রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টায়। প্রায় ২০ দিনের প্রচার শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) হবে ভোট গ্রহণ।

ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তা রক্ষায় ২ হাজার পুলিশ, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। 

ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের দিন এবং তার আগের ও পরের দিন বহিরাগতদের প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভোট দেবেন যেভাবে
ভোট দেওয়া ও ফলাফল তৈরির প্রক্রিয়া, নির্বাচনি আচরণবিধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদক।

অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে ঢুকে পোলিং অফিসারের কাছে থাকা তালিকায় স্বাক্ষর করে ভিন্ন রঙের ছয়টি ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। পরে গোপন বুথে গিয়ে তা পূরণ করতে হবে।

প্রথম ব্যালট পেপারে থাকবে সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক; দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে থাকবে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদ, পঞ্চম ব্যালটে থাকবে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি এবং ষষ্ঠ ব্যালটে থাকবে হল সংসদের প্রার্থীদের তালিকা। ভিন্ন রঙের ব্যালট গোপন বুথে পূরণ শেষে ভোটারদের ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে রাখতে হবে।

প্রত্যেক ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য সময় পাবেন ১০ মিনিট করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে থাকা ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম লিখে নিয়ে যেতে পারবেন ভোটাররা। প্রার্থীরাও তাদের প্যানেলের তালিকা ভোটারদের দিতে পারবেন। 

নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা ডাকসু ও জাকসুতে ভোটারদের প্যানেলের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক অভিযোগ দেখেছি। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সকল প্রার্থী ও প্যানেল তাদের প্যানেলের তালিকা ভোটরদের দিতে পারবেন। কারণ, আমরা দেখেছি, একজন ভোটারের পক্ষে এক সঙ্গে ৪১ জন প্রার্থীর নাম মনে রাখা সম্ভব না। ভোটার যেন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করেন এজন্যই আমরা কাগজ নিয়ে প্রবেশের সুযোগ রাখছি।”

নির্বাচনের ফল ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে

অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর পরে সব কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফল তৈরি করা হবে। একটি হলের ফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। পূর্ণাঙ্গ ফল পেতে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা লাগতে পারে। 

ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা। সাংবাদিকরা সম্প্রচার করতে পারবেন। ভোট গণনার প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমাদের ১৭টি হলের জন্য ১৭টি কেন্দ্রে ৯ শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ৪০০ গজের একটি বলয় করে চৌহদ্দি নির্মাণ করা হবে। এর ভেতর কোনো প্রার্থী প্রবেশ করতে এবং প্রচার চালাতে পারবেন না। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়।

নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করাতে চাই না। আমাদের নিরাপত্তায় পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে। বিশেষ প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও বিজিবি কাজ করবে।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, আমরা খুবই আশাবাদী। নির্বাচনি পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচার চালাচ্ছেন। দুই-একটা ব্যত্যয় যে ঘটছে না, তা নয়। তবে, বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা এখনো পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছেন। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না, তারা শিগগিরই বুঝতে পারবেন। রির্বাচন কমিশন নানারকম অপপ্রচার, খারাপ কথা হজম করেছে শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।

তিনি আরো বলেন, আচরণবিধির বিষয়টা সকলের খেয়াল রাখা উচিতত। এখানে সবাই সচেতন নাগরিক, সুতরাং বারবার এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, রাকসু প্রয়োজন কোথায়, সেটা আমদের বুঝতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদেরকে নেতাদের গুনে চলতে হতো, কিন্তু রাকসু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর নেতাদের গুনে চলতে হবে না।

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ট গ রহণ প রব ন র জন য প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ, ৪ হলে সভা বাতিল করল ছাত্রশিবির

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলে চারটি আবাসিক হলের প্রজেকশন মিটিং (পরিচিতি সভা) স্থগিত করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার রাতে শহীদ জিয়াউর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, নবাব আবদুল লতিফ হল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলে প্রজেকশন মিটিং আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন সকাল ১০টার দিকে আচরণবিধিতে নতুন নীতিমালা যুক্ত করেছে। সেখানে বলা হয়, হলের বাইরে থেকে চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেম আনা যাবে না। ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে তারা আজকের প্রজেকশন মিটিং স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল খালেদা জিয়া হল ও মন্নুজান হলে সভা আয়োজন করে। ওই সময় খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া করা হয়। কিন্তু হল প্রশাসন জানায়, হলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করতে হবে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার (স্যান্ডউইচ, চকলেট, সস) আনা হলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোস্তফা কামাল আকন্দ ও অন্য কর্মকর্তারা এসে খাবার ঢোকাতে বাধা দেন।

এ ঘটনায় প্যানেলের প্রার্থী ও ছাত্রশিবির নেতারা নির্বাচন কমিশন ও হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানান।

নির্বাচন কমিশন আজ আচরণবিধির ৪ নম্বর ধারা ‘স্পষ্ট করে’ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলের অভ্যন্তরে নির্বাচনী সভায় বাইরে থেকে কোনো চেয়ার, আসবাব বা মাইক/সাউন্ডবক্স আনা যাবে না। হলের নিজস্ব আসবাব ও সাউন্ডসিস্টেম (যদি থাকে) ব্যবহার করেই নির্বাচনী সভা সম্পন্ন করতে হবে। সভায় কোনো প্রকার নাশতা বা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা যাবে না।

এর আগে হলের সভায় খাবার বিতরণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে গত মঙ্গলবার ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।

নির্বাচন ঘিরে তিন দিন মিছিল-সমাবেশ ও অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা

রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে তিন দিন মিছিল, সমাবেশ ও অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৭ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তর ও চারপাশের ২০০ গজ এলাকায় সব ধরনের মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মাইকিং, আতশবাজিসহ ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার, অস্ত্রশস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা বা লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তাকর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই হাজার পুলিশ, ছয় প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাবের সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কেউ কেন্দ্রের নিরাপত্তায়, কেউ ক্যাম্পাসে ও কেউ বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দল নিরাপত্তা তদারক করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আচরণবিধি ভঙ্গ, ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা
  • নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ, ৪ হলে সভা বাতিল করল ছাত্রশিবির
  • রাকসু: ছাত্রশিবিরের পরিচিতি সভার খাবার ফেরত দিল নির্বাচন কমিশন
  • শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থী-সমর্থকেরা, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশা-নিরাশার দোলা
  • ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
  • শিবির–সমর্থিত প্যানেলের সভার জন্য আনা নাশতা ফেরত পাঠাল নির্বাচন কমিশন
  • চাকসু: ছাত্রদলের ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ