Risingbd:
2025-10-16@11:44:53 GMT

অনাথ আশ্রমে একটি বেদনা বেলা

Published: 16th, October 2025 GMT

অনাথ আশ্রমে একটি বেদনা বেলা

আমার মেয়ে শুমশুমাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এতিমখানায় গেলাম। জীবন কত অসহায়ত্বে ভরপুর হতে পারে- তাই দেখানোর ইচ্ছা ছিল আমার। আমি মনে মনে সব সময়ই ভাবি আমার শুমশুম একদিন শিশুদের জন্য অত্যন্ত দরদী হয়ে উঠবে। বাবা নেই, মা নেই এমন ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে একটা বেলা কাটানো ছিল আমার জন্য এক অচেনা অজানা পরানপুরা অভিজ্ঞতা যেন। 

বারে বারেই মনে হচ্ছিলো আলহামদুলিল্লা স্রষ্টা আমাদের ওপর কত বড় রহমত প্রদানকারী, এদের মতন এমন নিঃসঙ্গ একা একা বেড়ে ওঠার জীবন উনি আমাদের দেননি।

আরো পড়ুন:

সন্তান পরীক্ষায় ফেল করেছে, বাবা-মায়ের করণীয়

ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খেতে পারেন

দেশে এলে প্রতিবারই আমার পরলোকগত পিতা ও মরহুম শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জন্য কিছু মিলাদের আয়োজন করি।এবারও তাই, তবে এবার একটু অন্য রকম ছিল। প্রতিবারের মতন মিলাদের পর খাবারের প্যাকেট বিতরণ করে চলে আসিনি। আমরা কিছু দুঃখী শিশুর পাশে গিয়ে বসতে চেয়েছিলাম কিছুটা সময়। কিছুটা সময় ওদের সাথে থাকার চেষ্টাতে ওদের হয়তোবা তেমন কোন লাভ হয়নি কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো,  আহারে মানব জীবন।

সেদিন বৃষ্টি ছিল খুব। তারপরও আমরা অদম্য। ৩ অক্টোবর, ২০২৫ মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো,  আমরা হাজির হলাম ছোটোখাটো এই এতিম আশ্রমে। বলেছিলো ১৬০  জন এতিম আছে কিন্তু ছিল আরো কম, শুক্রবার বলে অনেকে অনুপস্থিত, তারা গিয়েছে তাদের আত্মীয়দের কাছে। আমাদের  আয়োজন ছিল ১৬০  জনেরই। আসরের নামাজের পর  ফিরে আসবে ওদের অনেকেই, তারাও তখন খাওয়া পেয়ে যাবে বলে জানালো।

রান্না হয়েছে এতিমখানার মাঠে, মিলাদ হয়েছে  মসজিদে, দোআ হলো এতিমদের ঘরে বসে, সকালেই কোরআন খতম করে রাখা হয়েছিল। তারপর ভোজন পর্ব।

মুরগি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম সিদ্ধ, কোক, আমিত্তি— এই ছিল মেনু।রাসেল, শাহাদাত, আনিসসহ আরও কয়েকজন শিশু এসে আমাদের সবার সাথে হাত মেলালো। আমার সামর্থ নেই প্রতিটি হাত ভরে দেওয়ার। কিন্তু বিশ্বাস করি এমন একটা দিন এই পৃথিবীতে আসবে যেদিন সবাই এগিয়ে আসবে, হাত ধরে টেনে তুলতে এই মানব শিশুদের।পরের মুহূর্তেই মনে হলো, তাই কী হয়? 

জীবনে আসলেই সেরকম কিছু হয় না, হবে না। জীবনের বাস্তবতা ভিন্ন। সবার ক্ষেত্রে সমান্তরাল কোনো পরিবর্তন আসে না। কারো কারো জন্য হয়তোবা আসবে। আহা স্রষ্টা কেন আমাকে ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ বা জেফ বেজোস কিংবা বিড়লা টাটাদের মত বড়োলোক করলেন না, এই ভেবে সত্যিই আমার এই প্রথম মনে বড় কষ্ট হলো। 

ওরা যে খুব উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখছিলো তাও কিন্তু না, বরঞ্চ আমি-ই দেখছিলাম। ঘরের চারদিকে মাটিতে রাখা টিনের ট্রাঙ্ক বা সুটকেস, তার ভেতরে কি আছে- জানার বড় ইচ্ছে হতে থাকলো আমার। এক শিশুকে তা জিজ্ঞেস করতেই সে জানতে চাইলো, আমি ওখান থেকে কি কি নিয়ে যেতে চাই ! ওরা কেবল হারাতে শিখেছে তাই হয়তোবা আমাকে অমন বললো।

এক দেয়ালে এক বাচ্চা কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলো, জানতে চাইলাম কে ধুয়ে দিলো? বললো, আর কে? আমি। ওরাই ওদের সবটুকু। এখন থেকেই স্বাবলম্বী। আমার মেয়ে যেহেতু অন্য দেশে বড় হয়ে ওঠা একজন মানুষ, সে আমাদের দেশীয় দারিদ্রতায দেখে অতি মর্মাহত। আমি এই জীবনে গরিব ফকির মানুষ প্রচুর দেখেছি, তাই আমার কষ্টের ভার অনেক কম। অরফানেজ বিশ্বময় থাকবে এটা সে বুঝে, মানেও, কিন্তু এতো নিম্মমানের জীবনযাপনের চিত্র আমার শুমকে ব্যথিত করেছে। অমানবিক এক জীবন তারা যাপন করছে।

আমাদের আগে খাওয়ার জন্য ডাকা হলো, খাদেমদের জানালাম আমরা খাওয়া তদারক করবো, বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হলে তারপরে খেতে বসবো। আমরা ওদের খাওয়া তদারকিতে বেশ অবাক হয়ে দেখলাম ওরা সবজি খেতে চায়না। ডালও না। অনেকে দেখলাম ভাতের ভেতর মুরগির মাংস লুকিয়ে রাখলো বা ভাত দিয়ে লেগ পিসগুলো ঢেকে রাখলো। জানতে চাইলাম এটা কেন, উত্তরে কেবল হাসলো। সম্ভবত এটাই খেলা তাদের। নিজেদের খেয়ালের কোনো এক প্রকাশ এটি।

একজন কোক নিয়ে ঝাঁকি দিতে থাকলো, আমার মেয়ে বললো, মা ওরা যদি এখন ঢাকনা খুলে তাহলে ছিটকে সব বের হবে। আমি নিষেধ করলাম এটি করতে, ৭/৮ বছরের ছেলেটি দ্রুত তা করা থেকে বিরত থাকলো। কিন্তু একটু পরেই আমার মেয়ে বললো, তুমি পেছন ফিরতেই সে আবার বোতল ঝাঁকিয়েছে, খুলেছে, তারপর ফেনা ফেনা হয়ে যে কোক বেরিয়েছে তাই আনন্দ করে সারা মুখে মেখে খেয়েছে। বলে আমার মেয়ে চোখ বড় বড় করে ওই ছেলের জন্য  ‘হোয়াট এ ফানি বয় হি  ইজ ’ জাতীয় ভঙ্গি করে হাসলো। আমার ইচ্ছে হলো ঘাড় ফিরিয়ে বলি, আচ্ছা পাজি ছেলে তো তুই !

আমরা বাচ্চাদের খাওয়া শেষে ওদের ঘরে খেতে বসলাম। আমার সাথে আমার আম্মা আছেন। বোন, বোনের বর ও ওদের ছেলে আছে, আমার বর এবং ভাসুরও আছেন। আমরা এতিমখানার প্লেটে খেতে বসলাম। আমরা পেপার প্লেট সাথে এনেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ওখানকার প্লেট বা ‘বর্তন’ বা বাসন-কোসন  আশাতীত ভাবেই ভালো। কেন যে আমার মনে হচ্ছিলো টিনের প্লেট থাকবে তা জানি না কিন্তু দেখলাম বেশ সুন্দর খান্দানি কাঁচের প্লেট দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমার বোন বললো, অনেকে জিনিস পত্র দান করে। মাথার উপর ফ্যান চলছে পুরাদমে, ওটাও নাকি কার দান করা। কিন্তু কোনো খাট নেই। মেঝেতে পাটি বা গদি বিছিয়ে তারা ঘুমায় একসাথে, দলবেঁধে, জড়াজড়ি করে। 

ভেবেছিলাম গরমে মরে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেরকম কিছু হলো না। 

(চলবে)

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ম য র জন য আম দ র ই আম র

এছাড়াও পড়ুন:

সার না পেলে কৃষকদের ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের পরামর্শ মির্জা ফখরুলের

কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার না পেলে কৃষকদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি অফিস) ঘেরাও করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ পরামর্শ দেন। সদর উপজেলার দানারহাট ঈদগাহ মাঠে এ সভার আয়োজন করে বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩১ দফায় বলেছি, আমরা যদি সরকারে যেতে পারি; তবে ১৫ মাসের মধ্যে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যের ব্যবস্থা করব।’

সারসংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন সারের সংকট চলছে। ডিসিক কইবা হবে (বলতে হবে) আপনার তো বাড়ি হচ্ছে কিশোরগঞ্জ। ওত্তি তো (ওদিক) পানি আর পানি। হামার এত্তি (এদিক) তো পানি বেশি নাই। আমাদের কৃষিকাজ করে খেতে হয়। পানি শ্যালো বা ডিপ টিউবওয়েল আর বরেন্দ্র থেকে নিতে হয়। সারটা আমরা ঠিকমতো চাই।’

একই সময়ে উপস্থিত জনগণকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মুখ বন্ধ করে থাকলে কেউ কথা শুনবে না। যদি কথা না শুনে, সারের দাবিতে দরকার হলে ডিসি অফিস ঘেরাও করে দেবেন।’

২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি নামে একটি প্রস্তাব জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই প্রস্তাবনায় তিনি বলেছিলেন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট দরকার। সেই পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাঁরাই দেশ চালাবেন। এতে ভারসাম্য থাকবে। ভারসাম্য থাকবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে। বিচার বিভাগও একদম স্বাধীন থাকবে।

কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর নিয়ে চিৎকার করছে মন্তব্য করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা বোঝেন পিআরটা কী? এখন চলছে এক ব্যক্তির এক ভোট। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আর পিআর হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে না, দলকে ভোট দেবে। সর্বনাশ! কাকে ভোট দিচ্ছি, আমি জানব না? দলকে ভোট দিলে তো ওটা কী হবে, তাও ঠিকমতো বলতে পারব না। তবে সেই ব্যবস্থায় আমরা যাব কেন? সবাই যদি একমত হয়, তবে চিন্তা করে দেখবে। সে কারণে আমরা বলছি, আগে নির্বাচনটা হোক। পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হবে। জনগণ ভোট দিয়ে ঠিক করবে পিআর হবে কি হবে না।’

দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে নির্বাচনটা করি। পরে আমরা সবাই মিলে তর্ক-বিতর্ক করব, তবে মারামারি আর করতে চাই না রে, ভাই।’

এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষকেরা নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। আমরা বলছি বিএনপি সরকার গঠন করলে শুধু শিক্ষক নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হবে।’

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন, বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এসএস আবুল কাসেমসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ