চট্টগ্রামে নভেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণের রেকর্ড, ভোগাবে এ মাসেও
Published: 1st, December 2025 GMT
চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন নভেম্বরে। গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭—গড়ে প্রতিদিন ৩৫ জন। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হন ৯৯০ এবং সেপ্টেম্বরে ৯৩৫ জন।
এদিকে চলতি বছর এক মাস বাকি থাকতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫১২ জন। গত বছর আক্রান্ত ছিলেন ৪ হাজার ৩২৩ জন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডিসেম্বরের শুরুতে বৃষ্টি হলে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার পর ২৮ দিন মশার প্রকোপ বেশি থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা গত চার বছরের মধ্যে তৃতীয়। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৮৭ জন। ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪৪৫। গত বছর নভেম্বরে আক্রান্ত হন ১ হাজার ২৮ জন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, সিএমএইচ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগী ছিলেন ১২৩ জন।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অক্টোবর-নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও ডিসেম্বর মাসে তা কমেছে। তবে এ বছর ডিসেম্বরেও আক্রান্ত বাড়তে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী মিলছে। ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়ায় আগাম সতর্কতা জরুরি।মৃত্যুও বেড়েছে নভেম্বরেচট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় নভেম্বরের ২৯ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৬ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৬। এ বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জুলাই মাসে—৭ জন। আগস্ট ও নভেম্বরে মারা গেছেন ৬ জন করে। শেষ মৃত্যুটি হয়েছে গত বুধবার। সেদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৯ বছরের শিশু মাশেরা।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অক্টোবর-নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও ডিসেম্বর মাসে তা কমেছে। তবে এ বছর ডিসেম্বরেও আক্রান্ত বাড়তে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী মিলছে। ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়ায় আগাম সতর্কতা জরুরি।
এ বছর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নগর এলাকায় রোগী বেশি—২ হাজার ৪৬০ জন। আর ১৫ উপজেলায় আক্রান্ত ২ হাজার ৫২ জন। এর মধ্যে ৯০৯ জনই সীতাকুণ্ড উপজেলার। নভেম্বর মাসেই নগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮২ জন। বৃষ্টিপ্রবণ ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
‘রোগীদের লক্ষণও পাল্টেছে’চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গতকাল ভর্তি ছিলেন ৪৩ জন। দুজনই হালিশহরের সাইফুল ইসলাম ও কর্ণফুলীর আহমেদ রেজা। তাঁরা জানান, দুই দিন ধরে তাঁরা হাসপাতালে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও রাতে জ্বর আসে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে তাঁদের।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে বাড়ছে ফুসফুস, কিডনি ও যকৃৎজনিত জটিলতা। মারা যাওয়া রোগীদের ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ডেঙ্গুর পাশাপাশি এসব অঙ্গের জটিলতা ছিল। ডায়রিয়া, অনিয়মিত রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টও অনেক রোগীর সাধারণ লক্ষণ।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো.
এ কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর মৌসুমভেদে ডেঙ্গু নেই। সারা বছরই রোগী পাওয়া যাচ্ছে। রোগীদের লক্ষণও পাল্টেছে। জনসচেতনতার পাশাপাশি সারা বছর মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে, বিশেষ করে হটস্পট এলাকাগুলোয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ড স ম বর বর ম স বছর ড এ বছর বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ একটি ‘দুষ্টচক্রের ত্রিভুজে’ আটকে ছিল: হোসেন জিল্লুর রহমান
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি ‘দুষ্টচক্রের ত্রিভুজে’ আটকে ছিল। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি; সমতা ছিল নীতিনির্ধারকদের নজরের বাইরে; আর শাসনব্যবস্থা জড়িয়ে পড়েছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতাশালী ধনী গোষ্ঠীর প্রভাবের মধ্যে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের পর একের পর এক সংকট এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে দেশ আজ এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও প্রকৃত জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, মানুষকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে নতুন ধরনের সামাজিক চুক্তি গড়ে তোলা।
‘বিয়ন্ড জবলেস গ্রোথ: টুওয়ার্ডস অ্যান এমপ্লয়মেন্ট-সেন্টারড পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ থ্রো আ পোস্ট-নিওলিবারাল লেন্স’ (বাংলাদেশে বেকারত্বহীন প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক নীতি কাঠামো) শীর্ষক এ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিক এবার্ট স্টিফটাং (এফইএস) এ আয়োজন করে।
শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সহ–উপাচার্য সায়মা হক।
পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে একটি ‘সহনশীল রাষ্ট্র’ বা রেজিলিয়েন্ট অর্থনীতির দেশ হিসেবে দেখা হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশ এখন ‘আনন্দহীন রেজিলিয়েন্সের ফাঁদে’ আটকে গেছে। অর্থাৎ সহনশীলতা আমাদের শক্তি হলেও বর্তমানে তা আর আনন্দ দিচ্ছে না। সংকট মোকাবিলার চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন নেই। কৃষক পরিবারের সন্তানেরা এখন কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে না। এ জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন বাড়াতে হবে। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং ও অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য ছোট নীতি ও প্রণোদনা দেওয়া হলে সেটি বড় ধরনের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে পারে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হয় তার সঙ্গে চাকরি তৈরি করার সরাসরি কোনো সংযোগ নেই। আমরা দেখেছি গত ১০ বছরে প্রতিবছরে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। কিন্তু উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১৫ লাখের মতো। কাজেই প্রবৃদ্ধি হলেই কর্মসংস্থান হবে, এই ধারণা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে চাকরি তৈরি হবে, এমন জিনিসকে কেন্দ্র করে আমাদের সব নীতি সাজাতে হবে।’
কলেজগুলো বেকার তৈরির কারখানাপ্যানেল আলোচনায় বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাসরুর বলেন, ১৫ বছর আগে দেশে তিন লাখের মতো গ্র্যাজুয়েট তৈরি হতো। সেখানে এখন প্রতিবছর সাড়ে ৪ লাখের বেশি গ্র্যাজুয়েট শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এর ৭০ শতাংশই আসে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে। এই কলেজগুলো বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে।
প্রবাসী শ্রম রপ্তানিতে বড় ধরনের অসামঞ্জস্যের কথাও তুলে ধরেন ফাহিম মাসরুর। তিনি বলেন, প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের ৯০-৯৫ শতাংশই ম্যাট্রিক-পাস।
আমাদের বরং সাড়ে চার লাখ গ্র্যাজুয়েট থেকে অন্তত এক লাখ দক্ষ মানুষ বিদেশে পাঠানো উচিত ছিল। এ অবস্থায় নিম্ন দক্ষতার শ্রমিক রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রের কারণে কর্মসংস্থানের হার কমছে। শ্রমিকদের পুনঃ প্রশিক্ষণ এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা প্রয়োজন। যদিও বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কোনো অধিদপ্তর নেই। এটি দেশে কর্মসংস্থান নীতি বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা।