ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অবস্থান
Published: 1st, February 2025 GMT
জাকসু নির্বাচন নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পূর্বঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী শনিবার জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা ছিল। তবে জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে যথাসময়ে ঘোষণা করা হয়নি তপশিল। তপশিল ঘোষণা নিয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী-শিবির পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে।
ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো চাচ্ছে, জাকসুর গঠনতন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। এ নিয়ে তারা শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে তপশিল ঘোষণাসহ দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাল্টা অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ২টি সংগঠন, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদসহ বেশ কিছু সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। এসময় অনতিবিলম্বে জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার দাবি জানান তারা। অন্যথায় আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন নেতা-কর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘ছাত্রদলের ব্যানারে কিছু অছাত্র আজকে রেজিস্ট্রার ভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে জাকসুর তপশিল ঘোষণা না করতে চাপ প্রয়োগ করেছে। তাই তপশিল ঘোষণা করা হয়নি। তার প্রেক্ষিতে জাকসুর পক্ষের সব শক্তিকে এক করে আমরা ক্যাম্পাসে মিছিল দিয়ে অবস্থান নিয়েছি। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার আগে তপশিল ঘোষণা না করা হলে ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না।’
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন গত এক মাস আগে জাকসু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করেছিল, সেই লক্ষ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল এবং আজকে ছিল তপশিল ঘোষণার তারিখ। কিন্তু একটা কুচক্রী মহলের দাবির প্রেক্ষিতে জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে।
প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাকসু সুষ্ঠু হবে না, সেজন্য সংস্কার চেয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক জানান, জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো দুইটি পক্ষ বিভক্ত হয়েছে—এক পক্ষ নির্বাচন সূচি অবিলম্বে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে, অন্য পক্ষ নির্বাচনের সূচি ঘোষণার আগে সংস্কার কমিশন গঠন চাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি৷’
জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি গঠন
জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রবকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের জাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংস্কার কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল গঠনতন ত র স স ক র স স ক র কম অবস থ ন ন ছ ত রদল পর ক ষ স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী