বারবার বন্ধের ঘোষণা দিয়ে কেয়া কসমেটিকসে শ্রমিক ছাঁটাই
Published: 14th, October 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরের জরুন এলাকার কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চারটি কারখানায় বারবার বন্ধের ঘোষণা দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়ে ১৭০ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ মূলত শ্রমিক ছাঁটাই করতেই বারবার বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে।
১ অক্টোবর কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই করা নোটিশের মাধ্যমে আগামী ১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই নোটিশে ১৭০ শ্রমিককে ছাঁটাই করে তাঁদের নামের তালিকা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধের ঘোষণা দেওয়া কারখানাগুলো হলো—কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নিট কম্পোজিট ডিভিশন, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড।
নোটিশে বলা হয়েছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ১২০ দিনের নোটিশ পিরিয়ড দিয়ে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ১ আগস্ট থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা করা হয়। পরে নতুন নোটিশের মাধ্যমে আরও তিন মাস বাড়িয়ে ১ নভেম্বর থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাজারের অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের ঘাটতি ও পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সংযুক্ত তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের চাকরি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং ১ নভেম্বর থেকে তাঁদের চাকরি অবসান হয়েছে বলে গণ্য হবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন–২০০৬ অনুযায়ী সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে। প্রতিবারই কিছু কিছু শ্রমিক ছাঁটাই করছে।
আবদুল হাকিম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘কারখানা নিয়মিত চললেও মাঝেমধ্যে বন্ধের কথা বলে শুধু শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি এই কারখানায়। এখন নতুন করে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন, এর মধ্যে এক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিক। ব্যাংক জটিলতার কারণে কর্তৃপক্ষ নানামুখী সমস্যায় পড়ছে। মালিকপক্ষ কারখানাটি চালু রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। একাধিকবার বন্ধের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এখনো কারখানা চালু রাখার চেষ্টা চলছে।
এর আগে চলতি বছরের মার্চে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। ওই সময় শ্রমিকেরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন। এবার নতুন করে ১৭০ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক জটিলতার কারণে এলসি করতে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মালিকপক্ষ বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে। যখনই নতুন কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন বন্ধের নোটিশ পিছিয়ে দিয়ে কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধের নোটিশের একটি কপি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ই কর
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ
অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আরও ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। পাশাপাশি এ মামলায় পলাতক আসামিদের নামের তালিকা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ নভেম্বর।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আজ ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় পলাতক আসামিদের পরবর্তী তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচারকাজে অংশ নিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলেছেন আদালত। না হলে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই এই বিচারকাজ চলবে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ১৯৫ জন আসামি।
বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে সিআইডি জানতে পারে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুম মিটিং করে। সেখানে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই অংশ নেন। সিআইডি প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য, ডিজিটাল উপাত্ত ও ভয়েস রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখতে পায়, ওই সভায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে।
এরপর চলতি বছরের ২৭ মার্চ শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. এনামুল হক। তদন্ত শেষে গত ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি।