ব্রাজিল আর বাংলাদেশের ঋতুকাল পুরোই বিপরীত। ব্রাজিলে এখন বসন্ত চলছে। ভ্যাপসা গরম ও হঠাৎ বৃষ্টি। কিন্তু এই আবহাওয়াকে বিবেচনায় না নিয়ে জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-৩০) ভেন্যুর দুর্দশা করা হয়েছে। বাকুর মতো বেলেমেও চারদিকে প্লাস্টিক দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। প্যাভিলিয়নগুলোতে বদ্ধ গরম, চারদিকের শব্দ আর কোলাহালের কারণে আলাপচারিতার পরিবেশ নেই।

১৪ নভেম্বর সকাল থেকে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। ইউএনএফসিসিসি থেকে ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়, সম্মেলনের প্রবেশদ্বার মেরামত করা হচ্ছে। তাই আপাতত সেটি বন্ধ। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় আদিবাসীকর্মীরা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। ১৪ নভেম্বর সকাল থেকে সম্মেলনস্থলের বাইরে প্রতিবাদ চলছিল। প্রতিবাদস্থলে বেলেম সম্মেলনকক্ষের দমবন্ধ নির্মাণ নিয়ে অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেন।

বাকুর মতো বেলেমেও চারদিকে প্লাস্টিক দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। প্যাভিলিয়নগুলোতে বদ্ধ গরম, চারদিকের শব্দ আর কোলাহালের কারণে আলাপচারিতার পরিবেশ নেই।

আমাদের ঘর, বসতি, স্থাপনা কীভাবে জলবায়ু সংকট সামাল দেবে, এসব দেনদরবার এখনো জলবায়ুমঞ্চে ওঠেনি। দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, লবণাক্ততা, বজ্রপাত কিংবা খরাকে বিবেচনায় রেখে নগর–পরিকল্পনা বা স্থাপত্য অবকাঠামো তৈরি হয় না। কেবল মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে এখন নিষ্ঠুর দালানকোঠা তৈরি হয়। একটা পাখি, বেজি, ব্যাঙ কিংবা মৌমাছি বাসা বানাতে পারে না।

আরও পড়ুনসুন্দরবন থেকে আমাজন বন ঝাঁঝরা কেন ২১ ঘণ্টা আগে

কিন্তু বসতি স্থাপন ও গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে গ্রামীণ নিম্নবর্গ প্রকৃতি ও জলবায়ুকে বিবেচনায় রেখেছে। জবরদস্তি করে গ্রামীণ লোকায়ত স্থাপত্যবিদ্যাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। গড়ে তোলা হচ্ছে বিতিকিচ্ছিরি, দমবন্ধ সব অবকাঠামো। জমির মাটি পোড়ানো ইট, টিন, অ্যাসবেস্টস, কাচ, স্টিল, প্লাস্টিকে কী বিপজ্জনক রং! যাচ্ছেতাই উপকরণ দিয়ে ঘর, বিদ্যালয়, উপাসনালয় কী হাসপাতাল বানানোর প্রতিযোগিতা জারি আছে। এসব নতুন স্থাপনা ও অবকাঠামো জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য ও জনসংস্কৃতিবিরোধী। ‘শিফট (এসএইচআইএফটি)’ নামের বৈশ্বিক স্থাপত্য আন্দোলনের নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ক্রিস্টিন লিমাত্রি পূর্ব ইউরোপের বিশেষত নরওয়ের স্থাপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ১৪ নভেম্বর বেলেম জলবায়ু সম্মেলনের এক আলোচনায় তিনিও বলেন, আধুনিক স্থাপত্য-ভাবনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।

আলজেরিয়ার তরুণ প্রজন্মও এই ধরনের স্থাপত্য পছন্দ করছে। মাহিদির আলাপ শুনে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালদের নকশা করা মাটির ঘরের কথা মনে ভাসে।বিশ্বজুড়ে গ্রামীণ লোকায়ত স্থাপত্য

আলজেরিয়ার দক্ষিণে ঘারদাইয়া অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরকে বলে ‘কসুর’। কাদামাটি ও পানি দিয়ে তোরাব (দেয়াল) এবং নাখলা নামের একধরনের শুকনা তালপাতা দিয়ে ছাউনি দেওয়া হয়। কসুর ঘরগুলো খুব সাজানো থাকে এবং দেয়ালে জ্যামিতিক নকশা আঁকা হয়। উজ্জ্বল লাল, কমলা বা বাদামি রঙের এই ঘরগুলোর দরজা বানানো হয় সিডার কাঠ দিয়ে। আলজেরিয়ার ইন্টারব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাহিদি শেরিফ কাইদ ইয়োসেফ ১৪ নভেম্বর এক আলাপচারিতায় বলেন, কসুর ঘরগুলো তাপপ্রতিরোধী। মসজিদ ও বিদ্যালয়ও এই প্রযুক্তিতেই তৈরি হয়। আলজেরিয়ার তরুণ প্রজন্মও এই ধরনের স্থাপত্য পছন্দ করছে। মাহিদির আলাপ শুনে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালদের নকশা করা মাটির ঘরের কথা মনে ভাসে।

আরও পড়ুনমহেশরা কোথায় পালাবে?১৪ নভেম্বর ২০২৫

ইথিওপিয়ার খরাপীড়িত অঞ্চলে মাটি, সানব্লেত নামের লম্বা ঘাসের শুকনা পাতা, কাঠ দিয়ে বানানো ঐতিহ্যবাহী ঘরের নাম ‘গজু’। একটু বড় ধরনের গজুকে আদারাস বলে। ইথিওপিয়ার নৃবিজ্ঞানী ফাসিল গেবেইয়েহেন ১৪ নভেম্বর এক আড্ডায় বলেন, গজু ঘরগুলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক। উইপোকা প্রতিরোধী এ ঘরগুলো আবহাওয়া উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে ঘর বানানোর সানব্লেত ঘাস ও প্রাকৃতিক উপকরণ কমছে। বর্তমানের টিন, ইট ও দালানবাড়ি মানুষকে আরাম দিতে পারছে না।

আমাজন বনের আদিবাসীদের লোকায়ত স্থাপত্য বোঝার জন্য স্থপতি জোহান ভ্যান লেংগারের ‘আর্কিটেকচার অব দ্য আমাজনিয়ান ইন্ডিয়ান (২০১৩) ’ বইটিও গুরুত্বপূর্ণ।পাভেল পার্থ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘরগ ল জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে দুষ্কৃতকারীদের আগুনে পুড়ল কাভার্ডভ্যান

ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া বাইপাস এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে একটি কাভার্ডভ্যান। শনিবার (১৫ নভেম্বর) মধ্যরাত ১২টার দিকে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটিতে আগুন দেয় তারা।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, “রাত ৮টার দিকে চালক কাভার্ডভ্যানটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে বাড়ি চলে যান। দুষ্কৃতকারীরা রাত ১২টার দিকে গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি।”

আরো পড়ুন:

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধ

কাশিয়ানীতে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে এসব করা হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ