কুষ্টিয়ার মিরপুরে শত্রুতা করে চারজন কৃষকের সাড়ে ১১ বিঘা তামাকের জমিতে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে জমির সমস্ত তামাক পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চারজন কৃষক সর্বশান্ত হয়ে গেছেন।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শোলাবিলের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মিরপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কুড়িপোল গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে আব্দুর সাত্তারের চার বিঘা, মনোহার আলীর ছেলে আব্দুল হালিমের চার বিঘা, নুর মোহাম্মদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের দুই বিঘা ও আজিজুল হকের দেড় বিঘা তামাকের ফসল ঘাস পোড়ানোর বিষ দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, “বিএটিবি কোম্পানি থেকে ঋণ ও বিঘাপ্রতি জমি ৩০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে তামাক চাষ করেছি। এ তামাক আর কিছুদিন পর ঘরে উঠবে। চার বিঘা তামাক চাষ করতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন দেনার দায়ে আমার মরা ছাড়া কোনো পথ নেই। আর তা না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেত হবে। এখন আমি কী করব? ধার দেনা কী করে পরিশোধ করব? আমার আর কিছুই নেই।”

কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, “জেটিআই কোম্পানির কাছে ঋণ ও বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে চার বিঘা জমিতে তামাক লাগিয়েছি। সকালে জমিতে এসে দেখি রাতে কে বা কারা ঘাস মারা বিষ দিয়ে আমাদের তামাক পুড়িয়ে দিয়েছে। কার কাছে অভিযোগ দেব? তামাক কোম্পানির লোকজন আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না। কৃষি অফিসারকে জানানো হয়েছে। তবে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।”

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ঘাসমারা বিষ দিয়ে এ ক্ষতি সাধন করেছে। আমার দুই বিঘা জমির তামাক শেষ। একবিঘা জমিতে আবাদ করতে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ধার দেনা করে তামাক পোগানোর জন্য খড়ি কেনা হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা খুবই মুশকিল। মিরপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।”

আজিজুল হক বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। জমি লিজ নিয়ে তামাকের আবাদ করেছি। লোকজন সংবাদ দিলো যে তোমার জমিতে ঘাস মারা বিষ দিয়ে তামাক পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চারজন কৃষক পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এ তামাকের আবাদ করেছি। শত্রুতা করে জমিতে বিষ প্রয়োগ করে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে। এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শোলাবিলের মাঠে চা কৃষকের সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করে তামাক নষ্ট করে দিয়েছে। ঘটনাটি আমি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে বঞ্চনার শিকার বাংলাদেশের সাংবাদিকরা

শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বঞ্চনার শিকার, ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।

ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী যারা বেতন দেন না অথচ মিথ্যাচার করেন- সেসব মালিকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।

আরো পড়ুন:

দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সরকার বন্ধ করেনি: তথ্য উপদেষ্টা

খুবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে রমিন-মিরাজ

কাদের গনি বলেন, “সভ্যতার বিকাশে শ্রমিকের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারাই পান না শ্রমের মর্যাদা, অবহেলায় কাটে তাদের দিন।”

তিনি বলেন,“শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেন না। অথচ ওয়েজবোর্ডে বেতন দেন-এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এসব ঠকবাজ মালিকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নকে সক্রিয় হতে হবে।”

কাদের গনি বলেন, “শ্রম, শ্রমিক এই দুয়ের উপরেই আজকের আধুনিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে তাজমহলকে নিয়ে আজ বিশ্বের এত মাতামাতি সেই তাজমহল তৈরিতে লেগেছে শ্রমিকদের ঘাম। অথচ আজকের সমাজ যেন কুলি-মজুর এবং সাহেব এই দুই শ্রেণিতে ভাগ হয়ে গেছে।”

টাকা-পয়সা এই পার্থক্য তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, “বাংলাদেশে এ বছরের প্রথম দুই মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবারের পাশে কোনো মালিক দাঁড়ায়নি।”

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা রোগে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে অর্থনীতি।”

বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে এক হাজার ৪৩২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছেন ৫০২ জন।”

বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরো অংশ নেন ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাকের হোসাইন, খায়রুল বাশার, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, মোরসালিন নোমানী, রফিকুল ইসলাম আজাদ, রাশেদুল হক, রফিক মোহাম্মদ, বাবুল তালুকদার, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, মোদাব্বের হোসেন, সাঈদ খান, আবু হানিফ, দিদারুল আলম, আবুল কালাম মানিক, আবুল কালাম ও রফিক লিটন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ