ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুরকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে বিক্ষোভ
Published: 14th, October 2025 GMT
শরীয়তপুর জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে এই অবরোধের কারণে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল। দাবি মেনে নেওয়া না হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে মহাসড়ক থেকে সরলেন আন্দোলনকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক
ঢাকা-ময়মনসিংহ বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ১০টার পর থেকেই পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধন শেষে সকাল ১১টার দিকে টোল প্লাজার সামনে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ফলে সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টোল প্লাজার সামনে আটকা পরে শতাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। আন্দোলনকারীরা শরীয়তপুরকে ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আন্দোলনকারী মোহাম্মদ বজলু শিকদার বলেন, “শরীয়তপুরবাসীর একটাই দাবি,আমরা ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হব না। আজ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। এ বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা ঢাকা বিভাগের সঙ্গে আছি এবং থাকব।”
জাগো শরীয়তপুর সংগঠনের আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, “প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলা অন্তর্ভুক্ত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, গণসমাবেশসহ বিভিন্ন উপদেষ্টাদের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ন্যায্য এই দাবির প্রচারণার অংশ হিসেবে আজ পদ্মা সেতু ব্লক করা হয়েছিল। যদি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তবে শরীয়তপুরবাসী কঠোর আন্দোলনে যাবে। প্রয়োজনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
পদ্মা দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম রসূল বলেন, “তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে, আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।”
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ ট ল প ল জ র স মন অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে কোচিং সেন্টারে ‘মব’, শিক্ষককে চড়-থাপ্পড়
রাজশাহীর তানোরে কোচিং সেন্টারে গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন কয়েকজন যুবক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কোচিং সেন্টারের ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর বার্তা পাঠান। তবে, এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
তানোরের মুণ্ডুমালায় ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার। সোমবার (১৩ অক্টোবর) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ের শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন তার চেয়ারে বসে আছেন। কয়েকজন যুবক তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মো. শাকিব নামের এক যুবক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুণ্ডুমালা বাজারে অবস্থিত অ্যাডভান্স কোচিং সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম রোকনুজ্জামান রোকন। মুণ্ডুমালা পৌরসভার মোহাম্মদপুর মহল্লায় তার বাড়ি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারের পরিচালক।
অভিযুক্ত শাকিবের বাড়ি পৌর এলাকার কাদিপুর মহল্লায়। ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। কোচিং সেন্টারও বন্ধ আছে। শতাধিক শিক্ষার্থী এ কোচিং সেন্টারে পড়েন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেছেন, “আমরা কয়েকজন মিলে কোচিং সেন্টারটি চালাই। মুণ্ডুমালায় আরো কয়েকটি কোচিং সেন্টার থাকলেও আমাদেরটি ভালো চলত। সেজন্য ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি নাকি ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই। এই ছেলেগুলো আগে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর তারা বিএনপি-যুবদল হয়ে গেছে। তারা মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করে এবং কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেয়। আসলে তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তাহলে মারধরের সময় তো মেয়েরাও থাকত। সেখানে কোনো মেয়ে ছিল না।”
তিনি আরো বলেন, “যখন আমাকে মারধর করা হয়, তখনো তিনজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন। তারা মুণ্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ এসে আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু, অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি বলে আমাকে ছেড়ে দেয়। এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে মামলা-মোকদ্দমা করতে যাইনি। ভয়ে কোচিং সেন্টারও খুলতে পারছি না।”
মুণ্ডুমালা পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম বলেছেন, “রোকনুজ্জামান আমার পরিচিত। তাকে ভালোই মনে হয়। কেন এ ঘটনা ঘটল, তা জানি না। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিএনপি বা যুবদলে কোনো পদ নেই। এমনিই তারা ওঠা-বসা করতে পারে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাকিবকে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার বাবা মো. ভুট্টু বলেছেন, “ঘটনার ব্যাপারে লোকমুখে শুনেছি। কী হয়েছে, সঠিক বলতে পারছি না। যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তারাই বলতে পারবে। আমার ছেলে তো নাই। সে রাজশাহীতে আছে।”
মুণ্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কমলেশ হেমব্রম বলেছেন, ‘রোকনুজ্জামান মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে নিরাপদে বের করে এনেছে। আপাতত কোচিং সেন্টার বন্ধ আছে। তবে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সত্যতা আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক