আরবের অন্ধযুগ ও মহানবী স. এর আগমন
Published: 16th, October 2025 GMT
ইসলাম-পূর্ব সময়ে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল যেন আরবরা। সমগ্র আরব জুড়ে চলছিল ভয়ানক অরাজকতা। গোত্রে গোত্রে শত্রুতা। সারাক্ষণ একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টায় রত। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারামারি থেকে শুরু করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। বছরের পর বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলা।
কত তুচ্ছ ঘটনা থেকে যুদ্ধের সূত্রপাত হতো, তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক। একদিন এক বিদেশী পথিক ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে বসুস নামে এক বুড়ির মেহমান হলো। পথিকের উটটা গা চুলকানোর জন্য কুলায়ব নামে এক লোকের বাগানে ঢুকে একটা গাছের সঙ্গে গা ঘষতে লাগল। তাতে গাছের ওপরের একটা পাখির বাসা থেকে একটা ডিম মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল।
পাখির চিৎকারে কি হয়েছে, দেখতে এসে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তীর মেরে উটাকে জখম করল কুলায়ব, আর চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘কার এত্তবড় সাহস যে আমার আশ্রিত পাখির ডিম ভেঙে পাখিকে কষ্ট দেয়?’ বসুসও কম যায় না। সে-ও সমান তেজে জবাব দিল, ‘আমার মেহমানের উটকে জখম করে তাঁকে অপমানিত করে আমাকেও অপমান করা হয়েছে। আমি অবলা নারী। দুনিয়ায় আপন বলতে আমার কেউ নেই। আমার এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার মত কোন পুরুষ মানুষ কি নেই?’
বুড়ির কথা শুনে রেগে গেল তার এক আত্মীয়। সে এসে কুলায়বকে মেরেই ফেলল। ব্যস, শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ, কারণ কুলায়ব আর বুড়ির আত্মীয় দুজন দুই গোত্রের লোক। একজন বনু বকর গোত্রের, অন্যজন বনু তাগলব গোত্রের। আশি বছর ধরে চলল এই বিবাদ।
সামান্য কারণে এমন বিবাদ আরও বহু সংঘটিত হয়েছে তৎকালীন আরবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে তখন কিছুই ছিল না সেখানে। আরবের বেশিরভাগ গোত্রের মানুষই লুটতরাজ আর চুরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। সুযোগ পেলেই এক গোত্র আরেক গোত্রের ধন-সম্পদ, গৃহপালিত পশু, এমনকি মেয়েদেরকেও লুট করে নিয়ে যেত, তারপর সেসব মেয়েদের হয় নিজেরা বিয়ে করত কিংবা দাসী-বাঁদী হিসেবে বিক্রি করে দিত।
ডাকাতরা বনে-জঙ্গলে, পর্বতের গুহায় লুকিয়ে থাকত। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিরীহ পথিক ও ব্যবসায়ীদের কাফেলা আক্রমণ করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিত, তাদের খুন করে লাশ ফেলে রাখত শিয়াল-শকুনে খাওয়ার জন্য। তাদের মধ্যে যে যত বড় ডাকাত, সে তত বড় বীর-বাহাদুর বলে বিবেচিত হত।
অনাচার করতে করতে তাদের অন্তর হয়ে গিয়েছিল ভয়ানক নিষ্ঠুর, মায়া–মমতাহীন। জ্যান্ত উট কিংবা দুম্বার গা থেকে মাংস কেটে নিয়ে কাবাব বানিয়ে খেত।অনাচার করতে করতে তাদের অন্তর হয়ে গিয়েছিল ভয়ানক নিষ্ঠুর, মায়া–মমতাহীন। জ্যান্ত উট কিংবা দুম্বার গা থেকে মাংস কেটে নিয়ে কাবাব বানিয়ে খেত। বেচারা অসহায় প্রাণীগুলো যন্ত্রণায় ছটফট করে রক্তপাতে মারা যেত, তাতে ভ্রূক্ষেপও করত না ওইসব আরবরা। জ্যান্ত পশুকে গাছে বেঁধে তার ওপর তীর ছোঁড়া চর্চা করত। যুদ্ধে বন্দি অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের পেট কেটে বাচ্চা বের করে মেরে ফেলত।
শত্রুকে শাস্তি দিতে নানারকম নিষ্ঠুর উপায় বের করত। দুটো চারাগাছ বাঁকিয়ে এনে, দুই গাছে শত্রুর দুই পা বেঁধে আচমকা গাছ দুটোকে ছেড়ে দিত। গাছ দুটো সজোরে সোজা হওয়ার সময় এমন টান লাগত, শত্রুর দেহটা দুই পায়ের মাঝখান থেকে ফেঁড়ে গিয়ে দুই ভাগ হয়ে যেত। মানবদেহের সেসব খণ্ডাংশ গাছেই ঝুলে থাকত, পচে গিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
মেয়েদের শাস্তি দিতে হলে তার পা ঘোড়ার লেজের সঙ্গে বেঁধে পাথুরে জায়গার ওপর ছুটিয়ে দিত। অসহ্য যন্ত্রণা পেয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা যেত সেসব মেয়ে। ধনী লোককে কবর দেয়ার পর তার কবরের পাশে উট বেঁধে রাখত। খাবার-পানি না পেয়ে তিলে তিলে ওখানেই মারা যেত উটটা। লোকের বিশ্বাস ছিল পরকালে এই উট মৃত লোকটার বাহন হবে।
ব্যভিচার আর মেয়েদের প্রতি অন্যায় করার প্রবণতা ঢুকে গিয়েছিল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যিনা করাকে হারাম ভাবা তো দূরের কথা, সেটাকে গোপন না করে বরং গর্ব করে প্রচার করত। কাউকে ধর্ষণের পর প্রকাশ্য সভায় নিজের বদমাশিকে ফলাও করে বর্ণনা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করত।
কিন্দা রাজ্যের যুবরাজ ইমরুল কায়েস কিন্দিকে তৎকালীন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মনে করা হত। সে তার ফুফাত বোন ও অন্যান্য যে সব মহিলার সঙ্গে কুকর্ম করেছে, সেগুলো তার নিজের রচিত ‘কাসিদায়ে লামিয়া’ কবিতায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে। গভীর রাতে দারোয়ানের চোখে ধুলো দিয়ে কিভাবে ঘরে ঢুকে কাকে ধর্ষণ করেছে, কোথায় বিবস্ত্র হয়ে গোসলরত মেয়েদের কাপড়চোপড় নিয়ে গাছে উঠে বসে থেকেছে, উলঙ্গ যুবতী মেয়েরা তার কাছ থেকে কিভাবে কাপড়গুলো উদ্ধার করেছে, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকা মা কিংবা গর্ভবতী মহিলারা তার ইশারায় কিভাবে নিজেদেরকে তার কাছে বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, এ সব কাহিনী বিস্তারিত লেখা রয়েছে তার কবিতায়।
আরবের তৎকালীন খ্যাতনামা কবিদের কবিতা প্রতিযোগিতায় এই কবিতাটি প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। কবির সম্মানে তাই কবিতাটি পবিত্র কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। লোকে এই কবিতা আবৃত্তি করে আনন্দ পেত।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর জীবনী লেখার জটিলতা ও সম্ভাবনা১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫রকিব হাসান
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবক নিহত
মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের গুলিতে আরিফ মির (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নিহতের চাচাতো ভাই ইমরান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৬টার দিকে ইউনিয়নের চরডুমুরিয়া গ্রামে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
বগুড়ায় অটোরিকশা চালক হত্যায় জড়িত ২ জন গ্রেপ্তার
নিহতের স্ত্রী পারুল বেগম ও এলাকাবাসী জানান, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ওহিদ মোল্লার অনুসারী শাহ কামাল গ্রুপের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সহ-সভাপতি আওলাদ হোসেনের অনুসারী নিহত আরিফ গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজ সকালে আরিফ ও ইমরান বাড়ির সামনে গেলে শাহ কামালের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরিফ ও ইমরানকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। যে ঘটনাটি ঘটেছে তা তাদের নিজেদের বিষয়। এর দায়ভার বিএনপি নেবে না।”
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন জানান, দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে আরিফ হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা/রতন/মাসুদ