উপভাষার মতো প্রেম

কত রাত এখন—
আকাশ ঢেকে আছে পাহাড়ি মেঘে,
লাউয়াছড়ার বনে একেকটি কবিতার লাইন
পাখির মতো ঘুরে বেড়ায়,
আর দূরে—খুব দূরে,
বাঁশির আওয়াজ শোনা যায়।

শ্রীমঙ্গলের চা–বাগানের ঢালে
পাতা ও কুয়াশার ফাঁকে বাজে ধামসা,
আরও গাঢ় কোনো মাদল
নিঃশব্দে ছড়ায় বাতাসে।
তুমি সেই সুরের মধ্যকার ছায়া—
না দেখা, তবু জেগে থাকা।

আমাদের সম্পর্ক এখন
উপভাষার মতো—
ভাষা আছে, অথচ বোঝে না কেউ।
তুমি শহরের শেষ প্রান্তে—
ব্যস্ত রিকশার শব্দ আর কাঁচা গলির ধুলার ভেতর,
আমি লাইব্রেরির নীরবতায়
ছেঁড়া বইয়ের পাশে জমা থাকা কিছু বাতিল কথা।

প্রতিটি ভালোবাসা আজকাল
রাষ্ট্রের অনুমতির বাইরে চলে—
নিষিদ্ধ কিছু চিঠির মতো,
অথবা পোস্টার ছেঁড়ার আগে
যে মুহূর্তটা থেকে যায় দেয়ালে।

আমরা মুখোমুখি হই না,
তবু এক অন্তর সাক্ষাৎ ঘটে—
যেখানে প্রেম,
প্রতিবাদেরই আরেক ভাষা হয়ে ওঠে।
তুমি সেই ভাষার স্পন্দন—
ধামসার তালে নেচে ওঠা
নতুন দিনের পূর্বাভাস।

সংসার যদি হয়
রাষ্ট্রের একরেখা নকশায় আঁকা ঘর,
তবে আমাদের প্রেম—
কুয়াশায় ঢাকা শ্রীমঙ্গলের চা–বাগান,
যেখানে বাঁশির সুরে
মাদল নিজেই হয়ে ওঠে
নিঃশব্দ এক বিদ্রোহের কবিতা।

বইয়ের ঘ্রাণে ঝিমধরা বিকেল

চশমার কাচে এক বিকেল জমে আছে,
নীরব পাঠকের আঙুলে শব্দেরা কাঁপে।
পাতার পর পাতা উল্টে যায় নিঃশব্দে—
কে যেন বলে, ‘এই তো আমি, এক দিনের আমি!’

বইয়ের দোকানে ছড়িয়ে আছে রং,
‘সমতা’, ‘অসুখ’, ‘স্বপ্ন’, ‘বিদ্রোহ’—
নামের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জীবন
চেয়ে থাকে তার চোখের পাতায়।

নাম না জানা এক কবিতা খুলে বসে,
সময়ের পাশে বসে থাকা ছায়ার মতো,
যেন বিকেলটা ধীরে ধীরে মিশে যায়
কাগজের ঘ্রাণে, অক্ষরের আলিঙ্গনে।

সে জানে না, কে লিখেছে এই পঙ্‌ক্তি,
তবু প্রতিটি শব্দে খুঁজে পায় নিজেকে—
একান্ত, নিঃসঙ্গ, অথচ গভীরভাবে জীবিত,
বইয়ের ভেতর আটকে থাকা বিকেলের মতো।

বিবর্ণ রাহে

বিবর্ণ শ্যাম হয়ে গেছে রাহে,
অন্তরে তার শব্দহীন সুখ।
প্রেমের ছায়ায় আচ্ছন্ন হৃদয়,
ভালোবাসার সিঁড়ি থেকে পিছলে পড়েছে।

আমি হাতড়েছি রাহের অন্তর,
কিছুই পাইনি তেমন।
মায়ার মরীচিকায় ভাসমান হৃদয়,
প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন, নিরাশায় ভুগছে—
তাই, বিবর্ণ শ্যাম হয়ে পড়েছে রাহে।

অভেদ্য হৃদয়ের ফিসফিস

আমি কখনো শক্তিশালী জন্মাইনি।
আমি জন্মেছি ভঙ্গু—
একটি কাঁপতে থাকা আত্মা
এক জগতে যা কোমলতাকে খেয়ে ফেলে।

শক্তি আমাকে খণ্ডে খণ্ডে খুঁজে পেল,
পূর্ণতায় নয়।
এটি এল সেই নীরব যুদ্ধে
যা কেউ দেখেনি,
রাত্রিতে যখন আমি
আমার নিজের ত্বকের মধ্যে ডুবে যেতাম
এবং শ্বাসের জন্য হাতড়াতাম
যা আমাকে চাইত না।

আমি দাঁড়িয়েছি সেই প্রান্তে
যেখানে নিজেকে শেষ করার লোভ ছিল,
এবং শুনেছি ছায়াদের ফিসফিস
যা আমাকে নামহীন,
অমূল্য,
ভুলে যাওয়া বলেছে।

কিন্তু আমার ভেতরের কিছু প্রাচীন—
যা আলো মনে রাখে—
ফিসফিস করে বলল: এখন নয়।

তাহলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ভয়হীন হয়ে নয়,
কিন্তু ভয় আমাকে শেষ করতে পারল না।
ভাঙা হাড় নিয়ে,
কম্পমান হাত নিয়ে,
নীরবতার ভারে ভারাক্রান্ত চোখ নিয়ে
আমি উঠে দাঁড়ালাম।

এবং আমি শিখেছি—
ক্ষত মানে আর ব্যথা নয়।
এগুলো হলো দরজা।
আমার ত্বকে খোদিত প্রতিটি রেখা
বাঁচার স্মৃতি,
যুদ্ধের মানচিত্র
যা আমাকে চিরন্তন করেছে।

বিবেকের রংধনু

ভালোবাসার কথা বললে
তোমার বিবেকের রংধনু উন্মুক্ত হয়—
সাত রঙের ভেতর তুমি খুঁজে পাও মুক্তি,
আমি খুঁজে পাই নির্বাসন।

তুমি আলোর দিকে হাঁটো,
আমি অন্ধকারের শেকড়ে ডুবে যাই।
তুমি যেখানেই রং ছুঁয়ে দাও,
সেখানে আমি রক্ত খুঁজে পাই।

জগতের ভিড়ে থেকেও
আমি হয়ে যাই জগতের বাইরে—
অপাঙ্‌ক্তেয়, অবাঞ্ছিত,
এক অদৃশ্য ব্যথার নাগরিক।

আমার সমস্ত উচ্চারণ
তোমার নাম হয়ে ফিরে আসে,
কিন্তু তোমার নাম
আমার জন্য আর কোনো ভাষা রাখে না।

তবু, ভালোবাসা একদিন
তোমাকেও নির্বাসিত করবে—
যেদিন আমার নীরবতা
তোমার সমস্ত রং গ্রাস করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ভ তর বইয় র ন রবত

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে স্বাস্থ্য সচেতনতা-বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো ‘স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ট্রেনিং একাডেমিতে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরীক্ষামূলক চালু ডিসেম্বরে, নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষা

ধ্বংসপ্রাপ্ত পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কার্যক্রম চলমান: অর্থ উপদেষ্টা

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, “কর্মক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন কাজ মানসিক ও শারীরিক চাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমরা সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হলেও ব্যস্ততার কারণে তা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। তাই এমন সচেতনতামূলক কর্মশালা আমাদের নতুনভাবে ভাবতে ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।”

তিনি বলেন, “ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্মীদের শারীরিক সুস্থতা রক্ষায় বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবান্ধব উদ্যোগগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

কর্মশালায় ডিএসই’র ফিজিশিয়ান ডা. এফএম আরাফাত হাশমী স্বাস্থ্য সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, মানসিক সুস্থতা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ঢাকা/এনটি/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ