আপনিও নোবেল পুরস্কার জিততে পারেন, যদি
Published: 14th, October 2025 GMT
পাঠকদের মধ্যে যাঁদের নামের অক্ষর ইংরেজি ‘জে’ ও ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত নোবেল পুরস্কার আপনিও পেতে পারেন ভবিষ্যতে। প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে চাইলেই নোবেল পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয়।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’ এখন পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্রে ৬৪৬ জন নোবেল বিজয়ীর তথ্য বিশ্লেষণ করে কীভাবে নোবেল পুরস্কার জেতা যায়, তার একটি নির্দেশনা তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ৬৯ জনের নাম শুরু হয়েছে ইংরেজি ‘জে’ অক্ষর দিয়ে। আর ৬২ জনের নাম ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে। আর তাই আপনার নাম যদি ইংরেজি ‘জে’ ও ‘এ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়, তাহলে আপনারও ভবিষ্যতে নোবেল পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯০১ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। কয়েক বছর যুদ্ধের কারণে বাদ ছিল। নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের গড় বয়স ৫৮ বছর হলেও পুরস্কার জেতার সেরা সময় হচ্ছে ৫৪ বছর। এখন পর্যন্ত ২৪ জন ৫৪ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আর তাই যাঁদের বয়স বর্তমানে ৪০–এর ঘরে, তাঁদের আরও বেশ কয়েক বছর সময় আছে নোবেল পুরস্কার জেতার।
সবচেয়ে কম বয়সী নোবেল বিজয়ী হলেন লরেন্স ব্র্যাগ। তিনি ১৯১৫ সালে ২৫ বছর বয়সে তাঁর বাবা উইলিয়াম ব্র্যাগের সঙ্গে মিলে এক্স-রে ব্যবহার করে স্ফটিক কাঠামো বিশ্লেষণের কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বয়সী বিজয়ী হলেন জন বি গুডএনাফ। তিনি ২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরির জন্য আরও দুজনের সঙ্গে পেয়েছেন রসায়নে নোবেল পুরস্কার।
আরও পড়ুনএ বছরের নোবেলজয়ীদের অজানা গল্প১০ অক্টোবর ২০২৫কিছুটা বৈষম্যমূলক হলেও নেচারের তথ্য বলছে, নোবেল পুরস্কার জেতার সেরা সুযোগ থাকে যদি আপনি পুরুষ হন। তবে যদি আপনি নারী হন, তবে পুরস্কার জেতার জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো ক্ষেত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নারী বিজয়ীদের সংখ্যা বেড়েছে। বিংশ শতাব্দীতে মোট ১১ নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নারীরা পেয়েছেন আরও ১৫টি পুরস্কার।
নেচার সাময়িকীর তথ্যমতে, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উপযোগী কাজ করার পরও পুরস্কারের জন্য আপনাকে প্রায় দুই দশক অপেক্ষা করতে হবে। সেই হিসাবে গড়ে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে আপনার বড় ধরনের প্রকল্প শুরু করা উচিত। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বিজ্ঞানীদের কাজ ও পুরস্কারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেড়েছে।
১৯৬০ সালের আগে যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাঁরা গড়ে ১৪ বছর অপেক্ষা করেছেন পুরস্কারের জন্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পুরস্কার ভাগাভাগি করার মানসিকতা থাকতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীরা সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ভাগ করে নেন। এ বিষয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ পুরস্কার দুজন বা তিনজন বিজয়ীর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। রসায়নে ৫৫ শতাংশ পুরস্কার একজন বিজয়ীকে দেওয়া হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে একক বিজয়ীর সংখ্যা কমে গেছে।
আরও পড়ুনগুগলের পাঁচ নোবেলজয়ী: সহকর্মীদের সাফল্যে গর্বিত সুন্দর পিচাই০৯ অক্টোবর ২০২৫পুরস্কারপ্রত্যাশীদের জন্য ভৌগোলিক অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নোবেল পুরস্কার জেতার সেরা সুযোগ পেতে হলে আপনাকে উত্তর আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করতে হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের প্রায় ৫৪ শতাংশই উত্তর আমেরিকায় জন্মেছেন। যদি আপনি অন্য কোথাও জন্মগ্রহণ করেন তবে নোবেল জেতার জন্য এখন পর্যন্ত সেরা বিকল্প হলো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়া। কারণ, এখন পর্যন্ত স্বল্প ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মাত্র দশজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
আরও পড়ুনগণিতের জন্য নোবেল পুরস্কার কেন দেওয়া হয় না০৯ অক্টোবর ২০২৫নোবেল পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা আপনি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারেন যদি আপনি এমন কোনো বিজ্ঞানীর পরীক্ষাগারে কাজ করেন যিনি এরই মধ্যে নোবেল জিতেছেন বা ভবিষ্যতে জিতবেন। পুরস্কার বিজয়ীরা প্রায়ই অন্য বিজয়ীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পান বা তাঁদের পরীক্ষাগার কাজ করেন।
বিজ্ঞানী জন ডব্লিউ স্ট্রাট ১৯০৪ সালে গ্যাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছিলেন। তাঁর ২২৮ জন একাডেমিক বংশধর (ছাত্র বা ছাত্রের ছাত্র) নোবেল জিতেছেন। জন ডব্লিউ স্ট্রাটের কাছ থেকে সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বিজ্ঞানী জোসেফ থমসন। এরপর থমসনও অনেক বিজ্ঞানীকে প্রশিক্ষণ দেন যাঁদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানে নয়জন ও রসায়নে দুজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে পুরস্কার জেতা ৭৩৬ জনের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ৭০২ জন একই একাডেমিক পরিবারের অংশ ছিলেন।
সূত্র: নেচার ডটকম
আরও পড়ুননোবেল বিজয়ীদের অনেকে কেন অভিবাসী হন১৩ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব ল প রস ক র জ ত র স ন ব ল প রস ক র প য় ছ ন প রস ক র ব র জন য আপন র সবচ য
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন ‘জীবনানন্দ গবেষকের’ সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের গলি–ঘুপচি ভ্রমণ
অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ইমেরিটাস অধ্যাপক, একজন গবেষক ও অনুবাদক। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড’ ক্লিন্টন বি সিলির চৌদ্দটি প্রবন্ধের একটি সংকলন যেখানে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সমন্বিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইউপিএল থেকে। এই প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ইউপিএল, যেখানে লেখক ক্লিন্টন বি সিলিসহ আরও অনেকে অংশ নেন বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে।
জুমের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্লিন্টন বি সিলি ও গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, কলকাতা থেকে পবিত্র সরকার, সিডনি থেকে সাইদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম ও ফারুক মঈনউদ্দীন। ইউপিএলের কর্ণধার মাহরুখ মহিউদ্দিনের স্বাগত উদ্বোধনী বক্তব্যের পর সঞ্চালনার দায়িত্ব নেন ড. নাজিয়া মনজুর। মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন, ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, শফি আহমেদ ও শামসুল বারী। ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রসচিব নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুই প্রয়াত শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ক্লিন্টন বি সিলি একজন জীবনানন্দ–অনুরাগী। তাঁর লেখা জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী ‘আ পোয়েট অ্যাপার্ট’-এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে ফারুক মঈনউদ্দীনের অনুবাদে ‘অনন্য জীবনানন্দ’ নামে। ক্লিন্টন সিলি এখানে দেখিয়েছেন, কেন জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যের ধারায় অনন্য বা অন্যদের থেকে আলাদা। এর প্রথম ভাগে জীবনানন্দের জীবনপথ, পারিবারিক প্রেক্ষাপট, কর্মজীবন ও সমসাময়িক সাহিত্যচর্চা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে তাঁর কবিতার বিষয় ও শৈলী বিশ্লেষণ, যেখানে প্রকৃতি, সময়, একাকিত্ব, মৃত্যু ও নারীচিত্রকে নতুন দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। লেখক দেখান, জীবনানন্দের কবিতা রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আধুনিকতার একান্ত নিজস্ব কণ্ঠস্বর সৃষ্টি করেছে। এখানে তিনি জীবনানন্দকে কেবল সাহিত্যিক নয়, বরং তাঁর সময়ের সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়ার এক নিয়ামক হিসেবে দেখিয়েছেন।
‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ক্লিন্টন বি সিলি বাংলা মঙ্গলকাব্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মহাভারত, রামায়ণ, মীর মশাররফ হোসেন ইত্যাদি বিষয়ে লিখেছেন গভীর, অন্তর্ভেদী ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সেই সঙ্গে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গ, রিজিয়া রহমান থেকে শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী ও রাজা প্রতাপাদিত্যও।‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ক্লিন্টন বি সিলি বাংলা মঙ্গলকাব্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মহাভারত, রামায়ণ, মীর মশাররফ হোসেন ইত্যাদি বিষয়ে লিখেছেন গভীর, অন্তর্ভেদী ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সেই সঙ্গে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গ, রিজিয়া রহমান থেকে শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী ও রাজা প্রতাপাদিত্যও।
অনুষ্ঠানে সিডনি থেকে যুক্ত অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলির বন্ধু এবং একসময়ের ছাত্র সাইদ চৌধুরী সিলি সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি জানান, ২০০৮ সালে কলকাতায় এই বই প্রথম প্রকাশের পর ২০১১ সালের দিকে প্রকাশনাটি বন্ধ হয়ে গেলে বইটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর এত বছর পর ইউপিএলের কাছে বইটি প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করা হয় এবং ইউপিএল কর্তৃপক্ষ সানন্দে বইটি প্রকাশ করে। সাইদ চৌধুরী ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বরিশাল জিলা স্কুলে ক্লিন্টন বি সিলির ছাত্র ছিলেন।
অধ্যাপক পবিত্র সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, হিন্দু রেনেসাঁ একসময় অনেকটা সত্যি ছিল। যে কারণেই হোক, বাঙালি বা ভারতীয় মুসলমানদের ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ ছিল, কারণ ইংরেজ এসে তাদের সাম্রাজ্য কেড়ে নিয়েছে। তারা ইংরেজি না শিখে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে। ফলে যাঁরা রেনেসাঁসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই প্রধান নামগুলো ছিল হিন্দু। যদিও তার মধ্যে ডিরোজিও ছিলেন। ডিরোজিও এসে আরেক ধরনের নেতৃত্ব তৈরি করেছিলেন। হিন্দুদের মধ্যে একটা নাস্তিকীয় ধারা তৈরি হয়েছিল। তারপর মুসলমানরা এলেন। তাঁদের মধ্য থেকে বড় লেখক আসেন মীর মশাররফ হোসেন, যার কথা ক্লিন্টন তাঁর বইতে বলেছেন। ধীরে ধীরে মুসলমান লেখকেরা দৃশ্যে আবির্ভূত হতে লাগলেন। তাঁদের একটা অভিযোগ ছিল হিন্দু লেখকদের সম্বন্ধে, কারণ, অনেক হিন্দু লেখকের মধ্যে একধরনের পক্ষপাত ছিল, যেমন বঙ্কিমচন্দ্র। তখন দেশপ্রেমের উপন্যাস, নাটক যেগুলো জনপ্রিয় হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছিল, পরাধীনতার আসল কারণ হচ্ছে মুসলমানরা। ফলে আমাদের স্বদেশি উপন্যাসে দেখা গেল, মুসলমান শাসকেরা আমাদের শত্রু, ব্রিটিশ নয়। ব্রিটিশদের কথা তাঁরা বলতে পারেননি। সরকারি চাকরি বা যেকোনো কারণে। যার ফলে মুসলমান লেখকেরা অভিমান প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে একটা সত্য আছে। কিন্তু তাঁর মতে, আমরা যদি বঙ্কিমচন্দ্র ভালো করে পড়ি, দেখতে পাব, বঙ্কিমচন্দ্র মুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে যতটা ছিলেন, মুসলমান সাধারণ মানুষদের ততটা সমালোচক ছিলেন না।
ক্লিন্টনের সঙ্গে পবিত্র সরকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়িয়েছিলেন। পবিত্র সরকার বলেন, মঙ্গলকাব্যের যে স্ট্রাকচার, তার সঙ্গে যে তাসের দেশের স্ট্রাকচারের একটা মিল আছে, এ পর্যন্ত কোনো বাঙালি সেটা বলেননি। ক্লিন্টন প্রথম বললেন। ক্লিন্টন আমেরিকান হয়ে বাঙালির মতো লিখেছেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে জীবনানন্দ হোক, মধুসূদন হোক, ভারতচন্দ্র হোক, রবীন্দ্রনাথ হোক বা মীর মশাররফ হোসেন—সবার সম্বন্ধে লেখাগুলোয় বাইরের দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি বাঙালি হিসেবেও একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র সরকারের বক্তব্যের সুর ধরে গায়ত্রী চক্রবতী স্পিভাক, ফারুক মঈনউদ্দীন ও ফিরদৌস আজিমের কাছে উপস্থাপক জানতে চান, যদি আমরা ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে চাই, তবে সাহিত্য সমালোচনা করতে একজনের কতটুকু অন্তর্দৃষ্টি বা ভেতরের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন?
ক্লিন্টনের সঙ্গে পবিত্র সরকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়িয়েছিলেন। পবিত্র সরকার বলেন, মঙ্গলকাব্যের যে স্ট্রাকচার, তার সঙ্গে যে তাসের দেশের স্ট্রাকচারের একটা মিল আছে, এ পর্যন্ত কোনো বাঙালি সেটা বলেননি। ক্লিন্টন প্রথম বললেন। ক্লিন্টন আমেরিকান হয়ে বাঙালির মতো লিখেছেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক বলেন, তিনি আইডেনটিটি পলিটিকসের বিরুদ্ধে। তাঁর মতে, ‘আমরা সবাই ভাষার দিক থেকে বহিরাগত।’ তিনি জানান, যখন পোস্ট-স্ট্রাকচারালিজমের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র পঁচিশ বছর। তিনি তখন সবে দেরিদার বইগুলো দেখছিলেন।
গায়ত্রীর মতে, তথাকথিত যে স্বাভাবিক ভাষা, সেটাও একদিক দিয়ে কৃত্রিম ভাষা। তিনি ভাষার মধ্যে ভাষার কঙ্কাল দেখতে পান। তিনি জানান, তাঁর একসময় বদভ্যাস ছিল, যখন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে যেতেন, যাঁরা বাংলা জানেন না, ইংরেজি কথাগুলো তাঁদের ইন্দো-ইউরোপীয় উৎসগুলো থেকে দেখাতে যেতেন, এটা দেখানোর জন্য যে বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে কতটুকু সম্বন্ধ আছে। গায়ত্রী চক্রবর্তীর মতে, ক্লিন্টন বি সিলির বাংলায় তিনি সেই জিনিস দেখতে পান।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউপিএল-এর প্রধান কার্যালয়ে ‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইটির প্রকাশনা উৎসব হয়