বিজিত প্রার্থীদের ‘হারু পার্টিতে’ শিবিরের গানে নাচানাচি করা নিয়ে আলোচনা
Published: 19th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের একাংশের উদ্যোগে ‘হারু পার্টির’ (বনভোজন) অনুষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংগীতের (থিম সং) সঙ্গে নাচানাচি করা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা সমালোচনা শুরু করেন। শিবিরের নেতাদের সমালোচনার জবাবে পাল্টা সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ছাত্রদল, বাম জোট-সমর্থিত প্যানেলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে শিবিরের গানের সঙ্গে তাঁদের নাচানাচির একটি ভিডিও রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনার তীরে, আমরা শিবির গড়েছি’ ছাত্রশিবিরের এই গানের সঙ্গে ‘হারু পার্টিতে’ অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নাচছেন। গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতেও দেখা যায় অনেককে।
রাকসুর নির্বাহী সদস্য পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী আয়োজকদের একজন। ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, মূল আয়োজনের আগে সন্ধ্যায় মজার ছলে আওয়ামী লীগের গানসহ অন্যান্য সংগঠনের থিম সং বাজানো হয়। সেগুলোর তালে তালে অনেকে নেচেছেন। সেখানে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মতো শিবিরের থিম সংও বেজে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সেটা পরিবর্তন করা হয়। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু কে বক্সে গানগুলো বাজিয়েছিলেন, তা শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করলে তিনি ধরেননি। পরে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘একটা দলের থিম সং নিয়ে মকারি করা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কিংবা সৌজন্যতার ব্যত্যয় কি না, সেই প্রশ্ন না হয় না–ই তুললাম! কিন্তু, “শপথের সঙিন হাতে নিয়ে সকলে, নবীজির রাস্তা ধরেছি” রাসুল (সা.
এ ঘটনার পর ছাত্রশিবিরের নেতাদের অনেকে ফেসবুকে সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন। শাখা ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মো. নওসাজ্জামান এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এত এত বুঝদার মানুষ, কোনটা করলে ফানের পর্যায়ে পড়বে, কোনটা বিতর্ক সৃষ্টি হবে, কোনটা সম্মান-শ্রদ্ধার, কোনটা ব্যাশিং করার এটুকু জ্ঞান অন্তত থাকতে হবে। কারও কাছে নিজের আদর্শের কোনো দাম না থাকলেও সেখানে অন্য আদর্শকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে হবে, সেটাও শিখতে হবে।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোহাইমেন তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘শিবির সংগীতের তালে নৃত্য প্রদর্শন এটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের মূল্যবোধ, চরিত্র ও আদর্শ চর্চার পরিপন্থী এক দৃষ্টান্ত। আজ রাকসুতে বিজিত কিছু প্রার্থীর এমন অশোভন প্রদর্শনী সত্যিই বেদনাদায়ক।’
তবে শিবিরের নেতাদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাকসুর বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুজ্জামান (স্নিগ্ধ)। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে জেতার পর বামপন্থীদের মনোনয়ন ফরম তোলার সময় গাওয়া গানকে তাচ্ছিল্য করা যায়, রাকসুতেও বামপন্থীদের গান গেয়ে মনোনয়ন ফরম কেনাকে তাচ্ছিল্য করা যায়। এমনকি হবিবুর হল সংসদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় সংগীত গাওয়ার সাথে সাথে মনোনয়ন ফরম তুললে সেসবেরও তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করা যায়। ...তখন সম্প্রতির বয়ান নিয়ে কেউ আসেননি, বাধা দেননি। চ্যালাপ্যালা নিয়ে উপভোগ করেছেন। রাবিতে হারু পার্টিরা আপনারা জিতেছেন বলে আনন্দের ঠেলায় একটু আপনাদের গানে নাচল বলে আপনাদের এত বুক মোচড় দিচ্ছে কেন? এবারও উপভোগ করেন। দেখেন বাচ্চাগুলো কী দারুণ নাচে। কাদা যে নিজেরাই আগে ছুড়েছেন, সে খেয়াল কেন করলেন না!’
আয়োজকেরা জানান, রাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা, কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করাসহ চারটি উদ্দেশে গতকাল রাতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের শুরুতে ছিল পরিচয় পর্ব। পরে অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য দেন অনেকে। সেখানে খেলাধুলা, সেলফি তোলা, গান, কবিতা ও গানের সঙ্গে নেচেছেন অনেকে। এতে বিজয়ী প্রার্থীদেরও কেউ কেউ অংশ নিয়ে গান গেয়েছেন, নেচেছেন।
৩৫ বছর পর গত বৃহস্পতিবার রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব মিলিয়ে ৯০২ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদেই জয়ী হন ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। এ ছাড়া হল সংসদের ২৫৫টি পদের মধ্যে ২৩৪টিতে তাঁরাই জিতেছেন।
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের ‘হারু পার্টি’২২ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বতন ত র প র র থ অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বান্দরবানে অস্ত্রসহ ২ ব্যক্তি গ্রেপ্তার
বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া জোন (৩৮ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে অস্ত্রসহ ওয়েবার ত্রিপুরা (৩৩) এবং তার সহযোগী রুইহং ম্রোকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ রবিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জিরা ও মদ জব্দ
ভারতে কুপিয়ে ও তীর মেরে ৩ বাংলাদেশিকে হত্যা
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) শীর্ষ অস্ত্র চোরাচালানি ওয়েবার ত্রিপুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলিপাড়া জোনের উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী রুইহং ম্রোকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছে থাকা একটি দেশীয় পিস্তল, দুটি গাদা বন্দুক, একটি গ্রেনেড, একটি ম্যাগাজিন, ৩০ রাউন্ড গুলি, একটি মর্টারের গোলার বক্স, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি কৃষি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুই জনকে পরবর্তীতে থানচি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন মজুমদার জানান, দুইজনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলার কার্যক্রম শেষে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
ঢাকা/চাইমং/বকুল