অভিযানেও থামছে না যমুনার বালু লুট
Published: 2nd, February 2025 GMT
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীর তীর থেকে আবারও অবৈধভাবে বালু তোলা শুরু হয়েছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে তীরের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনের বারবার অভিযানের পরও এই বালুদস্যুদের ঠেকাতে না পারায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিবালয় উপজেলা প্রশাসন ১৭ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে যমুনার বালু লুটে জড়িত ১২ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ছয়জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮-১০ দিন বালু তোলা বন্ধ ছিল উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায়। কিন্তু আবারও বালু লুট শুরু করে একটি চক্র।
সংবাদ পেয়ে গত শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন আরেক দফা অভিযান চালায়। তারা শিবালয়ের ত্রিলোচানপট্টি গ্রামের রাকিব হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলার সাদাতপুর এলাকার রাহুল শেখ, নারায়ণগঞ্জের রিয়াদ হোসেন, শাহ আলী ও বিপ্লব হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। সব মিলিয়ে জানুয়ারিতে ১৮ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এর পরও আলোকদিয়া এলাকায় বালু তোলা বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালু তোলার জন্য ওই গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ৭ নম্বর বৈদ্যুতিক টাওয়ার থেকে ৮ নম্বর টাওয়ার পর্যন্ত ৬টি ড্রেজার বসানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার বালু তোলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যবসা এখন দেখাশোনা করছেন বাবু শেখ, জামাল উদ্দিন, মুক্তার হোসেন নামের তিন ব্যক্তি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি।
আলোকদিয়ার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু তোলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তাদের এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে ঘরবাড়িসহ শত শত একর ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে যায়। ইতোমধ্যে যমুনা ভাঙতে ভাঙতে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থাপনার কাছাকাছি চলে এসেছে।
এলাকাবাসী জানান, বিদ্যুতের ৭ ও ৮ টাওয়ারের পাশে ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। পরে সেখান থেকে বাল্কহেডে করে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কিলো ভোল্টের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় টাওয়ারের তলদেশ থেকে মাটি সরে যেতে পারে।
তেওতা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতালেব হোসেন বলেন, মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের টোকেন দিয়ে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল বাশার। তিনি ৫ আগস্টের পর মামলার আসামি হয়ে পলাতক। কিন্তু নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে তাঁর নাম ভাঙিয়েই।
তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, দ্রুত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এগুলো আগামী বর্ষায় নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
শিবালয়ের ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।