চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বর্ধিত ৪১ শতাংশ মাশুল স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ না করা পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় তারা এ দাবি জানান।

আরো পড়ুন:

হিলি বন্দরে কাঁচা মরিচ আমদানিতে ১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়

আখাউড়া স্থলবন্দরে ৪ দিনের ছুটি শুরু

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত মাশুল কার্যকর হতে যাচ্ছে। এক মাসের স্থগিতাদেশ শেষে ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে বন্দরের সব সেবাখাতে নতুন হারে মাশুল আদায় শুরু হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর আগত সব জাহাজ, কন্টেনার ও কার্গোর বিল নতুন রেটে পরিশোধ করতে হবে। সব শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদেরও বর্ধিত হারে মাশুল দিতে হবে। 

১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ানো হয়। ব্যবহারকারীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২০ সেপ্টেম্বর এক মাসের জন্য বর্ধিত মাশুল স্থগিত করেন। 

চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিটাগং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।

সমন্বয় সভায় আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বন্দরের নতুন মাশুল সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে, তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বন্দর ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়াবে কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের এত জবাবদিহিতা নেই যে বন্দরের মাশুল বাড়াতে উঠে-পড়ে লাগতে হবে।’’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, ‘‘বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারো গোলাম না। মাশুল বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলায়, পায়রায় বাড়ায়নি। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে।’’

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘‘আরএমজি (তৈরি পোশাক শিল্প) ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ মাশুল কেন বাড়াতে হবে?’’

মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা মাশুল বাড়ানোর বিরুদ্ধে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। বায়ার ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে।’’  

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘‘বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।’’

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’ 

বেপজিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, ‘‘আমরা এখনো আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি করে রূপান্তরের মাধ্যমে রপ্তানি করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না বন্দর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আমি আশা করবে, সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করবে।’’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমদানি রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করি আমরা। কাজেই ব্যথা আপনাদের চেয়ে আমাদের বেশি। পোশাকশিল্পে অর্থনৈতিক চাপ আসলে লাখ লাখ নারী বেকার হবে। আপনি বিদেশে কর কমাতে তদবির করছেন, দেশের বন্দরে কেন মাশুল বাড়াবেন? আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বন্দর। চট্টগ্রাম লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এস এম আবু তৈয়ব।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ৫২টি খাতে মাশুল আদায় হয়, যার মধ্যে ২৩টি খাতে নতুন মাশুল কার্যকর হবে। গেজেট অনুযায়ী, ভাড়া, টোল ও ফি ডলারের বিনিময় হারের ওপর নির্ভর করে আদায় হবে। প্রতি ডলার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ফলে ডলার বাড়লে মাশুলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।

বর্ধিত হারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে। প্রতি ২০ ফুটি কন্টেনারের মাশুল বাড়িয়ে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা করা হয়েছে, যা গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। ফলে আমদানি কন্টেনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানিতে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বেশি দিতে হবে। প্রতিটি কন্টেনার উঠানো–নামানোর খরচও প্রায় ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় দ র বর ধ ত আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন ওষুধ তৈরি হবে পেঁপে থেকে

পেঁপের মধ্যে থাকা পাপাইন নামের একটি বিশেষ এনজাইম ব্যবহার করে ক্যানসারসহ পাকস্থলী–সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় নতুন ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। উদ্ভিদ সাধারণত নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য এনজাইম তৈরি করে। পাপাইনের মতো ল্যাটেক্স প্রোটিয়েজ পেঁপেগাছের পাতাকে শুঁয়োপোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পেঁপে নিয়ে বিশেষ এই গবেষণা অ্যারাবিয়ান জার্নাল অব কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়েছে।

পাপাইন এনজাইম নামের এই প্রাকৃতিক প্রোটিন কাজে লাগিয়ে নতুন ওষুধ তৈরির কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্ডু ইউনিভার্সিটির প্রাণরসায়নবিজ্ঞানী বেঞ্জামিন আয়োদিপুপো বাবাওলা। তিনি জানান, পেঁপেগাছকে ফার্মাকোলজিক্যাল গবেষণার নতুন ভান্ডার বলা যায়। পাপাইন একটি সিস্টাইন প্রোটিয়েজ, যা একটি প্রোটিন কাটার এনজাইম। এটি সালফার বহনকারী একটি অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যবহার করে। এই রাসায়নিক ধর্ম এটিকে উষ্ণ, জলীয় পরিস্থিতিতেও নির্ভুলভাবে পেপটাইড বন্ধন ভাঙতে সাহায্য করে। এর দুই-ডোমেন কাঠামোতে একটি সক্রিয় খাঁজ রয়েছে, যা অনেক প্রোটিন লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে খাপ খায়। এই শারীরিক বিন্যাসের কারণে খাদ্য ও বায়োমেডিকেল উভয় ক্ষেত্রেই কাজের সুযোগ আছে।

বেঞ্জামিন আয়োদিপুপো বাবাওলার তথ্যমতে, পাপাইন ১২২ থেকে ১৩৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় সক্রিয় থাকে। পাপাইন জলে দ্রবীভূত হয়। নির্দিষ্ট কিছু সহায়তাকারী যেমন অ্যামিনো অ্যাসিড ও চিলেটরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তিসংগতভাবে স্থিতিশীল থাকে।

প্রসঙ্গত, পাপাইন কোনো নতুন উপাদান নয়। এটি মাংস নরম করার উপাদানে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কিছু পানীয় পরিষ্কার করতে ও ক্ষত নিরাময়ের জেলে ব্যবহার করা হয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কৃষি এলাকায় পেঁপে বেশ চাষ হয় বলে এর সরবরাহ বেশ স্থিতিশীল। আর তাই পেঁপের পাপাইন এনজাইম কম খরচে জৈব-প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহারের সুযোগ আছে।

সূত্র: আর্থ ডটকম

সম্পর্কিত নিবন্ধ