চাকুসর ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের
Published: 16th, October 2025 GMT
পঁয়ত্রিশ বছরের ফাঁড়া কাটিয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে শীর্ষ দুই পদ ভিপি ও জিএসে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা; অবশ্য চমক সৃষ্টি করে এজিএস পদে বিজয়মালা উঠেছে ছাত্রদলের প্রার্থীর গলায়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণের পর সন্ধ্যার পর ভোটগণনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা বাদে মধ্যরাত থেকে ফলাফলের ঘোষণা আসতে থাকে; যেখানে বেশিরভাগ পদে লড়াই হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে। ফল এসেছে শিবিরের পক্ষেই বেশি।
আরো পড়ুন:
প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট
কাল ভোট, চলছে রাকসু ভবন প্রস্তুতের কাজ
এর মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের পর আবার চাকসুর নেতৃত্বে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী আদর্শের এই ছাত্রসংগঠন। অবশ্য ১৯৯০ সালের চাকুস নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা জেতেনি। সেবার ঐক্য প্যানেল শিবিরকে পরাজিত করেছিল।
ডাকসু ও জাকসুর পর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন হলো, যেখানে ছাত্রদল তুলনামূলক ভালো ফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উদারপন্থি প্রগতিশীলতার চর্চার আতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নেতা বা প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বেছে নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, সেখানে শিবির-ছাত্রদল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস রয়েছে। অবশ্য ছাত্ররাজনীতির দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিবিরের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত।
বুধবার রাত থেকে গণনা শুরু হলেও চাকসুর মোট ১৫টি কেন্দ্রের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করতে ভোর হয়ে যায়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা করা ফলাফল অনুযায়ী, চাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবিরের ইব্রাহিম রনি। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ছাত্রদলের সাজ্জাদ হৃদয়ের। অবশ্য দুজনের ভোটের ব্যবধান উল্লেখযোগ্য। যদিও ডাকসু ও জাকসুর মতো হয়নি।
চাকসুর জিএস পদে প্রায় সব কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শিবিরের সাঈদ বিন হাবিব। ছাত্রদলের শাফায়াত তাকে চ্যালেঞ্জ জানালে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। অবশ্য শায়ায়াতও ডাকসু-জাকসুর ছাত্রদল প্রার্থীদের মতো ভেসে যাননি; বেশ ভোট তার ঝুলিতে আনতে পেরেছেন।
চাকসু ভোটে সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছেন ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। এজিএস পদে একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই পদে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি সেভাবে।
চাকসু নির্বাচনে এবার মোট ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোর নাগাদ সব কেন্দ্রের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র ফল ফল অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে কেমন খেলল আনচেলত্তির ব্রাজিল
গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন ‘ফর্ম’ বা ‘আইডিয়াজ’-এর কথা। তাঁর মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি চিরস্থায়ী, নিখুঁত ও আদর্শ রূপ আছে। আমরা পৃথিবীতে যা দেখি, তা আসলে সেই নিখুঁত রূপেরই অনুকরণ। যেমন কালো রঙের একটা নিখুঁত ধারণা আমাদের মনের ভেতরে আছে বলেই আমরা চারপাশে কালো রঙের নানা রূপ দেখি। বাস্তবে আমরা যে কালো দেখি, সেটা আসলে সেই নিখুঁত কালোরই প্রতিলিপি।
ফুটবলকে যদি প্লেটোর এই ধারণার আলোকে দেখি, তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সৃষ্টি ‘জোগো বনিতো’কে নিখুঁত ফুটবল বলা যায়। আমরা যে ফুটবলের নান্দনিকতা, কৌশল আর সৌন্দর্য দেখি, তা মূলত সেই নিখুঁত ফুটবলেরই প্রতিফলন। আমাদের চোখ সব সময় সেই আদর্শ ফুটবল খুঁজে বেড়ায়। কোথাও তার আভাস পেলেই আমরা উল্লসিত হয়ে উঠি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা থাকে ব্রাজিলের কাছেই, যারা নিজেরাও অনেক আগেই সেই খেলা পেছনে ফেলে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ঘিরে আবারও সামনে এসেছে ‘জোগো বনিতো’র আলাপ। সেদিন ৯০ মিনিট ধরে অসাধারণ ফুটবল খেলেছিল ব্রাজিল। এরপরই কিছু সংবাদমাধ্যম ও সমর্থক প্রশ্ন তোলে—ব্রাজিলের ‘জোগো বনিতো’ কি আবার ফিরে এল? তবে প্লেটোর ফর্মের যুক্তি মেনে নিলে, সেই নিখুঁত রূপ আসলে কোথাও নেই।
আরও পড়ুনদক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে যা বললেন ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি১০ অক্টোবর ২০২৫বরং মনে হয়, ব্রাজিলও হয়তো ভুলে গেছে সেই রূপটা কেমন ছিল। কিন্তু হারানো ঐতিহ্যের প্রতি টানই মাঝেমধ্যে আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই খেলার কথা। ‘জোগো বনিতো’র আলোচনাটা সরিয়ে রাখলেও, সেদিন ৫–০ গোলে জেতার পথে ব্রাজিলের ফুটবল সত্যিই ছিল চোখধাঁধানো। অনেক দিন পর সমর্থকেরা হয়তো খেলা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন। যদিও পরের ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে সেই ব্রাজিলকে পাওয়া গেল সামান্যই।
প্রথমার্ধে ২–০ গোলে এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩–২ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। আনচেলত্তি এ ম্যাচে দলে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন। তবু প্রশ্ন উঠতেই পারে—আসল ব্রাজিল কোনটা? দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দেওয়া দল, নাকি জাপানের বিপক্ষে এগিয়েও হেরে যাওয়া দল? হয়তো আসল ব্রাজিলকে খুঁজতে হবে এই দুই রূপের মাঝামাঝি কোথাও।
ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি