ব্লু পেপার চালু রাখার দাবিতে সাতক্ষীরায় আইনজীবীদের কলম বিরতি
Published: 16th, January 2025 GMT
সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের আওতাধীন চারটি আদালতে আইনজীবীদের অনির্দিষ্টকালের কলম বিরতি চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে আদালতগুলোতে সরকারি কার্টিজ পেপারের পরিবর্তে ব্লু পেপার চালু রাখার দাবিতে আইনজীবীদের এ কলম বিরতি।
জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনড় থাকায় ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবা গ্রহীতারা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের অধীনে চারটি কোর্ট রয়েছে। সেগুলো হলো- এডিএম কোর্ট, নির্বাহী কোর্ট, সার্টিফিকেট কোর্ট ও রাজস্ব কোর্ট। এসব কোর্টে আরজি দাখিল, জবাব দাখিল, সময় প্রার্থণাসহ অন্যান্য সেবা গ্রহণ করেন আবেদনকারীরা।
কার্টিজ পেপার ব্যবহারের সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে আইনজীবীরা সমিতি থেকে সরবরাহকৃত ব্লু পেপারে আরজি দাখিলসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন থেকে সরকারি কার্টিজ পেপার ব্যবহারের আদেশ দেওয়া হয়। এতে বেঁকে বসেন আইনজীবীরা।
নির্বাহী আদালতগুলোতে ব্লু পেপারের বৈধতা দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
পাটকেলঘাটা থেকে আগত শামসুর রহমান জানান, তার এডিএম কোর্টে একটি মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার তার নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের কলম বরতির কারণে তার ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ্ আলম জানান, এডিএম কোর্ট, নির্বাহী কোর্ট, সার্টিফিকেট কোর্ট ও রাজস্ব কোর্টে আইনজীবীরা সমিতি থেকে নেওয়া ব্লু পেপার সরবরাহ করে। এটি শুধু সাতক্ষীরা নয়, ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় এটা করা হয়। ব্লু পেপার দিয়ে আদালতে আরজি, জবাব, সময়ের প্রার্থনা করা হয়। এগুলো উচ্চতর আদালতেও গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি অনড়। তাই আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত, ব্লু পেপার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা আদালত বর্জন করে কলম বিরতি পালন করবে।
তিনি বলেন, “ব্লু পেপারের সাথে কোর্ট ফি লাগানো হচ্ছে। তাই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে আদালতে সরকারের আয়ের ১০ ভাগ আইনজীবীদের দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি।”
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “সরকারিভাবে যে কার্টিজ পেপার দেওয়া হয়, তা আইনজীবীরা ব্যবহার করতে চান না। তারা চান ব্লু পেপার সরবরাহ করতে। কার্টিজ পেপার ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া বিজি প্রেস থেকে এটা আসে। কার্টিজ টেকসই ও মানসম্মত। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম এই খাতকে নষ্ট করার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আইনজীবীরা তাকে বলেছে, এটা তাদের আয়ের জায়গা। কিন্তু বার তো আয়ের জায়গা হতে পারে না। তাছাড়া কার্টিজ পেপার কিনতে তো আইনজীবীরা পকেট থেকে টাকা দেন না, মক্কেলদের কাছ থেকে নিয়ে দেন। সুতরাং রাষ্ট্রের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে এটা করা উচিৎ নয়।”
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইনজ ব দ র আইনজ ব র ব যবহ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় যখন শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তখন গ্যাসকূপ খননে অগ্রগতি কম হওয়ার বিষয়টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং বিনিয়োগের গতি থমকে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিতভাবেই জ্বালানিসংকটের বড় ভূমিকা আছে।
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন না বাড়িয়ে বিগত সরকার উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যে নীতি নিয়েছিল, তারই প্রতিফল এটা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা থাকলেও বাস্তব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে গ্যাস–সংকটের বৃত্ত থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, শিল্প, ব্যবসা ও বাসাবাড়ির জ্বালানিতে বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৭০-২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ১৭৭ কোটি ঘনফুট। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সব মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট।
দেশের অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে এবং শিল্প ও বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ২০১৭ সালে দেশীয় উৎস থেকে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছিল। এর পর থেকে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা শুরু হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের অনিশ্চয়তা ও অবকাঠামোগত সক্ষমতার ঘাটতিতে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।
এ বাস্তবতায় জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে। স্থল ও সমুদ্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কূপ খনন সমানতালে করা প্রয়োজন। সংকটে পড়ে বিগত সরকার ২০২২ সালে চার বছরে ৫০টি কূপ উন্নয়ন, সংস্কার ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নিলেও সেটি ধীরগতিতে এগোয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল করা হয়। দরপত্র ডেকে চুক্তি করায় সময় বেশি লেগেছে, কিন্তু খরচ কমেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কূপ খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০টি কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে দৈনিক যেখানে ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস নতুন উত্তোলন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২১ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ১০০টি কূপ খনন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হলেও দেশে রিগ বা খননযন্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। বাপেক্স, বিজিএফসিএলসহ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও বিগত কোনো সরকারই তাতে কর্ণপাত করেনি। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া দ্বীপজেলা ভোলায় প্রায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত থাকলেও সক্ষমতা অনুসারে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে না। সেখানকার উৎপাদিত গ্যাস বাইরে আনার জন্য এখনো পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি, আবার সেখানেও শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়াও থমকে আছে।
জ্বালানি নীতিতে অবশ্যই জাতীয় সক্ষমতা ও দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধানের যে টোটকা, সেখান থেকে জ্বালানি খাতকে বের করে আনতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন, উন্নয়ন ও সরবরাহের অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।