে, আসুক আজকে ফরহাদ, একটা হেস্তনেস্ত হবে’। 

ফরহাদ তার মেজো ভাসুরের নাম। প্রতিবার ঝগড়ার এক পর্যায়ে তার জা আলাদা হয়ে যাবার হুমকি দেয়, তখন শাশুড়ি বাধ্য হয়ে ননদকে চুপ করতে বলেন। ফরহাদ এ বাড়ির সবচেয়ে দায়িত্ববান ছেলে, তার উপার্জনের বড় অংশ এই বাড়ির জন্য ব্যয় হয়। সে তার বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাসায় উঠে গেলে নিশ্চয়ই মাসে মাসে এতগুলো টাকা মায়ের হাতে তুলে দিতে পারবে না চাইলেও। তাদের মফস্বল শহরটি হঠাৎ করে বিভাগীয় সদরে পরিণত হওয়াতে আর কোনো উন্নতি হোক না হোক, বাসাভাড়া বেড়ে তিনগুন হয়ে গেছে। দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়াও কম করে পনেরো-ষোলো হাজার টাকা, ইউটিলিটি ইত্যাদি মিলে যা খরচ পড়বে সেটা বেশ বড় অঙ্কের টাকা। তার বাচ্চাটা কিছুদিন পর স্কুলে যাবে। তখন ছোটবোনের কলেজের ফি আর বাবা-মায়ের ওষুধপত্রের খরচ সে দেবে কীভাবে? শাশুড়ি এসব ভেবে শেষ পর্যায়ে এসে ননদকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসেন সেখান থেকে। আদরের ছোট মেয়ে তখন নিজের ঘরে দরজা আটকে কান্নাকাটি করতে বসে। এই বাড়ির ঝগড়াগুলো মোটামুটি এই প্যাটার্নেই চলে। 

 
প্রায় সবার চোখ এড়িয়ে উঠানে এসেই রুমকি দেখতে পায় পেয়ারা গাছের নিচে জলচৌকিতে বসে পত্রিকা পড়ছেন শ্বশুর। তার একবার ইচ্ছা হয় একটু দাঁড়িয়ে দু’একটা কথা বলতে। থেমে গিয়েও সে ভাবে হাতে সময় কম, সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে হবে। শ্বশুরও শান্ত স্বভাবের মানুষ, তার কলহপ্রিয় মেজো জা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তিনিও গা বাঁচিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আদরের ছোট মেয়েকে ধমক দেওয়ার রেকর্ড তার নেই, আবার পরের মেয়েদের শাসন করতেও তার রুচিতে কুলায় না। এই বাড়িতে তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি হলেন এই ভদ্রলোক। পুরুষ মানুষের মধ্যে এত অপত্য স্নেহ খুব বেশি দেখেনি সে। শেষমেষ কিছু না বলে সাবধানে গেইট পেরিয়ে বের হয়ে আসে রুমকি।

রিকশা খুঁজে পেতে দেরি হবে বলে হাঁটতে শুরু করে মোড়ের দিকে। উলটো দিক থেকে একটা রিকশায় ফয়সালকে আসতে দেখে। প্রায় প্রতিদিনই সকালে বের হয় সে, ফেরে সন্ধ্যাবেলা। মাঝেমধ্যে দুপুরে এক দফা বাসায় এসে দুটি খেয়ে আবার বের হয়। অধিকাংশ দিন খেতেও আসে না। আজকে যে সে আসবে বলে যায়নি। রুমকির মন খারাপ লাগে। বাসায় আজকে তেমন ভালো কিছু রান্না হয়নি। কলমি শাক আর মাছের মাথা দিয়ে লাউয়ের তরকারি। বিয়ের আগে থেকেই সে জানে ওর এসব খাবার পছন্দ না। কিন্তু ইদানিং খাবার পছন্দ না হলেও সে কিছুই বলে না, চুপচাপ খেয়ে নেয়। একবার সে ভাবে বাসায় ফিরে যাবে, গিয়ে ফরহাদকে ভাত বেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকবে। এই একান্নবর্তী পরিবারে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী রান্নাবাড়া করার সুযোগ নেই বললেই চলে। 

আগে যখন রুমকি চাকরি করতো না, রান্নার দায়িত্ব তার উপর ছিল। স্কুলের চাকরিটা হবার পর থেকে দুপুরের রান্না আবার শাশুড়ির ঘাড়ে গিয়ে পড়েছে। সে শুধু ভোরে উঠে গোটা তিরিশেক রুটি বেলে আলু কিংবা পেঁপে ভাজি করে নিজেরটা টিফিনবক্সে নিয়ে স্কুলের দিকে ছোটে। তার মেজো জা ঘরকন্নার কাজে অংশ নেয় না। তার স্বামী যেহেতু বাজার সদাই করে, বাসার সকল ইউটিলিটি বিল এমনকি ইন্টারনেট বিল পর্যন্ত দিচ্ছে তাহলে সে কেন গৃহস্থালি কাজ করবে? এই হচ্ছে তার যুক্তি। যুক্তি নেহাত মন্দ নয়। শ্বশুরের পেনশনের পরিমাণ কম, বড় ভাসুর বিদেশে থাকেন, নিয়মিত কিছু পাওয়া যায় না তার কাছ থেকে। তাই পুরো পরিবারই আসলে ফরহাদের উপর নির্ভরশীল। ফয়সালের রোজগারও নিতান্ত অল্প, সে স্কুলের চাকরি পাবার আগে আসলেই তারা দু’জন সম্পূর্ণ অন্যের অন্নে প্রতিপালিত ছিল, সেকথা তো ভুল নয়। 

যদিও খাওয়া হালাল করে নেবার জন্য সে তিনবেলার রান্নার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করেছে অনেকদিন। কিন্তু সে হিসাব তার জায়ের কাছে নেই। তার বাচ্চা এখনো স্কুলে যায় না, বেলা দশটায় ঘুম থেকে উঠে টেবিলে নাশতা রেডি পাওয়াটাকে সে তার প্রাপ্য বলেই ভাবে। ছুটির দিনে রুমকিরও মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করে বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে। কিন্তু সে উঠে রুটি না বানালে শাশুড়িকেই উঠতে হবে। বেচারা বয়স্ক মানুষ, আথ্রাইটিসের ব্যথায় কাবু। তাই রুমকি স্কুল না থাকলেও সকালেই উঠে যায়। যেমন আজকেও উঠেছে। রুটি বেলে সুজির হালুয়া বানিয়ে টেবিলে দিতে দিতে দেখেছে ফয়সাল চা বিস্কুট খেয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তখনও খুব ইচ্ছা হচ্ছিল ডেকে বলে নাশতা করার কথা। কিন্তু কিছুই বলেনি। নতুন নতুন এই বাড়িতে আসবার পর একদিন পেছন থেকে খেতে ডেকেছিল সে তার বরকে, তখন জা খুব হেসে ফাজলামির সুরে বলেছিল, ‘আহা! কত্ত প্রেম’। সে খুবই লজ্জা পেয়েছে শাশুড়ি আর ননদের সামনে। শ্বশুরও তখন বসার ঘরেই ছিলেন, টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। 


বাসা থেকে দূরে যেতে যেতে রুমকি ধীরে ধীরে শ্বশুরবাড়ি ভুলতে শুরু করে। সে ভেবে নেয়, সে আগের মতো বাঘমারা নিবাসী, আকুয়া ওয়ায়্যারলেস মোড়ের এক পুরনো আমলের বাসার একান্নবর্তী পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেকার ছোট ছেলের ‘হাইট্যা আওয়া বউ’ নয়। সে নয় কারো পুত্রবধূ বা ভ্রাতৃবধূ। সে নয় কারো টিচার বা মিস। সে শুধু রুমকি, কলেজে পড়া, চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে রোজ আশা নিয়ে সকালবেলা একটি নতুন দিন শুরু করা চঞ্চল উচ্ছ্বল রুমকি, তার বয়স সবে আঠারো, তার পরনে এখনো মুমিনুন্নিসা কলেজের সাদা কামিজ আর লাল ওড়না।  


নতুন বাজার এলাকায় উঁচু উঁচু অনেক দালানের একটির তিনতলায় বসে কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় রুমকি। আজকে দ্বিতীয় দিন সে এলো এখানে। তার আর ফয়সালের যে আয় তাতে নিজেদের খরচ মেটানোর পর, মায়ের হাতে সামান্য কিছু তুলে দেওয়ার পর অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। দামী কফিশপে বসে কফি খাওয়া তাদের কাছে বিলাসিতা। ফয়সালকে বাদ দিয়ে ভালো কিছু খেতে তার মন চায় না। তবুও এখানে সে আগে আরেক দিন এসেছিল স্কুলের বান্ধবী ছন্দার সঙ্গে। ছন্দা তার বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কিছুদিন এই শহরে ছিল। স্কুলের রিউনিয়ন উপলক্ষ্যে খোলা গ্রুপে কেউ তাকে অ্যাড করে দিয়েছিল, সেই থেকেই আবার যোগাযোগ। বহুদিন পর সে এই শহরে এসেছিল কিসের যেন শ্যুটিং করতে। একটা টিভি চ্যানেলে কাজ করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রোডিউসার হিসেবে তাকে সারা বাংলাদেশই ঘুরতে হয়। রুমকি টিভি দেখে না বহুদিন। ছন্দার ফেইসবুকে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সেলিব্রিটির সঙ্গে তার ছবিটবি দেখেছে, সত্যি কথা হলো সেইসব সেলিব্রিটিদের নামও সে জানে না, শুধু বিজ্ঞাপনে দেখা যায় বলে চেহারাগুলো পরিচিত। 

ছন্দার সঙ্গে তার জীবনের আকাশপাতাল ফারাক। কয়েক দফা কথাবার্তা হবার পরে সে যা বুঝেছে তা হলো, ছন্দা এখনো আগের মতোই আছে, সব ব্যাপারেই তার প্রচুর অভিযোগ, স্বামীর সঙ্গে একটুও বনে না কিন্তু সে ফেইসবুকে প্রচুর জ্বালাময়ী নারীবাদী পোস্ট দিলেও জামাই ছাড়বে না। কারণ একটা ‘সার্টেন লাগজারিতে’ থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তার বর্তমান জীবনের ব্যাপারে জেনে সে ঠোঁট উলটে বলল, ‘এইসব আকাইম্যা জামাই রাইখা ফয়দা কী? গাড়ি-বাড়ি টাকা-পয়সা কিছুই নাই, উলটা এর ফ্যামিলির জন্য রাইন্ধা হাড় কালি করতাছস’। সরকারি কলেজে কেমিস্ট্রি পড়েছে সে, নারীবাদের অতশত সে বোঝে না, বুঝতে চায়ও না। তার কাছে আত্মসম্মানবোধই একমাত্র চিন্তা করার বিষয়। আম্মা যেদিন বলল, ফয়সালকে বিয়ে করলে যেন আর বাসায় না ফেরে সেদিনের পর থেকে বাঘমারার পথ সে আর মাড়ায়নি। তার মেজো জা যেদিন ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড পালটে দেওয়াতে ছোট ননদের সঙ্গে ঝামেলা লাগার এক পর্যায়ে মনে করিয়ে দিলো ইন্টারনেটের বিল তার স্বামী দেয় আর ননদও বলল, ‘আমার ভাইই দেয়, তুমি নিজে তো দাও না’― সেদিনের পর সে ওই বাড়ির ইন্টারনেট লাইনও ব্যবহার করেনি। 

ছন্দার বরের মতো ফয়সাল তাকে চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়ে ‘বারোভাতারি’ বলে গাল দিলে সে অবশ্যই সেই মুহূর্তে ফয়সালকে ত্যাগ করে চলে যেতো, যদিও তার মায়ের বাড়িতে ফেরার উপায় নেই, অন্তত গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সার নিশ্চয়তার আশায় গোছানো সংসারে স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতো না। কিন্তু এসব কিছুই সে বলেনি ছন্দাকে। যার জীবন তার চয়েস, সে অন্যের সিদ্ধান্তকে অসম্মান করতে চায় না, করেও না। কিন্তু ছন্দার মতো মানুষেরা সবসময়ই এ কাজটা করতে থাকে। ‘কী দেইখা অরে বিয়া করলা!’ জাতীয় প্রশ্ন হরহামেশা করতে থাকে। কি আশ্চর্য, ওরা কি জানে না প্রেম অন্ধ? 
‘আচ্ছা, বিয়া যখন কইরাই ফেলছিস, থাক ওর সঙ্গেই। কিন্তু এই ফকিন্নি জীবনে আটকায় থাকবি ক্যান? দুই একটা শখের ব্যাডা রাখলেই ত পারস’। রুমকি ফেইসবুকে নিয়মিত ঢোকে না, তাই এই টার্মের সঙ্গে সে পরিচিতই ছিল না। সে ভাবছিল, এটা কি বিবাহিত পুরুষের সাইড চিক নারীরা প্রেমিককে বলে? কিন্তু সেটা বোঝাতে তো ‘শুগার ড্যাডি’ ব্যবহার করা হয়। শেষ পর্যন্ত ছন্দাই খোলাসা করল, ‘আরে ধুর, শুগার ড্যাডি অন্য জিনিস, আমি তো নিজেই রোজগার করি, ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে, নিজের গাড়ি আছে। শুগার ড্যাডি হিসাবে বুড়া ব্যাটা ধরার দরকার তো আমার নাই। আমি চ্যাংড়া পোলাপানের লগে প্রেম করি, যখন যার সঙ্গে ভালো লাগে তার সঙ্গে থাকি― এগুলিই আমার শখের পুরুষ’। 


রুমকি ছন্দার ব্যাখ্যা শুনে হেসে বলেছিল, ‘আমার তো তর মতন সামর্থ নাই রে।’ শুনে ছন্দাও হেসেছে। আত্মতৃপ্তির হাসি। তার কাছে নিজেকে ভালো রাখা কিংবা সুখী করার জন্য যা ইচ্ছা করাই স্বাধীনতা, স্বামীর মার খেয়েও তাকে ছেড়ে না এসে তারই গাড়িতে পরপুরুষের সঙ্গে ফূর্তি করাই নারীবাদ। তার কান এড়ায়নি যে ছন্দা ‘নিজের গাড়ি’ আছে বলতে একটুও দ্বিধা করলো না। ওর হিসেবে স্বামীর যা আছে সেটাও তার নিজের, আর নিজের যা আছে সেটুকু তার তো বটেই। রুমকি এতসব ভাবার অবকাশ পায় না। ফয়সালের সঙ্গে থাকা ছাড়া তার হাতে কোনো বিকল্প নেই বলে না, বরং ফয়সালের সঙ্গে থাকতে পারাকে নিজের জীবনের এক অনন্য বিজয় হিসেবে দেখে বলেই স্বাচ্ছল্য কিংবা দারিদ্র্য আলাদা করে কোনো নিয়ামক হয়ে ওঠেনি তার কাছে। বিয়ের পর একবার এক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা গেছিল সে। ফয়সালের এক খালার বাসায় ছিল রাত্রে, এসি রুমে আরামের বিছানায় শুয়েও ঘুম আসতে চায়নি। বিয়ের পর সেই প্রথম তাদের আলাদা থাকা। চার বছর যাবার পরেও ব্যাপারটা এমনই আছে। শরীরের ঘনিষ্ঠতা নয়, যেন ঘুমের মতো আধা চেতন অবস্থায় পরস্পরকেই নিরাপদ আশ্রয় বলে গ্রহণ করে নিয়েছে তারা দু’জনেই। ঘুমের ঘোরে হাতটা বাড়ালে প্রিয় মানুষকে স্পর্শ করা যাচ্ছে, এর চেয়ে বড় সুখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?    


ছন্দাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে সে। আজকে সে যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে সেই ব্যক্তি পরপুরুষ হলেও তার প্রেমিক নয়, এমনকি এক্সও নয়। কলেজে একই ক্লাসে পড়তো, পরে আমেরিকা চলে যায় এই বন্ধুটি। মাঝেমধ্যে ইমেইল করতো, সে আমেরিকা যেতে চায় কিনা জিজ্ঞেসও করেছিল একবার। সম্ভবত সরাসরি প্রপোজ করার সাহস পায়নি। রুমকি তখন অলরেডি ফয়সালের সঙ্গে কমিটমেন্টে আছে। অন্য কিছু ভাবার সুযোগ সে নিজেকে কখনোই দেয়নি। আজ বছর দশেক পর দেশে এসে কে জানে কীভাবে তার নাম্বার জোগাড় করেছে, ফোন করে জানিয়েছে সে দেখা করতে ইচ্ছুক। অত কিছু না ভেবে রাজিও হয়ে গেছে সে। কিন্তু আসবার পর খানিক অস্বস্তি লাগছে। এই ক্যাফেতে যদি তার জা কিংবা ননদের পরিচিত কেউ থাকে, কিংবা ফয়সালের কোনো কাজিনটাজিন; তারা দেখলে কী ভাববে? আসবার আগে এই দিকটা সে চিন্তা করেনি, করলে হয়তো আসতোই না। পরে পস্তাতে হয় এমন কিছুই সে সচেতনভাবে করে না।  

৩ 
বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় রুমকির। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে অন্ধকার উঠান পার হয়ে গ্রিল দেওয়া বারান্দা কাম লিভিং রুমে ঢুকতেই শাশুড়ির সামনে পড়ে সে। এমনিতেই সামান্য টেনসড ছিল, শাশুড়ির থমথমে মুখ দেখে আরো ভয় পেয়ে যায়। মেজো জা কি আসলেই আলাদা বাসায় যাওয়া ফাইনাল করে ফেলল নাকি? সে সরাসরি শাশুড়ির চোখের দিকে তাকায়। শাশুড়ির সঙ্গে তার মানসিক যোগাযোগ ভালো, অনেক সময় তারা চোখে চোখে কথা বলেও যোগাযোগ করে, মুখে কিছু না বলেই। টিভি রুম থেকে ক্রিকেট ম্যাচের কমেন্ট্রি ভেসে আসছে। ভাসুর আর শ্বশুর দু’জনের কণ্ঠই শোনা যাচ্ছে। ননদের ঘরেও আলো জ্বলছে, অবস্থা তো স্বাভাবিকই মনে হয়। সে শাশুড়ির পাশের চেয়ারে বসে। শাশুড়ি নিচু গলায় বলেন, ‘ফয়সালের মনে হয় শরিলডা ভালা না, দেখ গিয়া তো একটু’। 

সে কথা না বাড়িয়ে উঠে যায়। তাদের ঘরটা প্যাসেজ পেরিয়ে ভেতরের দিকে। ফয়সাল আর ফরহাদ আগে একই ঘরে ঘুমাতো। ফরহাদের বিয়ের পর সে পেছনের দিকের ছোট ঘরে শিফট হয়েছিল। রুমকিও সেখানেই নিজেকে আটিয়ে নিয়েছে। ঘরে ঢুকে দেখে ফয়সাল অন্ধকারে শুয়ে আছে। তাকে ঢুকতে দেখে বলে, ‘বাতি অফ থাক, মাথা ব্যথা করতেছে’। রুমকি কিছু না বলে ব্যাগ থেকে একটা চকলেটবার বের করে তার হাতে দেয়। ডার্ক চকলেট ফয়সালের খুব প্রিয়।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফয়স ল র র জন য য় র পর ব র পর ন র পর এই ব ড় ব র হয় ফরহ দ একব র ননদ র

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তৃতীয় ম্যাচে পয়েন্ট খোয়াল রিয়াল, শীর্ষে বার্সাই

টানা তিন ড্রয়ে লা লিগার শীর্ষ স্থানটা হারিয়েই ফেলল রিয়াল মাদ্রিদ। রোববার রাতে জিরোনার মাঠে রিয়াল ড্র করেছে ১–১ গোলে। এর আগে এলচের বিপক্ষে ২–২ গোলে এবং রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি।

পরশু রাতে বার্সেলোনা আলাভেজকে হারিয়ে ১৪ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে রিয়ালকে টপকে শীর্ষে উঠেছিল। জিরোনার বিপক্ষে জিতলে সেই স্থান আবার পুনরুদ্ধার করতে পারত রিয়াল। কিন্তু একের পর এক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত জয় আদায় করতে পারেনি জাবি আলোনসোর দল। ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

জিরোনার মাঠে আধিপত্য বিস্তার করা রিয়াল ৬০ শতাংশ বলের দখল রেখে ২৫টি শট নেয়। কিন্তু এমন দাপট দেখিয়েও রিয়াল গোল পেয়েছে মাত্র একটি, তাও আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৬৭ মিনিটে এমবাপ্পের সেই পেনাল্টি গোল রিয়ালকে সমতায় ফেরালেও শেষ পর্যন্ত ৩ পয়েন্ট এনে দিতে পারেনি। এর আগের ম্যাচের ৪৫ মিনিটে জিরোনার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ওনাহি।

আরও পড়ুনইয়ামাল–ওলমোর গোলে জন্মদিনে জয় বার্সার২৯ নভেম্বর ২০২৫

পেনাল্টিতে বল জালে জড়িয়ে রিয়ালের হয়ে চলতি মৌসুমে ২৩তম গোলটি করেছেন এমবাপ্পে, যা ক্লাবের মোট গোলের (৪১ গোল) ৫৬ শতাংশ। অবিশ্বাস্য ছন্দে থাকা এমবাপ্পে এই ম্যাচে মোট ৫টি শট নেন, কিন্তু গোল হয়েছে ওই একটাই।

হতাশায় এভাবেই মাঠে বসে পড়েছেন বেলিংহাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ