প্রায় ২৪৮ বছর আগে ‘ইলুমিনাতি’ নামে একটি গোপন ‘বাস্তব সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই একই নাম ছিল একটি কাল্পনিক সমাজেরও।  অনেকেই মনে করেন এই  রহস্যময় বৈশ্বিক সংস্থা, পুরো বিশ্ব দখল করারে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই বিশ্বের বড় বড় বিপ্লব এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।

দ্য অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি হলো ব্যাভারিয়াতে (বর্তমান আধুনিক জার্মানির অংশ) প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন সমাজ। যেটার ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত। এই সমাজের সদস্যরা নিজেদেরকে 'পারফেকশনিস্ট' বা ‘নিখুঁত’ বলে পরিচয় দিতো।

আরো পড়ুন:

সর্বাত্মক ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় ২০১৪ সন থেকে: সলিমুল্লাহ খান

রা‌শিয়ায় যু‌দ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, প‌রিবার জান‌ল ৭ মাস পর

ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আইনের অধ্যাপক অ্যাডাম উইসাপট। তিনি ইউরোপে রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, সরকারের উপর ধর্মের প্রভাব অপসারণ করতে এবং জনগণকে ‘আলোর নতুন পথ’ দেখাতে চেয়েছিলেন।

সংগঠনটি পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। তারা ১৭৭৬ সালের পহেলা মে ইঙ্গলস্ট্যাড শহরের কাছে একটি জঙ্গলে প্রথম বৈঠক করে।  তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চায়, সেইসাথে রাজতন্ত্র ও চার্চের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব কীভাবে ব্যাহত করা যায়, তার ওপর মনোযোগ দিতে চায়। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। তারা আরও সদস্য বাড়ানোর জন্য  ফ্রিম্যাসন সোসাইটিতে যোগ দেয়।ফ্রিম্যাসন সোসাইটি হলো শুধুমাত্র পুরুষদের নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন গোপন সমাজ।

কেউ যদি ইলুমিনাতিতে যোগ দিতে চায়, তাহলে তার সেই সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের অনুমতি এক কথায় সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।একই সঙ্গে অঢেল সম্পদ থাকতে হয় এবং খ্যাতিমান হতে হয়।

ইলুমিনাতিরা কী ধরণের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে তার বেশিরভাগই জানা যায় না। সামান্য যেটুকু জানা যায় তাহলো— তাদের ছদ্মনাম থাকে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে ইলুমিনাতি বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, মূল ইলুমিনাতি সংগঠনের প্রভাব বেশ সীমিত। রা কেবলমাত্র মধ্যপন্থী হতে পেরেছিল।

ইলুমিনাতি গ্রুপের বিখ্যাত সদস্য কারা ছিলেন?
১৭৮২ সালের মধ্যে, ইলুমিনাতি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৬০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তাদের মধ্যে একজন হলেন ব্যারন অ্যাডলফ ভন নিগে, তিনি জার্মান সমাজের অভিজাতদের মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়।তিনি এর আগে ফ্রিম্যাসন সমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাবেক ফ্রিম্যাসন হিসেবে, ইলুমিনাতিকে সংগঠিত ও প্রসারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র অ্যাডাম উইসাপটের ছাত্ররা ইলুমিনাতির সদস্য ছিলেন, কিন্তু শিগগিরই ডাক্তার, আইনজীবী এবং সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এই দলে যোগ দেন।

বলা হয় যে ১৭৮৪ সালের মধ্যে ইলুমিনাতির সদস্য দুই থেকে তিন হাজারের মত হয়ে যায়। কিছু সূত্র দাবি করেছে যে বিখ্যাত লেখক ইয়োহান ওয়ালফগ্যাং ফন গুঠাও এই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তবে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইলুমিনাতির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে কখন?
১৭৮৪ সালে, ব্যাভারিয়ার শাসক (ডিউক) কার্ল থিওডর আইন দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কোনও কর্পোরেশন বা সমাজ তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরের বছর তিনি দ্বিতীয় আদেশ পাস করেন, যেখানে স্পষ্টভাবে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

ওই সময় ইলুমিনাতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার সদস্যদের গ্রেফতার করা হতো, তখন বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়, যেখানে নাস্তিক্যবাদ এবং আত্মহত্যার মত ধারনাকে সমর্থন করা হয়েছিল। সেইসাথে গর্ভপাত করার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।

এসব নথিপত্র থেকে তৎকালীন শাসকদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে এই সংগঠনটি রাষ্ট্র এবং চার্চ উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারপর থেকে, অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি সাধারণ মানুষের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদিও অনেকের ধারণা যে তারা গোপনে গোপনে ঠিকই সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে।

অ্যাডাম উইসাপটের পরিণতি কী?
অ্যাডাম উইসাপট ইউনিভার্সিটি অফ ইঙ্গলস্টাডের সাথে যুক্ত থাকলেও পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিলো। এরপর তিনি ব্যাভারিয়া থেকেও নির্বাসিত হন। পরে জার্মানির গোথা শহরে তিনি জীবনের বাকি দিনগুলো কাটান। এই শহরেই ১৮৩০ সালে মারা যান অ্যাডাম।

১৭৯৭ সালে, ফরাসি ধর্মযাজক অ্যাবে অগাস্টিন বোরেলের ধারণা যে ‘অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি’র মত গোপন সমাজ ফরাসি বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে। 

কেন আজও মানুষ ইলুমিনাতিতে বিশ্বাস করে?
ইলুমিনাতি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, এই ধারণাটি মানুষের মন থেকে সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায়নি বরং এটি পপুলার কালচারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের পিছনে ইলুমিনাতির ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে ডিসকর্ডিয়ানিজমের কিছু অনুসারী। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন জার্নালে জাল চিঠিও পাঠায়।

সাহিত্যে নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে
ইলুমিনাতি সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস ও ধারণা থেকে সাহিত্যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। উইলসন পরে রবার্ট শিয়াকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন, যার নাম ‘দ্য ইলুমিনাতি ট্রায়োলজি’। বইটি বিশ্বে ভীষণ জনপ্রিয় হয় এবং এর সর্বাধিক কপি বিক্রি হয়। ড্যান ব্রাউনের উপন্যাস ‘এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস’ যা নিয়ে পরে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এটি ওই কথাসাহিত্যের নতুন ধারায় অনুপ্রাণিত সৃষ্টি। 

ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ ধীরে ধীরে অন্যান্য আদর্শের সাথেও যুক্ত ছিল। এর ফলে সংগঠনটি ১৮ শতকের মূল ব্যাভারিয়ান গোষ্ঠীদের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ র ম য সন ই স গঠন র সদস য হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গবেষণাভিত্তিক শিশুশিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে বেরি

বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গবেষণাভিত্তিক প্রারম্ভিক শিক্ষার বিকাশ, শিশুদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রয়োগ এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আর্লি এডুকেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বেরি)।

সম্প্রতি ঢাকার তেজগাঁওয়ে উদ্বোধনী সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটি শিশুশিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষক উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে গবেষণার ভূমিকা জোরদারের অঙ্গীকার করে।

‎অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক কমিটি সদস্য শামীমা আক্তার, সাইফুর রহমান খোকন, রফিকুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সানাহ। প্রতিষ্ঠানটি অর্গানাইজেশন ফর ডিজেবলড ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড রাইটস (ওডিআইআর) সহপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।

‎সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে  সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শাকিল আজাদ মনন বলেন, “প্রারম্ভিক (শিশু) শিক্ষা পদ্ধতি, সিলেবাস ও কারিকুলামকে সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী করা এবং গবেষণাভিত্তিক শিশু শিক্ষা কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা অন্তর্ভুক্তি, নৈতিক শিক্ষা ও শিক্ষণ উদ্ভাবনে জোর দেওয়া, আর্থিক অসুবিধায় থাকা শিক্ষকবৃন্দকে গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ প্রদান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিক পর্যায়ের সংগঠনের সহায়তায় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণীদের কাছে উপস্থাপন করব। পাশাপাশি আমরা পরিবেশ ও সুস্বাস্থ্য খাদ্য উৎপাদনে কাজ করে যাব যেন শিশুদের বিকাশ সঠিকভাবে হয়।”

‎অনুষ্ঠানের শুরুতে জার্মানি থেকে অনলাইনে সংগঠনটির উপদেষ্টা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শিশু শিক্ষা বিষয়ক গবেষক ও আইটি বিশেষজ্ঞ কামরুজ্জামান বলেন, “আমি ৩০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের শিশু শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। শিশুদের জন্য তেমন কোনো মানসম্মত বই না থাকায় আমি নিজেই বই ছাপিয়েছি। এছাড়া, শিশুদের বিকাশ হওয়ার জন পুষ্টিকর খাদ্য ও পরিবেশ নিশ্চিত করাও হবে এ সংগঠনের কাজ।”

“পাশাপাশি আমাদের শহরে বা আশেপাশের পরিবেশ বসবাস যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা ধীরে ধীরে সকল বিষয় নিয়ে সমাজে কাজ করব এর জন্য আগে আমাদের এসব বিষয় জানতে হবে।”

‎প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ‎বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি,  শিক্ষকসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা।

ঢাকা/এইচএম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রশিবিরের ফিরে আসার লড়াই
  • গবেষণাভিত্তিক শিশুশিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে বেরি