দেশের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (ডিএফএস) খাতে সেবা নিয়ে আসছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও বাংলালিংক। দুটি প্রতিষ্ঠানই নিজস্ব ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা চালু করতে চায়। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রবি আজিয়াটা লিমিটেড সেবাটি চালুর জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছে। বাংলালিংকের অনাপত্তি পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ‘স্মার্ট পে’ ও বাংলালিংক ‘নিউ পিএসপি লিমিটেড’ নামে পৃথক কোম্পানি গঠন করেছে। পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) বা লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো এমন একটি সেবা মাধ্যম, যা ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড থেকে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অর্থ গ্রহণ করবে। এই মাধ্যম হয়ে বিক্রেতার হিসাবে চলে যাবে। পিএসপিগুলো ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করে। পিএসপি সেবা দিতে কোম্পানি গঠনে মূলধন হতে হবে ২০ কোটি টাকা।

রবি ও বাংলালিংক হলো দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এখন এই দুই প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল লেনদেন ব্যবসায় নামতে চায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান দুটি পিএসপি সেবার জন্য আবেদন করেছে। একটিকে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। আরেকটির আবেদন বিবেচনাধীন আছে। আমরা চাই, ডিজিটাল লেনদেন বাজারে আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলো আসুক। এতে সেবার মান বাড়বে। গ্রাহকেরা উপকৃত হবেন। ডিজিটাল লেনদেন সেবা প্রসার হলে নগদ টাকার ব্যবহার কমে আসবে।’

আরিফ হোসেন খান আরও বলেন, প্রতিবছর নোট ছাপাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠাতেও নানা ধরনের ঝুঁকি ও বিড়ম্বনা থাকে। এ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে ‘ক্যাশলেস ট্রানজেকশন’ বা ‘নগদবিহীন লেনদেন’ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এটি নিশ্চিত করা গেলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ছাড়া অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।

এদিকে বাংলালিংকের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান ভিওন গ্রুপ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি লিখেছে।

খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রবি ও বাংলালিংক ডিজিটাল লেনদেন বাজারে প্রবেশে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক রয়েছেন। এই অপারেটর দুটি বাজারে এলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে, যার ফলশ্রুতিতে গ্রাহকেরা কম খরচে আরও উদ্ভাবনী ও মানসম্মত সেবা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চলমান কিছু সেবার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। স্মার্ট পে লিমিটেড নামে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্সের জন্য অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। এই সেবা দেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির নতুন অধ্যায়ের সূচনার পাশাপাশি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের নগদহীন লেনদেনের ব্যবস্থাকে আরও সহজ, নিরাপদ ও সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করা।’

৯টি প্রতিষ্ঠান আছে

দেশে পিএসপি সেবা দেয়, এমন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯টি। ভবিষ্যতে পিএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ডিজিটাল লেনদেন বাজারে আরও বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে এই পিএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনুমোদন পাওয়া ৯টি পিএসপি রয়েছে। এগুলো হলো আইপে সিস্টেমস, ডি মানি বাংলাদেশ, প্রগতি সিস্টেম, গ্রিন অ্যান্ড রেড টেকনোলজিস, রিকারশন ফিনটেক, ডিজিটাল পেমেন্টস লিমিটেড, এবিজি টেকনোলজিস, সেবা ফিনটেক ও সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড জ ট ল ল নদ ন ব আজ য় ট র জন য প এসপ

এছাড়াও পড়ুন:

মাদাগাস্কারে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিল সেনাবাহিনী

জেন-জিদের বিক্ষোভের মুখে মাদাগাস্কার ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। আজ মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা এ কথা জানান। মাদাগাস্কারের জাতীয় রেডিওতে কর্নেল মাইকেল র‍্যান্ড্রিয়ানিরিনা বলেন, ‘আমরাই ক্ষমতা গ্রহণ করেছি।’

জেন-জিদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর যে অংশ সমর্থন দিয়েছিল, তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল মাইকেল র‍্যান্ড্রিয়ানিরিনা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশটির সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল করছে। তবে সংসদের নিম্নকক্ষ বা জাতীয় পরিষদ বহাল থাকবে। এর আগে অবশ্য ডিক্রি জারি করে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা।

ফ্রান্সের সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও আরএফআই গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক গোপন চুক্তি করেছেন রাজোয়েলিনা। ফরাসি সামরিক বিমানে করে তাঁকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেন-জি প্রজন্মের ব্যাপক বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর একাংশের বিদ্রোহের মুখে দেশ ছাড়লেও পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন রোজোয়েলিনা।

এদিকে রাজোয়েলিনা বলেছেন, নিজের জীবনের হুমকির কারণে তিনি একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মাদাগাস্কারের একজন বিরোধী দলের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর একটি সূত্র এবং এক বিদেশি কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজোয়েলিনা রোববার ফরাসি সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে গেছেন।

দেশটিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ–সংকটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত রূপ নেয় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, মৌলিক সেবার অভাবসহ বৃহত্তর অসন্তোষের এক গণ–অভ্যুত্থানে। এই বিক্ষোভকে নেপাল, মরক্কোসহ অন্যান্য দেশে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আজও রাজধানী আন্তানানারিভোর ১৩ মে স্কয়ারে হাজারো বিক্ষোভকারী নেচে–গেয়ে স্লোগান দিতে দিতে রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে মিছিল করেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব ও সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের সমর্থন পাওয়ায় মাদাগাস্কারকে ‘ফরাসি দালাল’ বলে আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা নানা ব্যানারও প্রদর্শন করেন। অনেক বিক্ষোভকারী হাতে ছিল মাদাগাস্কারের জাতীয় পতাকা ছিল। একপর্যায়ে কর্নেল মাইকেল র‍্যান্ড্রিয়ানিরিনা মঞ্চে উঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা কি সামরিক হস্তক্ষেপ মেনে নিতে প্রস্তুত?’ এরপরই জনতা উল্লাসধ্বনিতে ফেটে পড়ে।

আরও পড়ুনমাদাগাস্কারে বিক্ষোভের মুখে গোপনে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট২১ ঘণ্টা আগে

তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে গত শনিবার সমর্থন দেয় ক্যাপস্যাট নামের একটি বিদ্রোহী সেনা ইউনিট। পরদিন এই ইউনিটের পক্ষ থেকে মাদাগাস্কারের পুরো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

মাদাগাস্কারের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এর তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ১৯৬০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।

আরও পড়ুনমাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগের আগে–পরে যা হলো৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ