১৮৮০ সালে বিশাল জনসমক্ষে ভাষণ দেওয়ার পর উল্লসিত জনতা চিৎকার করে তাঁর উদ্দেশে বলে উঠেছিল, ‘প্রোফেট, প্রোফেট’। তাঁর মৃত্যুর পর তুর্গেনেভ বলেছিলেন, ‘দা সাদ অফ রাশিয়া’ বা ‘রাশিয়ার শয়তান’। একই সঙ্গে সাধু এবং শয়তানের মুকুট পরে তিনি এখনো রাজ করছেন সাহিত্যজগতে। লেখার মাধ্যমে ব্যক্তির মনোজাগতিক যে রূপ তিনি তুলে ধরেছিলেন, তা অনন্য। অবশ্য অনেকেই সেই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে পারেননি। দস্তয়েভস্কি হয়তো এ কারণেই বলেছিলেন, ‘যত আমি মনুষ্যত্বকে ভালোবাসতে থাকি, তত আমি মানুষকে কম ভালোবাসতে থাকি।’
এই ‘সাধু এবং শয়তান’কে দেখার ইচ্ছা আমার বহুদিনের।
সেন্ট পিটার্সবার্গে আমার হোটেলের আশপাশেই দর্শনীয় সব জায়গা। এই বিদেশ–বিভুঁইয়ে ইংরেজি না জানা লোকালয়ে এখন অবধি কোনো অসুবিধা হয়নি। এ শহরে বাস, ট্রামে চেপে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি, এখন পড়বে। ম্যাপে দেখে নিলাম, মেট্রো ধরে কত দূরে সাধু এবং শয়তান লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির বাড়ি। বইয়ে পড়ে, ছবি দেখে দেখে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে তাঁর বাড়ির ছবি। এবার শুধু যাওয়া বাকি রয়েছে। আমার হোটেল থেকে তিনটা স্টেশন পরই বইয়ে পড়া, স্বপ্নে দেখা বাড়ি। ম্যাপে এ–ও দেখাচ্ছে যে এখান থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্ব সেই বাড়ির। হেঁটেই চলে যাওয়া যায়। তবে এ দেশে গুগল ম্যাপ কাজ করে না আর এ দেশের ম্যাপে আকছার আমি পথ হারিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরি। মেট্রো ধরেই চললাম। তিনটা স্টেশনই তো। মেট্রো থেকে নেমে খেই হারিয়ে ফেললাম৷ এ শহরে সব পথ সব বাড়ি একই রকম দেখতে। স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি ইংরেজি জানেন না। আরেকজনকে জিজ্ঞেস করে দিক ঠিক করলাম যে পুবে যাব না পশ্চিমে। এরপর রাজকীয় পথ ধরে হাঁটতে থাকলাম কিছুক্ষণ। আশপাশের ভবনগুলো দেখে মনে হয়, একেকটা বিস্তৃত প্রাসাদ যেন। প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে ভাস্কর্য বা ফুল–লতা–পাতা খোদাই করা। পথে নিঃশব্দে গাড়ি চলছে। পথের রূপ দেখতে দেখতে হাঁটতে হাঁটতে আমি অনেকখানি চলে এসেছি। ফিওদর দস্তয়েভস্কির বাড়ি ফেলে এলাম নাকি! ছিমছাম পথ, পথের ধারের বাড়িঘর আর বাড়ির নিচের কফি শপ দেখতে দেখতে এখানেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। সামনে চওড়া রাস্তা, রাস্তা পার হওয়ার আগে একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এই পথ ধরে ডানে গেলে মিলবে তাঁর বাড়ি। আমি রাশিয়ান ভাষা পড়তে জানি না, বাড়ির নম্বর দেখে চেনার উপায় নেই। তিনি যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন, তা ছবি দেখে চিনি। খুঁজে না পেলে যে কী হবে! অবশ্য তাঁর মিউজিয়ামে যোগাযোগ করে জেনে নিয়েছি কীভাবে যেতে হবে। তা–ও তো হারিয়েই যাচ্ছি মনে হয়।
দস্তয়েভস্কির অ্যাপার্টমেন্ট ভবন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শয়ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ, প্রতিশ্রুতির কী প্রয়োজন, আমরা তো সুনীলের কবিতায়ই শিখেছি
রশিদ খান। নাহ্, আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান নন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং আর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কথা শুনে মনে পড়ে গেল শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী রশিদ খানের কয়েকটি কথা। প্রয়াত ওস্তাদ রশিদ খান কথাগুলো এই প্রতিবেদককেই একবার বলেছিলেন বৈঠকি ঢঙে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
শচীন টেন্ডুলকারের পাঁড় ভক্ত রশিদ খান শৈশবে ক্রিকেটার হওয়ারই স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর মামা নিসার হুসেইন খান তাঁকে সে পথে হাঁটতে দেননি। একপ্রকার জোর করেই নিজেদের গড়া সংগীতরাজ্যে ঢুকিয়ে দেন রশিদ খানকে। শাস্ত্রীয় সংগীতের বড় সংগীতকার হয়েও রশিদ খান ক্রিকেটকে অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেননি; বরং তিনি ক্রিকেট আর সংগীতকে দেখেছেন একই রূপে!
যে সাক্ষাৎকারের কথা বলা হলো, সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটটা সংগীতের মতোই। একেকটা কাভার ড্রাইভ, পুল, হুক—এগুলো তো সংগীতের বিভিন্ন ধারার মতোই রেশমি পরশ নিয়ে এগিয়ে চলে।’ সংগীত আর ক্রিকেটকে এক বিন্দুতে মেলানোর আলোচনায় তিনি আরেকটি বেশ মজার উদাহরণ টেনেছিলেন, ‘দেখুন, এটা অনেকটা গানের মতোই। একটি গানের তিনটি ভাগ যদি আপনি করেন, কী আছে সেখানে? আভোগ, অন্তরা, স্থায়ী।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকাল ধবলধোলাই হয় বাংলাদেশ